বাইক নিয়ে দুর্গম গিরিপথ জয় করে চলেছেন পল্লবী - Women Words

বাইক নিয়ে দুর্গম গিরিপথ জয় করে চলেছেন পল্লবী

বাবার বাইকের পিছনের বসে ঘুরে বেড়াতে ভাল লাগত তাঁর। সেই থেকেই শুরু বাইকের প্রতি প্রেম। ইনি পল্লবী ফৌজদার। বয়স ৩৯। বিশ্বের অন্যতম সেরা বাইকারদের মধ্যে নাম রয়েছে ভারতীয় এই গৃহবধূরও।

পল্লবীর স্বামী পরীক্ষিৎ মিশ্র একজন সেনা অফিসার। তিনি পাশে না থাকলে একা গৃহবধূর পক্ষে লড়াইটা সম্ভব হত না বলে জানিয়েছেন দুই ছেলের মা পল্লবী।

দিল্লির গৃহবধূ পল্লবীই পৃথিবীর একমাত্র ব্যক্তি, যিনি ভারতের অন্যতম কঠিন গিরিপথ উমলিংলা পাস, সাথাতোলা পাস ও মানা পাস জয় করেছেন বাইক চড়ে।

শুরুটা হয়েছিল বেঙ্গালুরু, উধমপুর, লখনউ, জম্মু, শ্রীনগর, পঞ্জাব, এই শহরগুলোয় একা বাইক চালিয়ে ঘুরে বেড়ানোর নেশা থেকে। তবে বাধা এসেছে তো বটেই। বছর চারেক আগে প্রথম বার যখন মাউন্টেন বাইকিং শুরু করলেন, এক ছেলের বয়স ছয়, অন্য জনের নয়। ছেলেদের প্রতি দায়িত্ব নেই, এমন কথাও শুনতে হয়েছে তাঁকে।

২০১৫ সালের ৭ জুলাই প্রথম একা লাদাখে যান বাইক চালিয়ে। দিল্লি থেকে লেহ এর ৩০০০ কিমি পথ পাড়ি দেন তিনি। সেই থেকে শুরু। ১৬টি পাস ইতিমধ্যেই জয় করে ফেলেছেন তিনি। যার মধ্যে আটটির উচ্চতা ৫ হাজার মিটারের উপরে।

দু’মাস ধরে ওই পথের উপর গবেষণা চালিয়ে হাতে মানচিত্র এঁকে ফেলেন গোটা এলাকার। মনের জোর হারাননি পল্লবী। মাত্র ২০ দিনে তিনি লাদাখের মোট আটটি পাস জয় করেন। ৫০০ টাকা প্রতি লিটার পেট্রলের খরচ ছিল লেহ-তে। সঙ্গে ছিল জিপিএস ও উচ্চ প্রযুক্তির ক্যামেরা।

সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ হাজার মিটার উচ্চতায় অবস্থিত আটটি পাস জয় করেন তিনি, তাও প্রথম বারের চেষ্টাতেই। পল্লবী ইতিমধ্যেই নাম তুলেছেন লিমকা বুক অব রেকর্ডসে।

খারদুং লা, লাচুলং লা, তাগলাং লা, মারসিমিক লা, চাং লা-এই পাঁচটি পাস একই যাত্রাপথে জয় করেছেন বেশ কয়েক জন বাইকার। তবে পল্লবী এ ছাড়াও সাথাথো লা, কাকসাং লা ও হরি লা জয় করেছেন একই পথে। মহিলা তো বটেই, কোনও পুরুষ বাইকারও জয় করেননি এই গিরিপথ।

তিনি যে বার অন্যতম কঠিন ‘মোটরেবল মাউন্টেন পাস’ জয় করছেন, সেই একই বছর একই পথে মারাত্মক খারাপ আবহাওয়ায় প্রাণ হারান ৩০ জন। প্রথম নারী হিসাবে মানা পাস জয় করেছেন তিনি। যাঁর উচ্চতা প্রায় ৫৬৩৮ মিটার।

একটা ওল্ড কাস্ট আয়রন বুলেট, একটা ট্রায়াম্ফ, একটা ডুকাটি স্ক্র্যাম্বলার আর একটা অ্যাভেঞ্জার। এই ‘বন্ধুদের’ সাহায্যেই যাবতীয় গিরিপথ জয় করেছেন পল্লবী।

২০১৭ সালে রাষ্ট্রপতির থেকে পেয়েছেন নারীশক্তি সম্মান। উত্তরপ্রদেশ সরকারও তাঁকে ‘আউটস্ট্যান্ডিং গ্লোবাল উইম্যান’ সম্মানে ভূষিত করে।

একটি নতুন গিরিপথও আবিষ্কার করেছেন এই বাইকার। নিজের বাইক ট্রায়াম্ফ বনিভিলের নামে সেই পাসের নাম রেখেছেন বনি লা। তবে পল্লবীর কাছে সবচেয়ে প্রিয় মুহূর্ত ছিল উমলিং লা জয়ের মুহূর্ত, এমনটাই জানান তিনি সংবাদ সংস্থাকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে।

সূত্র: আনন্দবাজার