‘গর্ভবতীদের নিয়োগ দিতে চান না চাকরিদাতারা’ - Women Words

‘গর্ভবতীদের নিয়োগ দিতে চান না চাকরিদাতারা’

একটি আবেগঘন ফেসবুক স্ট্যাটাস গত কয়েকদিন ধরে ঘুরপাক খাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ও গণমাধ্যমে।

একজন নারী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা অভিযোগ করেছেন, সন্তানসম্ভবা হওয়ার বিষয়কে কর্মস্থলে তার সবচেয়ে বড় অযোগ্যতা হিসেবে উপস্থাপন করা হয়েছে এবং এই কারণে তাকে বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা বা ওএসডি করা হয়েছে বলে ঐ কর্মকর্তা অভিযোগ তুলেছেন।

আলোচনা শেষমেশ সংসদ পর্যন্ত গড়িয়েছে। সংসদে এই ঘটনা তদন্তের দাবি জানিয়েছেন দুজন সাংসদ।

কিন্তু বেসরকারি খাতে গর্ভবতী হওয়ার পর নারী কর্মীদের কি পরিস্থিতিতে পড়তে হয়? তার প্রতিকার কি ধরনের রয়েছে?

অভিযোগ রয়েছে বেসরকারি খাতে কর্মীর অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার বিষয়টি প্রায়শই খুশি মনে নেন না চাকরিদাতারা।

যেমনটা বলছিলেন এমন সমস্যার মধ্যে দিয়ে যাওয়া একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাবেক কর্মী মোরশেদা আক্তার।

তিনি বলছেন, “প্রেগন্যান্ট থাকার সময় সহকর্মীদের কাছ থেকে আমি খুব পজিটিভ পরিবেশ পেয়েছি কিন্তু ম্যাটারনিটি লিভ পার করে আসার পর আমি এমনকি আমার পুরনো ডেস্কটাও পাইনি। আমাকে অন্য সেকশনে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিলো।”

কিন্তু মোর্শেদা আক্তার নিজেই সেই প্রতিষ্ঠানে কর্মী নিয়োগের দায়িত্বে ছিলেন।

বলছিলেন কাছে থেকে দেখেছেন, সন্তানসম্ভবা এমন তথ্য প্রকাশ পেলে সেসব কর্মীদের নিয়োগ দিতে চাইতেন না বড়কর্তারা।

তিনি বলছেন, “যদি কেউ বুঝতে পারে, “কেউ যদি জানতে পারে সে প্রেগন্যান্ট তাহলে তার রিক্রুটমেন্ট নেগেটিভভাবে দেখা হতো। ম্যানেজমেন্ট লেভেলে যারা আছেন তারা কাজ চালিয়ে নিতে পারে। কিন্তু ওয়ার্কার লেভেলে কায়িক পরিশ্রমের বিষয় যেখানে থাকে সেখানে বলা হতো এই সময় ওকে নেয়া যাবে না।”

মোর্শেদা আক্তার সম্প্রতি চাকরি ছেড়ে দিয়েছেন। বাংলাদেশে ২০১১ সালে সরকারি চাকরি ক্ষেত্রে মাতৃত্ব-কালীন ছুটি ছয় মাস করা হয়েছে।

কিন্তু সেই সুবিধা নিয়ে বেসরকারি খাতে নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে।

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের নারী শ্রমিকরা সন্তানসম্ভবা হলে রীতিমতো কাজ হারাতে হয় বলেও অভিযোগ রয়েছে।

তাই গর্ভবতী হলে একটা পর্যায় পর্যন্ত অনেকেই তা লুকিয়ে রাখেন।

গর্ভবতী নারীকে দিয়ে সব কাজ করানো যাবে কিনা বা তাকে ঘনঘন ছুটি দিতে হবে সেসব নিয়ে কর্মস্থলে প্রশ্ন ওঠে।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান অজেয় রোহিতাশ্ব আল্ কাযী বলছেন, একটি নতুন সন্তানের আগমন কর্মক্ষেত্রে সবসময় বড়কর্তাদের জন্য সুখের খবর নাও হতে পারে।

তিনি বলছেন, “মাতৃত্ব, মাতৃত্বকালীন ছুটি বা মাতৃত্বকালীন ছুটির পরে কর্মীদের যোগ দেয়া, বাংলাদেশের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমরা কিন্তু অতটা সঙ্গত-ভাবে সভ্য বা আধুনিক হয়ে উঠতে পারিনি। এখানে নারী কর্মীদের কিছুটা যৌক্তিক সীমাবদ্ধতাও থাকে। মাতৃত্বকালীন ছুটির পর ওনারা যখন জয়েন করেন ওনাদের মাথায়ও শিশুটা থাকে। কাজের লোড থাকে এবং শারীরিকভাবে ওনারা অতখানি ফিট থাকেন বলে যারা কর্তাব্যক্তি বা সিদ্ধান্ত প্রণেতারা মনে করেন না।”

বাংলাদেশে বেসরকারি খাতে নিয়োগের ক্ষেত্রে কোন সমন্বিত নিয়ম মানা হয়না বলেই সেখানে সমস্যাও বেশি।

যেমনটা বলছেন, সেন্টার ফর উইমেন অ্যান্ড চিলড্রেন স্টাডিজের প্রধান অধ্যাপক ইশরাত শামিম।

তিনি বলছেন, “একেকটা অফিসে একেক রকমভাবে কন্ট্রাক্ট সাইন হয়। দেশের আইন যাই বলুক না কেন। আপনি যদি গর্ভবতী হন তাদের অ্যডভান্স স্টেজে ছুটি দেবে কিনা বা বলতে পারো আর্নড লিভ থেকে কাটো, বা বলতে পারে উইদাউট পে ছুটি। কন্ট্রাক্ট লেটারে এরকম নানা ক্লজ যদি দিয়ে রাখে তাহলে তো সে প্রবলেমে পড়বে কারণ সেতো তাতে সাইন করেছে।”

বাংলাদেশে এমপ্লয়ার্স ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট কামরান টি রাহমান বলছেন তারা পরিস্থিতি পরিবর্তনে কাজ করছেন।

তার মতে, “আমরা জেন্ডার ব্যাল্যান্স প্রমোট করতে চাই। আমরা সবসময় বলি যার যখন ম্যাটারনিটি লিভ প্রয়োজন সেটা যেন দেয়া যায়। এখন কোন স্পেসিফিক অফিসে কোন নারী এমপ্লয়ির কোন যদি সমস্যা হয়, সেটা হতে পারে। একদম হয়না সেটাও বলা যাবে না আবার সব সময় যে এরকম হয়ে থাকে সেটাও বলবো না।”

তবে তিনি বলছেন মনোভাব পরিবর্তন দরকার। তিনি বলছেন, “অ্যাটিটুড তো অবশ্যই পরিবর্তন করা দরকার। এটা হিউম্যান ডেভেলপমেন্টের ব্যাপার। কিছুই যদি না করি তাহলে আমাদের ইমপ্রুভমেন্ট হবে না।”

কিন্তু বাংলাদেশে এমন ঘনটায় আইনি প্রতিকার চাওয়ার ঘটনা খুব বিরল।

কর্মস্থলে গর্ভবতী নারী বৈষম্যের শিকার হলে প্রতিকার চাওয়ার সুযোগও খুব একটা নেই।

সূত্র: বিবিসি বাংলা