ঋতুস্রাবকালীন জটিলতায় ছুটি পাচ্ছেন স্পেনের নারীরা? - Women Words

ঋতুস্রাবকালীন জটিলতায় ছুটি পাচ্ছেন স্পেনের নারীরা?

মাসিকের সময় শারীরিক জটিলতায় ভোগা নারীদের কর্মক্ষেত্রে ছুটির খসড়া প্রস্তাব অনুমোদন করেছে স্পেনের সরকার। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিসভার বৈঠকে প্রস্তাবটি অনুমোদন পায়।

চূড়ান্ত অনুমোদন পেতে প্রস্তাবটি এরপর সংসদে তোলা হবে। আর সেখানে যদি এটি চূড়ান্ত আইন হিসেবে পাস হয়, তাহলে ইউরোপের মধ্যে স্পেনেই প্রথম এমন আইন হবে৷

খসড়ায় এ ক্ষেত্রে মাসে তিন অথবা পাঁচ দিনের ছুটির প্রস্তাব করা হলেও মন্ত্রিসভা কোনো সময় বেঁধে দেয়নি। ফলে ঋতুস্রাবকালীন জটিলতা যত দিন চলবে ততদিন পর্যন্ত সবেতনে ছুটি নিতে পারবেন স্পেনের নারীরা। তবে এজন্য চিকিৎসকের সনদ থাকতে হবে।

এ ছাড়া ১৬ বছর বয়স হলে বাবা-মা বা অভিভাবকের সম্মতি ছাড়াই কিশোরীদের গর্ভপাতের অধিকারে সায় দিয়েছে স্পেনের মন্ত্রিসভা। পাশাপাশি প্রজনন স্বাস্থ্য সুরক্ষা সংক্রান্ত আরও বেশকিছু পরিকল্পনা অনুমোদন পেয়েছে।

স্পেনের মন্ত্রিসভা বৈঠকে অনুমোদন পাওয়া প্রস্তাবে ছুটির বিষয়টি ছাড়াও ঋতুস্রাবকালীন স্বাস্থ্যসুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন পদক্ষেপে জোর দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে স্কুলগুলোতে স্যানিটারি প্যাড সরবরাহ, প্রান্তিক এলাকার নারীদের স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ট্যাম্পন বিনা মূল্যে প্রদান এবং সুপার মার্কেটে এসব পণ্যের ওপর থেকে ভ্যাট বাতিল।

মন্ত্রীসভার বৈঠৈক শেষে স্পেনের সমতা মন্ত্রী আইরিন মন্টেরো বলেন, ‘আমরা এমন একটি আইন তৈরি করছি, যা নারীদের ভালোভাবে বেঁচে থাকার নিশ্চয়তা প্রদান করবে।”
’ব্যথা এবং একগাদা পিল খেয়ে কাজ করার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে,’ বলে্ও মন্তব্য করেন তিনি।

স্প্যানিশ গাইনোকোলজি অ্যান্ড অবস্টেট্রিক্স সোসাইটির তথ্য অনুযায়ী, মাসিকের সময় প্রায় এক-তৃতীয়াংশ নারী গুরুতর ব্যথায় ভোগেন। চিকিৎসাবিজ্ঞানের ভাষায় যাকে বলা হয় ডিসমেনোরিয়া। পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে থেকেই ব্যথায় ভোগা নারীদের বিবেচনায় নিলে সংখ্যা আরও অনেক বেশি। ডিসমেনোরিয়ার লক্ষণগুলোর মধ্যে রয়েছে তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া, জ্বর ও বমি।

মন্ত্রিসভা বৈঠক সামনে রেখে স্পেনের সমতাবিষয়ক প্রতিমন্ত্রী অ্যাঞ্জেলা রদ্রিগেজ গত শুক্রবার সাংবাদিকদের বলেন, ‘এসব লক্ষণ (তীব্র পেটে ব্যথা, মাথাব্যথা, ডায়রিয়া ও জ্বর) কারও মধ্যে দেখা গেলে সাময়িক শারীরিক জটিলতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কাজেই মাসিকের সময়কার এসব জটিলতাকেও আমাদের স্বীকার করা প্রয়োজন। এ সময়টি অত্যন্ত কষ্টকর, তাই এতে আক্রান্ত নারীদের বাড়িতে বিশ্রামের সুযোগ দেয়া উচিত।’

