একুশে পদকপ্রাপ্ত কথাসাহিত্যিক ও ঔপন্যাসিক সেলিনা হোসেন বাংলা একাডেমির সভাপতি পদে নিয়োগ পেয়েছেন।
তার এই নিয়োগ আগামী তিন বছরের জন্য। বৃহস্পতিবার জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে এক প্রজ্ঞাপন জারি করে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, ‘বাংলা একাডেমি আইন, ২০১৩’ এর ধারা-৬(১) এবং ৬(৩) অনুযায়ী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ও সংগঠনের সঙ্গে কর্ম-সম্পর্ক পরিত্যাগের শর্তে সেলিনা হোসেন এই নিয়োগ পেয়েছেন।
যোগদানের তারিখ থেকে এই নিয়োগ কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়েছে।
এর আগে গত ৩০ নভেম্বর বাংলা একাডেমির সভাপতি ভাষাসংগ্রামী, শিক্ষাবিদ, লেখক ও জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম মারা যান। তার মৃত্যুর পর সভাপতির পদটি শূন্য হয়।
সেলিনা হোসেন একাধারে কথাসাহিত্যিক, ঔপন্যাসিক, গবেষক এবং প্রাবন্ধিক। লেখালেখির পাশাপাশি তিনি একাধিক মেয়াদে বাংলাদেশ শিশু একাডেমির চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পালন করেন।
উপন্যাসে অবদানের জন্য ১৯৮০ সালে ’বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার’ পান সেলিনা হোসেন। ২০০৯ সালে ভাষা ও সাহিত্যে ‘একুশে পদক’ এবং ২০১৮ সালে তিনি সাহিত্যে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পান।
১৯৪৭ সালের ১৪ জুন পৈতৃক নিবাস লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহণ করেন বিশিষ্ট এই কথাসাহিত্যিক। শিক্ষাজীবনে বগুড়ার লতিফপুর প্রাইমারি স্কুলে পড়ালেখার পর রাজশাহীর নাথ গালর্স স্কুল থেকে ১৯৬২ সালে মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন।
পরবর্তীতে ১৯৬৪ সালে রাজশাহী মহিলা কলেজে ভর্তি হন। কলেজ জীবন শেষ করে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য নিয়ে ভর্তি হন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে ১৯৬৭ সালে বিএ অনার্স এবং ১৯৬৮ সালে এম এ পাস করেন।
ষাটের দশকের মধ্যভাগে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় লেখালেখির সূচনা। তার লেখা প্রথম গল্পগ্রন্থ ‘উৎস থেকে নিরন্তর’ প্রকাশিত হয় ১৯৬৯ সালে।
সেলিনা হোসেন রচিত উপন্যাসের সংখ্যা ৩৫টি, গল্প গ্রন্থ ১৩টি, ২২টি শিশু-কিশোর গ্রন্থ এবং প্রবন্ধের গ্রন্থ ১০টি। এছাড়াও ১৩টি সম্পাদনা গ্রন্থ প্রকাশ করেছেন তিনি।
১৯৭০ সালে বাংলা একাডেমির গবেষণা সহকারী হিসেবে তিনি কর্মজীবন শুরু করেন। এর আগে বিভিন্ন পত্রিকায় নিয়মিত উপসম্পাদকীয় লিখতেন।
বাংলা একাডেমির ‘অভিধান প্রকল্প’, ‘বিজ্ঞান বিশ্বকোষ প্রকল্প’, ‘বিখ্যাত লেখকদের রচনাবলী’, ‘লেখক অভিধান’, ‘চরিতাভিধান’ এবং ‘একশত এক সিরিজ’ প্রকাশনার দায়িত্ব পালন করেন সেলিনা হোসেন।
এছাড়া ২০ বছরের বেশি সময় ধরে ‘ধান শালিকের দেশ’ পত্রিকা সম্পাদনা করেন। ১৯৯৭ সালে বাংলা একাডেমির প্রথম নারী পরিচালক হন। ২০০৪ সালের ১৪ জুন চাকরি থেকে অবসর নেন।
তিনি ‘ফারিয়া লারা ফাউন্ডেশন’ এর প্রতিষ্ঠাতা। ২০১৮ সালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় তাকে সন্মানসূচক ডি-লিট ডিগ্রিতে ভূষিত করে।