ছেলের ইচ্ছা পূরণ করতে প্রাণপণ লড়ছেন মা - Women Words

ছেলের ইচ্ছা পূরণ করতে প্রাণপণ লড়ছেন মা

সুব্রত জানা

হাঁটার সময়ও ছেলেকে কোলে নিয়েই থাকেন তিনি। কাঁধে ঝোলানো ব্যাগ। সকালে আট কিলোমিটার হেঁটে যান, ফেরার পথও একই। বাড়ি থেকে ঠিক ওই দূরত্বটা পার করলে ছেলে গিয়ে বসতে পারে পরীক্ষার হলে। 

এ বছর উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা দিচ্ছে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের হাওড়া জেলার উলুবেড়িয়ার রাজাপুর কাঁটাবেড়িয়া গ্রামের শুভজিৎ মালিক। ছোট থেকে ঠিক মতো বেড়ে ওঠেনি তার শরীর। শারীরিক প্রতিবন্ধী ছেলের ভরসা সে কারণে তিনিই। মা কণিকা মালিক অনেকেরই উপেক্ষা, ব্যঙ্গ উড়িয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছেন, ভরসা যোগাচ্ছে ছেলে।

অবশ্য লড়াই এখানেই শুরু নয়। এর আগে মায়ের কোলে চড়েই মাধ্যমিক পরীক্ষাও দিয়েছে শুভজিৎ। ২৬৬ নম্বর পেয়ে পাস করে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল কলা বিভাগে। 

শুভজিতের ইচ্ছা লেখাপড়া শিখে শিক্ষক হওয়ার। ছেলের সেই ইচ্ছা পূরণ করতে প্রাণপণ লড়ছেন কণিকা। পরীক্ষার হলে ছেলেকে বসিয়ে দিয়ে বাইরে অপেক্ষা করেন তিনি। 

তিনি বলেন, ছেলেটা আমার প্রতিবন্ধী, ১০ বছর বয়স হওয়ার আগেই ওর বাবা মারা গেল। তাই বলে ওর স্বপ্ন পূরণ হবে না! না, তা আমি হতে দেব না। যত কষ্টই হোক, ওর লেখাপড়া চলবে।

কণিকা বলেন, ছেলের বাবা যখন চলে গেলেন, ভেবেছিলাম আর কিছু হবে না। কিন্তু ছেলে নাছোড়। স্কুলে ও যাবেই।

তারপর মায়ের লড়াই শুরু। শুধু পরীক্ষার হল নয়। শুভজিতের বাড়ি থেকে তার স্কুলের দূরত্বও প্রায় পাঁচ কিলোমিটার। নিয়মিত ছেলেকে স্কুলে দিয়ে আসতেন কণিকা। স্কুল শেষ হলে আবার কোলে চড়িয়ে ছেলেকে ফিরিয়ে নিয়ে আসতেন। 

মায়ের কষ্ট চোখ এড়ায় না ছেলের। কিছু জানতে চাওয়ার আগেই সে বলে ফেলে, লেখাপড়া শিখতে হবে। নাহলে মায়ের কষ্ট দূর হবে কী করে?

কিন্তু কলেজ তো হবে আরো দূরে, তখন? ঠিক কিছু একটা হয়ে যাবে, বিশ্বাস করেন মা। ভরসা রাখে ছেলেও। 

মায়ের পাশাপাশি শুভজিৎকে সাহায্য করে তার শিক্ষক থেকে শুরু করে সহপাঠীরাও। স্কুলের প্রধান শিক্ষক তপন কুমার রায় বলেন, ওর ৮০ শতাংশ প্রতিবন্ধকতা। আর মনের জোর ১০০ শতাংশ। আমরা আছি ওর পাশে। ওর সহপাঠীরাও ওকে কোলে নিয়ে এক ক্লাস থেকে অন্য ক্লাসে বসিয়ে দেয়। কিন্তু আরেকটু সাহায্য দরকার। ছেলেটা আরো অনেকখানি এগিয়ে যাবে।

সূত্র: আনন্দবাজার