সুদীপ্তা ভট্টাচার্য্য রুমকি
মধ্যবর্তিনী মানে মধ্যে অবস্থানকারী।আমার মতে বিবাহিত দম্পতির মধ্যে যে নারীই অবস্থান করেন অবিবেচকের মতো তাকেই মধ্যবর্তিনীর মর্যাদায় ভূষিত করা যায়।তিনি other কিংবা mother যে নারী ই হোন না কেন।দুইজন মানুষের বিবাহিত সম্পর্কে যদি প্রত্যেক ক্ষেত্রে মধ্যবর্তিনী হয়ে কোন ছেলের মাও পাকাপোক্ত আসন গেড়ে বসে থাকেন তাহলে এই সম্পর্কের ভিতটা তখন গড়ে উঠার আগেই ভাঙবে তা মোটামুটি নিশ্চিতভাবেই বলা যায়। মায়ের অবস্থান ও মর্যাদা কি তা একটা মায়ের সঠিকভাবে বুঝা উচিৎ পুত্রের বিয়ের নাম মুখে নেয়ার সাথে সাথেই, যা অনেকই বুঝতে সক্ষম নন।একজন শাশুড়ির জন্য কোন ব্যাপারইনা একটা সম্পর্ক নষ্ট করতে অবদান রাখা যদি তিনি এমনটা করতে চান।সব ছেলের মা যেমন এমন নন তেমনি সব ছেলের মা এমন মানসিকতার বাইরেও নন।এ ধরনের মানসিকতার মায়েদের পুত্ররা যদি একদিনের জন্যেও পুত্রবধূর রূপ ধারণ করতে পারতো তাহলে বুঝতে পারতো মা আর শাশুড়ির পার্থক্যটা কোথায়।অজান্তে যে সেসব মায়েরা নিজের পুত্রের জীবনেরও ক্ষতির কারণ তা তাদের বোধশক্তির একেবারে বাইরে।মা মানেই মহান,তিনি দেবীতুল্য এই কনসেপ্ট টা থেকে সমাজকে বেরোতে হবে।যদি তাই হতো তাহলে কোন মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ি মায়ের তত্ত্বাবধানে নির্যাতিত হতো না। আমি মনে করি প্রকৃতঅর্থে একজন ভালো মানুষই ভালো শাশুড়ি হতে পারেন।যে মানুষ মনের দিক দিয়ে নিজে ভালো না, তিনি না হতে পারেন ভালো শাশুড়ি, না হতে পারেন ভালো বউ এবং দুঃখজনক হলেও এটাই সত্যি তিনি আসলে ভালো মাও হতে পারেননা।হিপোক্রেসি দেখতে দেখতে তাদের সন্তানরাও শিখে সেটা,বোঝার ক্ষমতাটাও হারিয়ে ফেলে কাকে ভালো বলে আর কাকে খারাপ।কোন মা যদি ভুল হন বা তার কারণে যদি কেউ ক্রমাগত আঘাত প্রাপ্ত হয় সেখানে সন্তানের দায়িত্ব তাকে সেটা বোঝানো। সেই কাজ করা থেকে কোন সন্তান যখন বিরত থাকে বুঝতে হবে সে কারো সম্পত্তি হিসাবে বেড়ে উঠেছে সন্তান হিসাবে নয়।সন্তান যখন সম্পদ না হয়ে সম্পত্তি হিসাবে মুল্যায়িত হয় তখন এর যথেচ্ছ ব্যবহার তো হবেই।আবার সম্পত্তি হিসাবে পরিগণিত হতে কোন সন্তানের আপত্তি নাও থাকতে পারে,তবে কারো সম্পত্তি হিসাবে আত্মস্বীকৃত কেউ পৃথক ব্যক্তিস্বত্বা হিসাবে কাউকে বিয়ে না করাই শ্রেয়।কারণ বিয়ের ন্যূনতম প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে যেখানে মায়ের মনের উপর এর বিরূপ প্রভাব নিয়ে মাথা ঘামাতে হয় সেখানে সেই বন্ধনে জড়ানোর চেয়ে তা থেকে দূরে থাকাই সমীচীন।যে মানুষটি বউ হয়ে এসেছে তারও তো মানুষ হিসাবে একটা সম্পর্কের প্রতি অল্প হলেও প্রত্যাশা থাকবে।সে তো আর জানে না কোন সন্তান তার মায়ের সম্পত্তি আর কোন সন্তান সম্পদ!
