ধর্ষণ ও ধর্ষক - Women Words

ধর্ষণ ও ধর্ষক

জিনাত আরা হক

মেয়েটি যখন প্রথম ধর্ষিত হলো, মেয়েটির বয়স ছিলো পাঁচ –
নরম শরীরের ভাঁজ পড়শির জন্য উপযুক্ত নয় বলে ব্লেড দিয়ে চিরে দিলো তার যৌনাঙ্গ,
দ্বিতীয় ধর্ষণটি হলো, তখন বয়স দশ –
স্কুলের শিক্ষক পড়ালেখার মাঝে জড়িয়ে ধরলো, আর মেয়েটি তিব্র ব্যথায় কুঁকড়ে গেলো
তৃতীয় ধর্ষণটি হলো, তখন বয়স বারো –
বোনের স্বামী বেড়াতে নিয়ে গিয়ে বললো, জানো তো তুমি আমার দ্বিতীয় বৌ, তবে খোলো প্যান্ট
চতুর্থ ধর্ষণটি হলো তখন বয়স পনেরো –
ভালবাসার মানুষটি শর্ত দিলো, যদি তাকে গ্রহণ না করে সে জানিয়ে দিবে সকলকে

একে একে ধর্ষণের সংখ্যা বেড়ে গেলো
এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন,তিন থেকে চার,

কখনো ঘরের মানুষ, কখনো মনের মানুষ, কখনো কাজের মানুষ, কখনো পথের মানুষ
মেয়েটিকে ধর্ষণ করলো আর বললো তুমিই দায়ি…

তোমার নাম তনু কেনো, তৃষা কেনো, মহিমা কেনো, পূজা কেনো
তুমি ফ্রক পড়লে কেনো, তুমি কামিজ পড়লে কেনো,তুমি শাড়ি পড়লে কেনো,
প্রতিবার ধর্ষক বললো আমি তোমাকে দেখে রাখি তাই প্রস্তুত থাকবে পরবর্তী ধর্ষণের জন্য-
প্রতিবার ধর্ষক বললো আমি তোমাকে চরিত্রবান বলে স্বীকৃতি দেই তাই প্রস্তুত থেকো পরবর্তি ধর্ষণের জন্য-
প্রতিবার ধর্ষক বললো লুকিয়ে রাখো শরীরের পীড়ন, যেনো আর এক ধর্ষক জেনে না যায়-

ধর্ষণের সংখ্যা বাড়তে থাকে, এক থেকে দুই, দুই থেকে তিন, তিন থেকে চার

ধর্ষণে আজ আর মেয়েটি পরাভূত হয়না,
প্রতিটি ধর্ষণে মেয়েটি জিতে যায়, হেরে যাওয়া এক জাতির সাথে,
প্রতি ধর্ষণে মেয়েটি বুঝে যায়, সে দুষ্প্রাপ্য সমাজের কাছে সারাজীবনের জন্য,
প্রতিটি ধর্ষণে মেয়েটি বুঝে যায়, তার অঙ্গ কত মজবুত তাদের চেয়ে,
আর প্রতি ধর্ষণে মেয়েটি পুরুষের হেরে যাওয়া শরীর দেখে, দেখে তার মিথ্যে আস্ফালন;
নিজেকে নিয়ন্ত্রন করতে না পারা এক জানোয়ার যার শরীর জুড়ে শুধুই একটি লিঙ্গ।

ধর্ষকের প্রতিশোধ মেয়েটির বিরুদ্ধে নয়, তার নিজের বিরুদ্ধে
ধর্ষকের প্রতিশোধ নারীর বিরুদ্ধে নয়, তার নপুংসকতার বিরুদ্ধে
ধর্ষকের প্রতিশোধ তার অসম্পূর্ন জীবনের বিরুদ্ধে,
না সে প্রেমিক না সে মানুষ
তার একটাই পরিচয় যুগে যুগে সে ধর্ষক, শুধু ধর্ষক।