পাশাপাশি এক টুইটে তিনি লেখেন, ‘আমরা উন্নয়ন ঘটানোর চেষ্টা করছি, যাতে করে ব্যথা নিয়ে নারীদের কাজ করতে যাওয়া আর স্বাভাবিক হিসেবে বিবেচিত না হয়। পিরিয়ডকে ঘিরে কলঙ্ক, লজ্জা ও নীরবতার অবসান যাতে ঘটে। আমরা অধিকার প্রশ্নে অগ্রগতি ঘটাতে চাই।’

প্রসঙ্গত, বর্তমানে শুধু জাপান, তাইওয়ান, দক্ষিণ কোরিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও জাম্বিয়ায় নারীর ঋতুস্রাবকালীন ছুটির অনুমোদন আছে।

স্পেনের বামপন্থি সরকারের এ উদ্যোগ অবশ্য বিরোধিতার মুখেও পড়ছে। বামপন্থি জোটের মধ্যে থাকা কিছু দল এবং ট্রেড ইউনিয়নের মধ্যেও তৈরি হয়েছে বিভক্তি। কেউ কেউ বলছেন, এই পদক্ষেপের বিপরীত ফল হতে পারে। নারীদের নিয়োগ প্রতিবন্ধকতা তৈরি হওয়ার পাশাপাশি তাদেরকে হেয় করার প্রবণতা বাড়তে পারে।

জাপানে ১৯৪৭ সাল থেকে এই আইন আছে৷ কিন্তু সম্প্রতি এক গবেষণায় দেখা গেছে ১০ শতাংশেরও কম সংখ্যক নারী এই ছুটি নিয়ে থাকেন৷ তবে জরিপে অংশ নেয়া ৪৮ শতাংশ নারী জানিয়েছেন তারা কখনও কখনও এই ছুটি নেয়ার কথা ভেবেছেন, কিন্তু নেননি৷ এর কারণ হিসেবে কেউ বলেছেন তারা পুরুষ বসের কাছে এই ছুটির আবেদন করতে চাননি, আবার কেউ জানিয়েছেন তারা আশেপাশের খুব অল্প সংখ্যক নারীকে এই ছুটি নিতে দেখেছেন৷
নেদারল্যান্ডসের মতো দেশেও ছুটি নেয়ার কারণ হিসেবে মাসিকের কথা উল্লেখ করা থেকে নারীদের বিরত থাকতে দেখা গেছে৷ ২০১৯ সালে প্রায় ৩০ হাজার ডাচ নারীর উপর করা গবেষণায় দেখা গেছে, মাত্র ১৪ শতাংশ নারী মাসিকের সময় ছুটি নিলেও তাদের মাত্র ২০ শতাংশ ছুটির কারণ হিসেবে আসল কারণটি উল্লেখ করেছেন৷
ইন্দোনেশিয়ার কিরোয়ান পার্টনার্স নামের এক কোম্পানির প্রধান নির্বাহী ভেভে হিতিপেউ একসময় কর্মী হিসেবে মাসিকের ছুটি নিয়েছেন৷ এখন কোম্পানির প্রধান হিসেবে অন্যদের এমন ছুটি মঞ্জুর করে থাকেন৷ তিনি বলেন, ‘‘মাসিকের ছুটির সঙ্গে একধরনের লজ্জা কিংবা বৈষম্য জড়িয়ে আছে৷ কারণ অনেকে মনে করেন নারীরা অলস৷ তারা কাজ করতে চান না৷’’

ভারতের ফুড ডেলিভারি কোম্পানি জমেটোতে ২০২০ সালের আগস্ট থেকে মেয়ে কর্মীরা বার্ষিক ছুটি ছাড়াও বছরে ১০দিন মাসিকের ছুটি নিতে পারেন৷
কোম্পানির মুখপাত্র বৈদিকা পরাশার জানান, এমন ছুটি নেয়ার জন্য বেশি কিছু করতে হয় না৷ শুধু টিম চ্যাটের স্ট্যাটাসে ক্যালেন্ডারের ভেতর তিনটি লাল ফোঁটা থাকার ইমোটিকন দিলেই বাকিরা তার অর্থ বুঝে যান৷ ফলে মেয়েদের অস্বস্তিতে পড়তে হয় না৷
ছুটি দেয়ার এই নীতির কারণ কর্মক্ষমতা বেড়ে বলেছে জানান তিনি।