যদি ছেলের বউকে নিজের আন্ডার গার্মেন্টস থেকে শুরু করে বার্থ কন্ট্রোল প্রসেস হিসাবে সে কি উপায় গ্রহণ করছে,বেডরুমে যৌথ জীবন কিভাবে যাপন করছে এরকম একান্ত ব্যক্তিগত সব বিষয়ে শাশুড়ির মতের উপর নির্ভর করতে হয় বা তাকে সেসব বিষয়ে প্রতিনিয়ত জবাবদিহি দিতে হয় সেই চাহিদাটা পরিপূর্ণভাবে একজন মায়ের মানসিক অসুস্থতা,সেটা কোনভাবেই আন্তরিকতা নয়।একটা মেয়ে শাশুড়ির এই আচরণে স্বাভাবিকভাবেই অস্বস্তি অনুভব করবে।আবার এমন শাশুড়িও আছেন যারা ছেলের সামনে নতুন বউটির সাথে যে ব্যবহার করেন তার ঠিক বিপরীত আচরণ ছেলের অনুপস্থিতিতে বউ এর সাথে করেন, এতে নতুন বউ হয়ে আসা মেয়েটির পক্ষে সব বুঝেও কিছু করার থাকেনা, কারো সাথে এমনকি নিজের হাজব্যান্ডের সাথেও অনেক সময় শেয়ার করা সম্ভব হয়না এই কুরুচিপূর্ণ বিষয়গুলো। আবার অনেক হাজব্যান্ড ও এতটাই ব্যক্তিত্বহীন হন যে স্ত্রীর বিমর্ষতার কারণ অনুসন্ধান না করে এক লাইন বউ বলার আগেই মায়ের কাছে সেই বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে যান।এতে দুইদিক থেকেই ফল হয় বিপরীত হয়, যিনি এমন কাজ করেন তিনি কখনোই তা স্বীকারতো করেনইনা মাঝ পথে বউ এর ঘাড়ে সব দোষ চাপিয়ে বসে থাকেন।অন্যদিকে বউও এই অনাকাঙ্খিত ঘটনা এড়াতে এবং হাজব্যান্ড যে বুঝেও অপমানিত হতে দেখল স্ত্রীকে- সেই কষ্ট থেকে সারাদিন যাই ঘটুক তার কিঞ্চিত পরিমাণ বলাও বন্ধ করে দিতে পারেন।
এই ধরনের কমপ্লেক্স এ আক্রন্ত মায়ের সন্তান বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পরিপূর্ণ ব্যক্তিত্ব নিয়ে বিকশিত হতে পারেনা, তাই সম্পর্কের ক্ষেত্রে ব্যাল্যান্সিংটাও তাদের শেখা হয়ে উঠেনা। একতরফা দোষ নিজের উপর নিতে নিতে বউটির নিজেকে অসহায় ভাবাটাই স্বাভাবিক। নতুন জায়গায় একাকীত্ব বোধ হওয়াটাও অস্বাভাবিক কিছু নয়।
এমনও শাশুড়ি আছেন যারা বউ ঘরে প্রবেশ যখন করে তখনই ঘরের কথা কখনোই যেন বাইরে না যায়, এতে সংসারে অশান্তি হয় কারন তাদের নিজেদের বাপের বাড়ির মানুষ বাদে শ্বশুরবাড়ির সব আত্মীয়স্বজনই যে শত্রু এই ধরনের ব্রিফ বউকে অঙ্কুরেই দিয়ে থাকেন।কথাবার্তাতেও রেস্ট্রিকশন আরোপ করেন, অমুকের সাথে চলবেনা,অমুকের ফোন ধরবেনা,তমুকের সাথে তো কথা বলবেই না।এই সুযোগে যদি কোন মা মনগড়া কাহিনী বউকে নিয়ে জনে জনে বলে বেড়ান সেখানে বউটির কি করার থাকতে পারে।