শিশু ভেবে তরুণীকে দত্তক : বিপদে বাবা-মা - Women Words

শিশু ভেবে তরুণীকে দত্তক : বিপদে বাবা-মা

ছয় বছরের শিশু ভেবে যাকে দত্তক নিয়েছিলেন পরে দেখা গেলো সে আসলে ২২ বছরের এক বামন নারী। গোমর ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর সেই বামন নারী হত্যার চেষ্টা করেছেন দত্তক মা-বাবাকে।

জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডার এক দম্পতি ক্রিস্টিন ও মাইকেল বার্নেট ২০০৯ সালে ‘ছয় বছর বয়সী’ এক শিশু কন্যা নাতালিয়া গ্রেসকে দত্তক নেন। নাতালিয়া জন্ম সূত্রে ইউক্রেনিয়ান। কিন্তু ওই দম্পতির বিরুদ্ধে অভিযোগ ওঠে, ২০১৩ সালেই নাতালিয়াকে একটি ঘরে ফেলে রেখে তারা যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডা পালিয়ে যান।

শিশুকে ফেলে রেখে পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ ওঠার পরই পুরো কাহিনীর উপর থেকে একের পর এক পর্দা উঠতে থাকে। ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, ছয় বছরের শিশু বলে যাকে তারা দত্তক নেন, আসলে তিনি ২২ বছরের এক ‘প্রতারক’ বামন নারী। দত্তক নেওয়ার কিছু দিন পর থেকেই ধীরে ধীরে বিষয়টি তাদের কাছে পরিষ্কার হতে থাকে।

বার্নেট দম্পতি নাতালিয়াকে যখন দত্তক নিয়ে ফেরেন, দেখেন তিনি চলতে পারেন না। কিন্তু তার দত্তকের কাগজপত্রে সে কথা উল্লেখ ছিল না। যাই হোক তারা মানসিক ভাবে প্রস্তুতি নিতে শুরু করেন। মেনে নেন যে, তারা চলতে অক্ষম শিশুকেই দত্তক নিয়েছেন। সেই সঙ্গে নাতালিয়ার প্রতি যাতে ভালোবাসায় কোনো কমতি না থাকে সে দিকে নজর রাখেন। বার্নেট দম্পতির এর আগেই তিন ছেলে ছিল। তাদের সঙ্গেই মানুষ করতে থাকেন নাতালিয়াকে।

একদিন গোটা বার্নেট পরিবার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে যায়। বার্নেট দম্পতির তিন ছেলে সমুদ্রে ঢেউ খাচ্ছিল। নাতালিয়া তার বাবাকে বার বার বলছিল তাকেও ভাইদের কাছে নিয়ে যেতে। কিন্তু ক্রিস্টিন ও মাইকেল তখন এতটাই ক্লান্ত ছিলেন যে নাতালিয়াকে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করতে বলেন। কিন্তু নাতালিয়ার তর সইছিল না। হঠাৎ করে নাতালিয়া উঠে দাঁড়িয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে সমুদ্রে নেমে যান। নিজেদের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছিলেন না তারা। যে একটু আগে পর্যন্ত হাঁটতে পারছিল না। সে এখন দৌড়ে গিয়ে সমুদ্রে নেমে গেল? সেই প্রথমবার, চমকে গিয়েছিলেন বার্নেট দম্পতি।

ক্রিস্টিন জানিয়েছেন, পরে নাতালিয়াকে গোসল করাতে গিয়ে লক্ষ্য করেন, তার শরীরে বিভিন্ন জায়গায় যে লোমের উপস্থিতি, তা কোনো ছয় বছরের শিশুর শরীরে থাকা সম্ভব নয়। তার পর ক্রিস্টিন আবিষ্কার করেন, নাতালিয়ার অন্তর্বাসে রক্তের দাগ। তা দেখে ক্রিস্টিনের সন্দেহ হয়, নাতালিয়া মোটেও ছয় বছরের শিশু নয়, তার বয়স অনেক বেশি। আর নাতালিয়াও পুতুল, খেলনা নিয়ে খেলতে মোটেও পছন্দ করতেন না। বরং তিনি বয়স্ক নারীদের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করতেন। আর তাদের সঙ্গে কথা বলার সময় নাতালিয়ার শব্দ চয়নও মোটেও ছয় বছরের শিশুর মতো ছিল না, তিনি অনেক পরিণত কথা বলতেন।

এর পরেও আরো সন্দেহজনক সূত্র পান বার্নেট দম্পতি। তারা একরকম নিশ্চিত হন, নাতালিয়া মোটেও শিশু নয়, তার থেকে অনেক বেশি তার বয়স। এই বিষয়ে বার বার প্রশ্ন করা হয় নাতালিয়াকে। নাতালিয়া বুঝতে পারেন, তিনি ধরা পড়ে যাচ্ছেন।

এরপর নাতালিয়া নাকি ক্রিস্টিন ও মাইকেলকে একাধিকবার হত্যার চেষ্টা করেছেন বলেও অভিযোগ। বার্নেট দম্পতির অন্য তিন ছেলেকেও হত্যার হুমকি দিতে থাকেন নাতালিয়া। এই পরিস্থিতিতে ২০১২ সালে নাতালিয়ার মানসিক চিকিত্সার ব্যবস্থা করা হয়।

সেখানেই মানসিক ও শারীরিক পরীক্ষার পর চিকিত্সকরা জানিয়ে দেন, নাতালিয়ার বয়স মোটেও ছয় বছর নয়, তার বয়স অন্তত ২২ বছর। বার্নেট দম্পতি নিজেদের চেষ্টায় কিছু নথিপত্রও জোগাড় করে ফেলেন। যেখান থেকে প্রমাণ পাওয়া যায়, নাতালিয়া ১৯৮৯ সালে জন্মগ্রহণ করেন। নাতালিয়াকে বাড়িতে একা ফেলে পালিয়ে যাওয়ার জন্য, বার্নেট দম্পতির বিরুদ্ধে মার্কিন আদালতে মামলা চলতে থাকে। আদালতে পুরো ঘটনার সব দিক সামনে আসতে থাকে।

এর মধ্যে মাইকেল ও ক্রিস্টিনের বিচ্ছেদও হয়ে যায়। ক্রিস্টিন বার্নেট বৃহস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর আত্মসমর্পণ করে সাড়ে পাঁচ হাজার ডলার জামিন পান। মাইকেলও আত্মসমর্পণ করার পর অর্থে র বিনিময়ে জামিন পেয়ে যান।

ব্রিটেনের সংবাদপত্র ডেইলি মেইলে ২৪ সেপ্টেম্বর পুরো ঘটনা নিয়ে একটি বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশ হয়েছে।