জয়াকে নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন - Women Words

জয়াকে নিয়ে আনন্দবাজারের প্রতিবেদন

কানন দেবী ছিলেন ১৪! সুচিত্রা সেন ২২! ঋতুপর্ণা ২১! কোয়েল ১৮! বছরে শুরু করেছিলেন। আর আমাদের জয়া আহসান? বয়স ৪৭। তিনি নিজে অবশ্য বলছেন তার বয়স সাঁইত্রিশের একদিনও বেশি নয়! উইকিপিডিয়ার তথ্য ভুল! সর্বত্রই দেখা গেছে তারকাদের উত্থান কুড়ির কোঠায়। বয়সের সঙ্গে সঙ্গে তাদের প্রমোশন হয়েছে তন্বী কিশোরী থেকে মা-মাসির রোলে। ব্যতিক্রম আছে। তারা ক্ষণজন্মা। যেমন- মেরিল স্ট্রিপ বা জেমস বন্ডের গোয়েন্দাপ্রধান জুডি ডেনস সত্তর পেরিয়ে তারা পুনর্যৌবন লাভ করেছেন। জয়া ব্যতিক্রম! যা এতদিন অভাবনীয় ছিল, এবার তা-ই হয়েছে। ৪৭ অথবা (ওরফে) ৩৭ বছরের এক নারী এই মুহূর্তে বাংলার সবচেয়ে কাঙ্ক্ষি মুখ।

২০১৭-এ লম্বা ইনিংস খেলতে মাঠে নেমেছেন তিনি। শুধু একের পর এক ছবি করা নয়। প্রতিটি ছবিতে বক্স অফিসের সাফল্যকে সুনিশ্চিত করেছেন জয়া। এ বছর রিলিজ করেছে তার তিনটি ছবি। বক্স অফিসে সাফল্যের নিরিখে ‘দেবী’, ‘বিজয়া’, ‘কণ্ঠ’- তিনটিই সুপারহিট। শুধু এ বছরই নয়। ইতোমধ্যেই জয়া সাজিয়ে নিয়েছেন পরের বছরের বাছাই করা ছবির লম্বা তালিকা।

আসছে অতনু ঘোষের ‘বিনি সুতো’, ‘রবিবার’ জয়ার ক্যারিয়ারে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ছবি। এই প্রথম ‘বিনিসুতো’য় ঋত্বিক চক্রবর্তী আর ‘রবিবার’-এ প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে জুটি বাঁধছেন জয়া। অন্যদিকে কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়ের মতো হেভিওয়েট পরিচালকের ‘অর্ধাঙ্গিনী’তে একেবারে ভিন্ন মেজাজে দেখা যাবে জয়াকে। তার পরী আর ভূতের ম্যাজিকাল অভিনয় ক্যামেরাবন্দি করেছেন সৌকর্য ঘোষাল। জয়া সেখানে ‘ভূতপরী’। আর সে ছবি প্রেজেন্ট করছেন স্বয়ং কোয়েল মল্লিক! কোয়েল বলছেন, ‘জয়ার অভিনয়ের জায়গাটা খুব শক্তিশালী।’

এখন কি তবে পরিণত বয়স্ক অভিনেত্রীর সময়? ‘সময় পাল্টাচ্ছে। বাংলা ছবির গল্পের সঙ্গে চরিত্রও বদল হচ্ছে। দর্শক ম্যাচিওরড লুক খুঁজছে, যা জয়ার মধ্যে আছে। কমবয়সী অভিনেত্রীর চেয়ে পরিণত লুক দর্শককে টানছে, যার ওপর ভরসা জন্মায়’Ñ বললেন পরিচালক অরিন্দম শীল।