বেচারি তো ঘরের কথা হয়তো ঘরেই নিয়ে বসে রইলো মাঝপথে বউকে নিয়ে যা তা কথা কিন্তু ঠিকমতো ছড়িয়ে দেয়া হলো সে হয়তো তখন জানেও না আর যখন জানবে তখন করার কিছু থাকেও না।কারণ যখন কোন ভুল বা দোষের বাস্তবতা থাকে তখন তাকে সংশোধনের উপায় থাকে। যে কাজের বাস্তবিক ভিত্তি নেই সেই কাজ তো শুধরানো অসম্ভব।এছাড়া এই ধরনের মানুষ আত্মীয় স্বজন, বন্ধুবান্ধব,লন্ড্রিম্যান এমনকি কাজের বুয়ার সামনেও বউ কে ছোট করতে ছাড়েন না।আবার অন্যদিকে ছেলের সম্পর্কে বউকে শুধু না বউ এর পুরো গুষ্ঠির কাছে নিন্দামন্দ নিজেই করে যদি দুই এক কান ঘুরে ছেলের কানে আসে তাহলে ‘অল ক্রেডিট গোউস টু বউ’। আমি কি মা হয়ে নিজের ছেলে নিয়ে বলতে পারি,সুতরাং বউই বলেছে!আবার ছেলের কাছেও বউ এবং বউ এর বাড়ির মানুষের দোষের ক্রন্দনরত বন্দনা করতে করতে আমি কি তোমার বউ নিয়ে মিথ্যা বলতে পারি সুতরাং বউই করেছে।এভাবেই একটা সময় যখন সম্পর্কটা মোটামুটি শেষ পর্যায়ে আনতে যখন সক্ষম হয়ে যান তখনই স্বস্তির নিশ্বাস নেন।আমি একটা ঘটনা জানি, যেখানে একজন শাশুড়ি নিজের প্রেগন্যান্ট পুত্রবধূকে অতর্কিতে পেটের উপর জোর করে হাত রাখিয়ে বলেছিলেন, আমি তোমাকে তোমার বরকে নিয়ে যা যা বলবো তা তুমি ওকে বলতে পারবেনা, বাচ্চা ছুঁয়ে আছো মনে থাকে যেন।প্রেগন্যান্ট মেয়েকে ইমোশনালি ব্ল্যাকম্যাইল করে এই সুযোগে প্রতিনিয়ত ছেলের সম্পর্কে এমন এমন সব কথা শোনাতেন যার কারনে বউটি কাউকে কিছু না বললেও ক্রমাগত এসব শুনে নিজে চরম মানসিক বিপর্যস্ততার মধ্য পড়ে গেলে সেই শাশুড়ি আবার সুর পাল্টে একই মুখে গলা ফাটিয়ে নিজেই নিজের ছেলেকে বলতেন তোর বউ কি তোকে সন্দেহ করে?কি দেখে যে পাগল হয়েছিলি বাবা,জানিস তোকে নিয়ে কি কি বলেছে!!!তবে বাবা কি করবা,ধৈর্যধারণ তুইই কর,কষ্ট কর,কোন স্ত্রী এত বাজে কেমনে হয়…হায় সবই কপাল….
অন্যদিকে বউকে বলতেন, আমার সামনে কান্নার কি আছে,এই কথা আমি বলিনি,ঐ কথা আমি বলিনি বলে…দেখ তোমার হাজব্যান্ড তোমাকে নিয়ে বলা অন্যের কথা বিশ্বাস করে কেন?কই আমার হাজব্যান্ড তো কখনোই বিশ্বাস করেনা।
মাতৃসম একজন মানুষ এভাবে ডাবল গেইম কি করে খেলতে পারেন ভাবা যায়না। একটা সংসার বিনষ্ট করতে অগ্রণী ভূমিকা রেখে তার ঝুলিতে প্রাপ্তিটাইবা কি তা খুঁজে এখনো বের করতে পারিনি!!!
চলবে…