'আমি আসামের মুসলিম নারী, আমি গরুর মাংস খাবো না?' - Women Words

‘আমি আসামের মুসলিম নারী, আমি গরুর মাংস খাবো না?’

ভারতের আসাম রাজ্যের বিশ্বনাথ জেলায় গরুর মাংস বিক্রির ‘অপরাধে’ সওকত আলি নামে এক ব্যক্তিকে মারধর এবং তাকে জোর করে শূকরের মাংস খাইয়ে দেয়ার ভিডিওটি ভাইরাল হয়েছে। তাকে প্রাণভিক্ষা চাইতেও বাধ্য করা হয়। পরে অসুস্থ শওকতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ফুঁসছে ইন্টারনেট। ঘটনাটি নিয়ে আসামের অর্থমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব শর্মাকে এক হৃদয়স্পর্শী চিঠি লিখেছেন আলিগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী রুবিনা সরকার। এই তরুণীর চিঠিটি এখানে তুলে দেয়া হলো। 

প্রিয় হিমান্ত বিশ্ব শর্মা স্যার, 
আপনি দয়া করে ভিডিওটি দেখুন এবং আমাকে বলুন এটা দেখে আপনার কেমন লেগেছে। প্রায় ৮ ঘণ্টা হয়ে গেছে আমি ভিডিওটি দেখেছি এবং এখন পর্যন্ত এটা আমাকে যন্ত্রণা দিয়ে যাচ্ছে। এই মুহূর্তে আমি খুবই অসহায় বোধ করছি। আমি নিজের রাজ্যে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। 

ধর্মনিরপেক্ষ পরিবেশে সংবিধান প্রণেতারা এ সম্পর্কে কী বলবেন, আমাকে দয়া করে জানান। কারণ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে একটি গণতান্ত্রিক দেশের চেহারা এমন হোক তা আমি চাই না। 

আপনি জানেন স্যার, একটা সময় আপনি আমার প্রিয় নেতা ছিলেন। আসামে মুসলমানদের বাজে সময়ে আপনি তাদের পাশে ছিলেন সে জন্যে নয়। বরং আমি আপনার ভেতরে একজন নেতাকে দেখেছিলাম, একজন প্রশাসককে দেখেছিলাম। আমি আপনার কর্মের মাঝে ধর্মনিরপেক্ষতা দেখেছি। কিন্তু এখন আপনি এবং আপনার কর্মকাণ্ড আমাকে এবং আমার মতো অনেককেই চরমপন্থী বানিয়ে দিচ্ছে। 

ভিডিওতে দেখা যাচ্ছে, একজন মুসলিম বৃদ্ধ গরুর মাংস বিক্রি করছেন এবং তিনি তা কিনতে অন্যদের জোর করছেন না। কিন্তু গরুর মাংস বিক্রির অপরাধে তাকে শূকরের মাংস খেতে বাধ্য করা হলো (যা ইসলাম ধর্মবিরোধী)। আমাকে দয়া করে বলুন স্যার, এটা কোন ধরনের বিচার! কেউ-ই কাউকে এমন কিছু খেতে বাধ্য করতে পারে না যা সে খেতে চায় না, ঠিক তো স্যার! 

আমি ২১ বছর বয়সী এক মুসলমান। আসামের নারী এবং আমি গরুর মাংস খেতে পছন্দ করি। গরুর মাংস খাওয়ার জন্যে কি তারা আমার সঙ্গেও এমনটা করবে! আমাকে উত্তর দিন। আপনি কী খাবেন তা আপনার ওপরই নির্ভর করে। ভারত একটা গণতান্ত্রিক দেশ, ঠিক! 

আমি কখনোই বিপ্লবী চেতনার মেয়ে ছিলাম না। কিন্তু আমাদের জাতির এমন অবস্থা এবং আমাদের শাসকদের এমন আচরণ আমাকে কথা বলতে, তাদের বিরুদ্ধে বলতে বাধ্য করছে। আমাকে বিপ্লবী হতে বাধ্য করছে। আমি আপনাকে অনুরোধ করছি, আমি যা হতে চাইছি তা হওয়া থেকে আমাকে বাঁচান। দয়া করে আমাদের নিজ ভূখণ্ডে নিরাপদে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত করুন, দয়া করুন স্যার।     

এটা এমন এক মেয়ের অনুরোধ যে আপনার মতাদর্শের বড় অনুসারী ছিলো। আর সে এখন আপনার অক্ষরজ্ঞাহীন, অশিক্ষিত এবং সাম্প্রদায়িক আচরণের জন্যে আপনাকে ঘৃণা করে। 

আপনাকে ধন্যবাদ।