মা সুদানে, বাবা কোরিয়ায় আর সন্তানেরা উগান্ডায় আটকা - Women Words

মা সুদানে, বাবা কোরিয়ায় আর সন্তানেরা উগান্ডায় আটকা

উইমেন ওয়ার্ডস ডেস্ক :: জাতিসংঘ (ইউএন) মিশনের পলিটিক্যাল অফিসার নূর আয়েশা, তাঁর পাইলট স্বামী রাশিদুল হাসান এবং তাঁদের দুই ছেলে আরিয়ান নূর রাশিদ (১০) ও আরিজ নূর রাশিদ (৭) বিশ্বব্যাপী করোনা মহামারির কারণে লকডাউনে আটকা পড়ে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের তিনটি দেশে অবস্থান করছেন। তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে সবাই সবার সঙ্গে ভার্চ্যুয়াল যোগাযোগ রাখছেন, কিন্তু স্বশরীরে সবাই একসঙ্গে হতে পারছেন না। কবে আবার সবাই এসঙ্গে হতে পারবেন তা–ও বলতে পারছেন না। নূর আয়েশা দক্ষিণ সুদান এবং রাশিদুল হাসান দক্ষিণ কোরিয়াতে আটকে আছেন। আর তাঁদের দুই ছেলে নানা মোহাম্মদ আনসার আলী ও নানি বিলকিস বেগমের কাছে উগান্ডায় আছে। পরিবারের সদস্যদের যোগাযোগ হচ্ছে ফোন ও ভিডিও কলে।

নূর আয়েশার সঙ্গে কথা হয় ম্যাসেঞ্জারে। বললেন, ‘ছেলেদের বাবা পাইলট আর আমার কাজের জন্য ছেলেরা আগেও আমাদের ছাড়া একা থেকেছে। তবে একসঙ্গে কয়েকমাস ধরে মা–বাবাকে ছেড়ে থাকার অভিজ্ঞতা এবারই প্রথম। এত দীর্ঘ সময় মাকে ছেড়ে থাকেনি ওরা। আমি মার্চের ২০ তারিখে উগান্ডায় ছেলেদের কাছে গিয়েছিলাম, ২২ তারিখে ফিরে আসি। তারপর থেকেই আটকা। আর ছেলেদের বাবা ফেব্রুয়ারির শেষ সপ্তাহে উগান্ডা ছেড়েছেন, তার পর থেকে আটকে আছেন। আমার ইউএনের বিশেষ ফ্লাইটে করে উগান্ডায় যাওয়ার প্রস্তুতি চলছে, তবে উগান্ডা সরকার কবে নাগাদ সেই অনুমতি দেবে, তা এখনো অনিশ্চিত।’ নূর আয়েশা বলেন, ‘প্রথম দিকে ছেলেরা দিনে চার–পাঁচবার করেও ফোন দিত। কবে বাড়ি ফিরব জানতে চাইত। তবে এখন ফোনের সংখ্যা কমে গেছে। এখন বলে, “তুমি যেখানে আছো সেখানেই ভালো থাকো, উগান্ডায় ফিরলে আবার সেই তো ১৪ দিনের হোম কোয়ারিন্টিনে থাকতে হবে।” করোনার ভয়তো আছেই। আসলে আস্তে আস্তে পরিস্থিতিই সব স্বাভাবিক করে দেয়।’

নূর আয়েশা জানান, দক্ষিণ সুদানের করোনা পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ইউএন মিশন চাচ্ছে সেখানে থাকা তার কর্মীদের বাড়ি পাঠিয়ে দিতে, তারপর বাড়ি থেকেই অফিস করতে হবে। তবে যোগাযোগবিচ্ছিন্নতা, বর্ডার বন্ধসহ নানান জটিলতায় কর্মীরা বাড়ি ফিরতে পারছেন না। নূর আয়েশা জানান, তিনি দক্ষিণ সুদানে মিশনের কমপাউন্ডে থাকছেন। সেখানেই অফিস, থাকার জায়গা সব। কমপাউন্ডের ভেতরেই বাজার, রেস্টুরেন্টসহ সব ধরনের সুযোগ সুবিধা আছে। ফলে পরিবারের সদস্যদের কাছ থেকে দূরে থাকা ছাড়া তাঁর আর তেমন কোনো সমস্যা হচ্ছে না। বৃহস্পতিবার দুপুরে নূর আয়েশা জানালেন, ‘ছেলেদের নানা–নানি একটু হাসপাতালে গেছেন। ঘরে ঢুকেছে ভীমরুল। ছেলেরা ভয়ে শোয়ার ঘরে গিয়ে দরজা বন্ধ করে বসে আছে। কি যে একটা অবস্থা।’ ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে নূর আয়েশা। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ থেকে পড়াশোনা শেষ করেছেন। দীর্ঘদিন ধরে ইউএন মিশনে কাজ করছেন। নূর আয়েশার ফেসবুকের ওয়ালজুড়ে ফুটে আছে জিনিয়া, কসমস,নয়নতারাসহ নানান ফুল।

ফেসবুকে ফুলের ছবি দিয়ে লিখেছেন, ‘ করোনাকালে আমি যা করি! গত তিন মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল এই ফুলবাগান। মাটি খুঁড়ে পাথর সরানো, নতুন মাটি ও সার ফেলা, বীজ ছড়ানো, সকাল-বিকেল পানি দেওয়া, আগাছা তোলা—কাজের শেষ নাই। তার ওপর মেলিবাগের আক্রমণে গাছ নষ্ট হলো কিছু। বর্ষাকাল শুরুর পরে নতুন উপদ্রব—ভারী বৃষ্টিতে মাটি ধুয়ে যাওয়া ও পানি আটকে মাটি পচে যাওয়া। কড়া রোদের মধ্যে কাজকালীন সময়ে প্রতিবেশীদের হাসি, রোদে চামড়া পুড়ে যাওয়া – কত কী ঘটছে, কিন্তু এই ফুলগুলোর কাছে সব তুচ্ছ। এই বাগানের জন্য লকডাউন কালে ব্যস্ত সময় কাটছে। বাচ্চারা কাছে নাই বলে সব সময় হা হুতাশ করছি না।’ নূর আয়েশা বলেন, ‘সময় কাটানোর জন্যই বাগানের কাজে মনোযোগ বাড়িয়েছি। ছুটির দিনে সারা দিনই চলে যায় বাগানের পেছনে। আগে তো ছয় সপ্তাহ পরপর এক সপ্তাহ ছুটি কাটাতে বা সাপ্তাহিক ছুটিতে উগান্ডায় ছেলেদের কাছে চলে যেতাম, এখন তো সবই বন্ধ। আমার বাবা–মা ছিলেন বলে তবু কিছুটা নিশ্চিন্তে দিন কাটাতে পারছি। বাবা–মায়ের বয়স হয়েছে, বিভিন্ন অসুস্থতার পাশাপাশি আমাদের দুই ছেলেকে সামলাতে হচ্ছে। ফলে তাঁদের ওপরও চাপ বেড়েছে। করোনাকালে ইচ্ছে থাকলেও কিছু করার উপায় নেই। আমার এখান থেকে উগান্ডা যেতে ঘণ্টাখানেক সময় লাগে, অথচ যেতে পারছি না। কবে যে ছেলেদের বুকে চেপে ধরে আদর করতে পারব, তা–ও জানি না।’