মোহজাল (পর্ব: দশ) - Women Words

মোহজাল (পর্ব: দশ)

অনন্যা হক

মাঝে মাঝে পথে ঘাটে দেখা হলে কদম আলী কে চাচা বলেই কথা বলতো মোমেনা।মনে পড়লে মোমেনার হাসি পায়।ভাবে কপালের কথা।কখন যে কি এসে জোটে কপালে।বয়সের অনেক পার্থক্য বলে আপনি থেকে তুমি করতে পারে না।

এই বাড়িতে কখনও তার আসা হয়নি,তাই তার প্রথম পক্ষের বউ কে দেখেনি আগে।শুনেছে কদম আলীর কাছেই, তার রুপ ছিল গুনও ছিল।এ কারণেই কদম আলী প্রায়ই তার কথা বলে।

সরল মনে বলে ফেলে,আসলে ভুলতে পারে না বলে মোমেনার কাছেই বলে।আজই আলমারি থেকে টাকা বের করতে গিয়ে বলে, বউ দেখ বড় বউ এর শাড়ি গুলো যে ভাবে ভাজ করে রেখে গেছে

সেভাবেই পড়ে আছে।

এগুলো না হয় তুমি ব্যবহার কর আস্তে আস্তে।

মোমেনা বলে, না,আপনি কি বলেন!তার মেয়েরা আসলি আমারে ধরবি, ওসবে আমি হাত দেব না।

আপনি আমারে নতুন শাড়ি কিনে দেন।এগুলো ওরা আসলি হিসাব চাবি।এমনি তে রাগ আপনার উপর।মার কাপড় আমার পরনে একেবারেই সহ্য করবিনে তারা আমি জানি।

-এটা অবশ্য ঠিক কথা কইছো তুমি।তাইলে কাপড় গুলো রোদে দিয়ে তুলে রাখ।,বৃষ্টি বাদলের পরে তারে দেখতাম রোদে দিয়ে যত্ন করে তুলে রাখতো।আমি তো খেয়াল করে বেশি কিছু কিনে দেইনি,ঐ ছেলে মেয়েরাই দিত।এগুলো তার অতি শখের জিনিস ছিল।

মোমেনার এবার মনে মনে একটু রাগ হয়।মনে আছে থাক,তাই আমার সামনে এত বলার কি! বলে,আপনি এখন দোকানে যাচ্ছেন না?

-হ।

-আমি একটা কথা কই, অনেক দিন ধরে কব কব করেও কওয়া হয় না।আপনি একটা বাক্স কিনে আনবেন।আমার কাপড় গুলো আর কতদিন এমন গড়াগড়ি খাবে? এগুলো রোদে দিয়ে বাক্স তে ভরে রাখি।মেয়ে,বউ রা আসলি যা করে করুক।

আর এই আলমারি তে আমি কাপড় রাখি।সে তো চলেই গেছে।আমার তো জায়গা দরকার।কতদিন আর আদাড়ে বাদাড়ে রাখবেন?

-কি বল তুমি, আদাড়ে কই আছ তুমি?কদম আলী ভ্রু কুঁচকে তাকায়।

এই প্রথম মোমেনা এমন বাঁকা করে কথা বললো।কদম আলীর মনের ভেতরে একটা খটকা লাগে।ভাল লাগে না কথা টা শুনতে।

আলমারি খালি করতে বলায় ভয় পায় সে।এটা মরিয়ম বহু দিন ধরে একটু একটু করে টাকা গুছিয়ে রাখা টাকার সাথে ছেলের দেয়া কিছু টাকা যোগ করে বানিয়েছিল।

অনেক দিন কদম আলী কে বলার পরেও সে গরজ দেয়নি বলে রাগ ছিল তার।কদম আলী বলতো,ট্রান্কে রাখ কাপড়।কিন্তু তার খুব শখ ছিল একটা আলমারির।শেষ পর্যন্ত বানিয়ে ছাড়ে,তাও খুব বেশি দিন আগে না।

এখন তো মহা ফাপড়ে পড়ে গেল।ছেলে মেয়েরা সহজে ছাড়বে না জানলে।একদম তুলকালাম বাঁধিয়ে ছাড়বে।

কদম আলী নরম স্বরে বলে, কেন,তোমার কি এত কাপড় যে জায়গার অভাব হচ্ছে? আলনা আর বাক্স মিলায় রাখ না।এই টা আমি খালি করতে দিতে পারবো না।

কেন আপনি কারে ভয় পান? সে কি আসে আপনার ঘাড়ের উপর দাঁড়ায় আছে নাকি?