‘চরিত্রর চেয়েও আমার মনে হয়, যেভাবে স্ক্রিপ্ট বেছে বেছে ছবি করে জয়া, তাতে ও অনেককে পেরিয়ে যাচ্ছে। ম্যাচিওরড স্ক্রিপ্ট। ওর নানা রকম লুক। যে কোনো চরিত্র অ্যাডপ্ট করে ফেলতে পারে সহজে। দুই বাংলার ডায়ালেক্টও অসম্ভব ভালো বলতে পারে’Ñ জয়াকে বিশ্লেষণ করলেন তার ‘এক যে ছিল রাজা’র পরিচালক সৃজিত মুখোপাধ্যায়।

নবাগতা কমবয়সী নায়িকার চেয়ে অনেক দিন ধরে জীবন দেখা অভিনেত্রীর জন্য আলাদা করে চিত্রনাট্য লিখছে টালিউড। যেমন- পরিচালক সৌকর্য ঘোষাল। তিনি বলছেন, ‘পপুলার ছবি নয়। শিল্পনির্ভর ছবিকেই পপুলার করতে পারছেন জয়া আহসান।’

“বাংলাদেশে, বিদেশে ‘দেবী’র সাফল্য বলে দিয়েছে ‘ক্রিটিক্যালি অ্যাক্লেমড’ ছবিও ‘জনপ্রিয়’ হতে পারে। আমি সেই রাস্তাটা তৈরি করেছি’, বললেন ‘কণ্ঠ’ ছবির স্পিচ থেরাপিস্ট জয়া।

সদ্যই বাংলাদেশে মুক্তি পেয়ে ‘কণ্ঠ’ পঁচিশ সপ্তাহে পা দিল। জোরালো জয়ার কণ্ঠস্বর! পরিচালক শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘জয়া যে সময়ে দাঁড়িয়ে আছেন, সেখানে তার প্রতিটি পদক্ষেপ অত্যন্ত বুঝে নেওয়া। কাজ ছাড়া তিনি কিছুতে নেই। কৌশিকদার সঙ্গেও যেমন ভালো সম্পর্ক, আমার সঙ্গেও তেমন। অতনুদার সঙ্গেও তেমন। বাংলাদেশে চারবার জাতীয় পুরস্কার পাওয়া শিল্পী! কিন্তু মেকআপ ভ্যান থেকে খাবার, কিছুই দেখলাম আলাদা চায় না। তার সঙ্গে অসাধারণ অভিনয় ক্ষমতা। কনটেন্ট যেখানে বাংলা ছবিকে চালাচ্ছে, সেই সময়ে জয়ার মতো চরিত্রনির্ভর অভিনেত্রীই উঠে আসবেন। ফলে সব পরিচালকই চাইবেন ওঁর সঙ্গে কাজ করতে।’

‘রাজকাহিনি’তে জয়ার বিপরীতে থাকা অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ বললেন, ‘ম্যাচিওরড লুকের আবেদনই এখন সবচেয়ে চর্চিত। সেই পরিণত চেহারার যে সম্মোহন, তাতে মজেছে বাঙালি দর্শক।’

শুধু ইন্ডাস্ট্রি নয়। ইনস্টাগ্রাম আর ফেসবুকে জয়া এগিয়ে। ইনস্টায় তার ফলোয়ার বারো লাখ। ঋতুপর্ণার এক লাখ আটানব্বই হাজার। পাওলির পাঁচ লাখ আট হাজার। স্বস্তিকার সাত লাখ সাত হাজার।

কেন? নিউটাউনে আইটি সেক্টরে চাকরি করেন নীলিমেশ রায়। সোজাসুজি বললেন, ‘আমি রুক্সিমণীর ছবির চেয়ে জয়ার ছবি দেখব। দেখলেই সম্মান করতে ইচ্ছে করে। আবার খুব আকর্ষণীয়। কখনো মনে হয়নি উনি ব্যক্তিজীবনে কেমন? ওঁর বয়স কত? এসবে কিছু যায় আসে না!’ সূত্র : আনন্দবাজার পত্রিকা