কোভিড পরিস্থিতি ও একজন অভিযোগহীন মানুষ - Women Words

কোভিড পরিস্থিতি ও একজন অভিযোগহীন মানুষ

রাজীব দে সরকার

ভাবলাম নিজের ডেস্কে বসে একটা ছবি তুলে রাখি।

গভীর এক দুঃসময়ের মুখোমুখি দাঁড়াতে যাচ্ছি। আমি, আমার শিক্ষকেরা, আমার সহকর্মীরা, আমার অনুজেরা।

একটি উদ্ভ্রান্ত উদাসীন সম্প্রদায়কে আমরা সচেতন করতে চেয়েছিলাম। আমরা পারিনি। এর ফলাফল প্রতিদিন টিভি স্ক্রলে দেখতে পাচ্ছি।

আজ পরিচিত বেশ কয়েকজন রোগীকে অনেক গলদঘর্ম হয়ে স্যারদের সহযোগিতায় হাসপাতালে ভর্তি করেছি। এই মানুষগুলোর অক্সিজেন এর বড্ড প্রয়োজন ছিলো। এই মানুষগুলোর প্রাইভেট সেবাসদনে গিয়ে অক্সিজেন কেনার সামর্থ্য তেমন ছিলো না। কারন অক্সিজেন প্রয়োজন লিটারে লিটারে। প্রতি মিনিটে ৫০ থেকে ৭০ লিটার! কোথায় পাবে এতো!!

সবাইকে বিছানায় তুলে অক্সিজেন এর ব্যবস্থা করে নিজের রুমে এসে ভাবলাম, যদি আজ আমার অক্সিজেন লাগে, কীভাবে জোগাড় হবে? যদি আমার মায়ের লাগে, কোথায় নিয়ে যাবো? কারন আমার হাসপাতালে আর একটা করোনা বেডও তো ফাঁকা নাই!

খুব ব্যস্ত সময়ে ঢুকে যাবো খুব শীঘ্রই। ডেথ সার্টিফিকেট গুলো খুব দ্রুত লিখতে হবে, কারন ঐ বেডেই পরের রোগীটা ভর্তির জন্য কাঁতরাচ্ছে, কাঁতরাবে।

ভাবলাম, নিজের ডেস্কে তাই একটা ছবি তুলে রাখি।

প্রতিনিয়ত এই রাষ্ট্রকে, এই দেশকে, এই সিস্টেমকে এবং এই অবাধ্য (বা অবোধ্য) সম্প্রদায়কে যে সেবা, একজন জুনিয়র চিকিৎসক দিয়ে চলেন, সে ইতিহাস তো কোথাও লেখা থাকে না। শুদ্ধাচার পদক থাকে না, প্রেসিডেন্ট এর মেডেল থাকে না, প্রণোদনা থাকে না। শুধু কড়া কড়া চিঠি থাকে। শো-কজ এর চিঠি! দায়িত্ব পালন না করলে কি করা হবে, সেই চিঠি। নির্দেশ মানতে ব্যর্থ হলে কি করা হবে, সেই চিঠি!

কেউ জানতে চায় না, আজ সারাদিন আমার গায়ে জ্বর ছিলো কী না। কেউ বুঝতে চাইবেও না, বৃহস্পতিবার রুটিন ওটি করে, শুক্রবারে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় দায়িত্ব পালন করে, শনিবার থেকে টুই টুম্বুর করোনা ওয়ার্ডে ডিউটি টা করার মানসিক/শারীরিক দৃঢ়তায় ‘আমি’ ছিলাম কী না।

কোন অভিযোগ নাই আমাদের।

হয়তো অভিযোগ করার জায়গাও নাই আমাদের।

তাই ভাবলাম নিজের ডেস্কে বসে “অভিযোগহীন” মানুষ গুলো দেখতে কেমন হয়, একটা ছবি তুলে রাখি।

দম আটকানো N95 মাস্কের ভেতর কোথাও হয়তো আমাদের ‘কেউ না শোনা’ অভিমান গুলো ঘামতে ঘামতে ঘুমিয়ে পড়ে!

ভালো থাকো প্রিয় মাতৃভূমি আমার।