এসব বাজে কথা বল কেন?

এ তো আমার দেয়া না,তার ছেলের সাথে যুক্তি করে বানানো।

তারা একবার আসে ঘুরে যাক,তারপর যা হয় দেখা যাবি।আমি বাইরে যাই,দেরী হয়ে যাচ্ছে।

কদম আলী ঘর থেকে নেমে বাইরে বের হয়ে যায়।আসলেই কদম আলীর মনে মরিয়মের জন্য অনেক মায়া।এমন কম দেখা যায়।মরিয়ম তার সাথে এমন ছিল যে তাকে ভুলে যাওয়া বেশ কঠিন।সে তার সংসার টাকে তিল তিল করে গুছিয়ে আজ এখানে দাঁড় করিয়ে দিয়ে গিয়েছে।

কদম আলী বিপাকে পড়ে বিয়ে করলেও মোমেনা কে মরিয়মের

জায়গায় বসাতে পারে না।মোমেনার সাথে যেন তার শুধু প্রয়োজনের সম্পর্ক।সারা বাড়ি তে মোমেনা, তার সব কাজে মোমেনা কিন্তু তাও যেন সব জায়গায় থেকেও নেই।কদম আলী তার চার ছেলে মেয়ের মা কে কিভাবে মন থেকে সরাবে,এই সংসার থেকে সরাবে, এমন কোন পথ খোলা পায় না।

মনে করছিল একটা বিয়ে করলে বোধহয় সব ঠিক হয়ে যাবে নতুন মানুষের সঙ্গ পেয়ে।কিন্তু দিন দিন টের পায়, এত সহজ নয়।আরও

নির্জীব হয়ে যাচ্ছে ছেলে মেয়ে গুলো কে অনেক দিন না দেখে।

ফোনেও কথা বলে না তারা।

কদম আলীর সুখ ধরা দিয়েও দেয় না।কাজ চলে,সংসার চলে,কিন্তু মনের ভেতর চলে নানা রকম ভাঙা গড়ার খেলা।

মোমেনা একটা পাকা বুদ্ধির নারী।সেও ধীরে ধীরে তার জায়গা শক্ত করার কৌশল আঁটতে থাকে।কদম আলীর এখন এদিকে যাওয়ার পথ নেই, ওদিকে যাওয়ার পথও পায় না।আট মাস হলো

মোমেনা এ সংসারে এসেছে।মাঝে মাঝে গিয়ে ছেলে দের দেখে আসে।কদম আলীর কাছ থেকে কিছু টাকা পয়সাও তাদের জন্য নেয়।মাঝে মাঝে চাল, ডাল, আটা এসবও দেয়।

তবুও সংসারের সচ্ছলতার ভেতরে তার লোভ টা একটু করে বাড়তে থাকে, চাহিদা খুলতে থাকে।এতটুকু তে মনস্থির রাখতে পারে না।

এখন সে মনে মনে রাজুর জায়গায় নিজের ছেলে কে বসাতে চায়।

ভাবে প্রায়ই একটা কে আনলে তো আর একজন একা হয়ে যাবে।

তাই পরে আস্তে ধীরে আর একজন কে আনবে গরু ছাগল দেখার জন্য।কতদিন আর কদম আলী না করবে!

সব কাজই তো তার উপর নির্ভর করে।

আজ মুখের উপর না করে চলে গেল।সেও কিছু বলেনি ছেলের কথা বলার জন্য।এত গুলো মানুষের সাথে পারতে হলে জায়গা টা আরো শক্ত হতে হবে,সে বুদ্ধি তার আছে।ঘর ভেঙে ভেঙে মন হয়ে গিয়েছে শক্ত পাহাড়ের মত।এখন সংসারের এসব খুঁটিনাটি বুদ্ধি তার যথেষ্ট পাকা।

কাজ করে আর যত বুদ্ধি মাথায় খেলতে থাকে।মন খুলে কদম আলী কে সব বলে না।

নতুন বিয়ে, নতুন মানুষের রেশ কেটে যাচ্ছে দিন দিন।সংসারের মোহে বিয়ে করেছিল,এখন সাংসারিক হিসাব নিকাশে মন গড়াগড়ি খায় শুধু।

চলবে…

আগের পর্ব পড়তে ক্লিক করুন

মোহজাল (পর্ব: নয়)