মেলবোর্নে বিদেশী শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় আটক ১ - Women Words

মেলবোর্নে বিদেশী শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় আটক ১

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে ইসরায়েলী শিক্ষার্থী আইয়া মাসারউই হত্যাকান্ডের সাথে জড়িত থাকার অভিযোগে ২০ বছর বয়সী এক তরুণকে আটক করেছে ভিক্টোরিয়া পুলিশ। 

পুলিশ জানিয়েছে, শুক্রবার সকালে স্থানীয় পুলিশ ও হত্যা তদন্তকারী গোয়েন্দাদের একটি যৌথ অভিযানে গ্রিনসবোরো থেকে ওই ব্যক্তিকে আটক করা হয়।

জানা যায়, মঙ্গলবার গভীর রাতে বোনের সঙ্গে ফোনে কথা বলছিলেন ২১ বছরের আইয়া। ওপাশ থেকে তাঁর বোন আইয়ার ফোনটি হঠাৎ পড়ে যাওয়ার শব্দ শুনতে পান। একটি কণ্ঠস্বরও শোনেন। এরপর থেকে আইয়ার আর কোনো সাড়া নেই। পরদিন সকালে পুলিশের কাছে আইয়ার খোঁজ নিতে গিয়ে তিনি স্তম্ভিত। জানতে পারেন, আইয়ার মরদেহ একটি শপিং সেন্টারের বাইরে পড়ে আছে। আইয়াকে কেউ হত্যা করেছে। পুলিশের সন্দেহ, আইয়া যৌন সহিংসতার শিকার হয়ে থাকতে পারেন।

আইয়া ছিলেন ফিলিস্তিনো আরব বংশোদ্ভূত ইসরায়েলি নাগরিক। আইয়া চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি ও চীনা ভাষা নিয়ে পড়াশোনা করতেন। শিক্ষার্থী বিনিময় প্রোগ্রামের আওতায় তিনি মেলবোর্নের লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হোন। গত ছয় মাস ধরে তিনি মেলবোর্নে বাস করছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাছেই ট্রিম হাউসে (চলমান বাড়ি) থাকতেন আইয়া। সেখানে যাওয়ার পথেই ফোনে বোনের সঙ্গে কথা হয়।

পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের পরিদর্শক অ্যান্ড্রু স্ট্যামপার বলেন, তাঁদের ধারণা, এলোপাতাড়ি হামলা চালিয়ে আইয়াকে হত্যা করা হয়েছে। তাঁর মরদেহের কাছে ১৯৮৬ লেখা একটি টুপি ও ধূসর রঙের একটি টি–শার্ট পাওয়া গেছে। এগুলো ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। পুলিশ সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হত্যার ব্যাপারে তথ্য সংগ্রহ করার চেষ্টা চালাচ্ছে।

আইয়া মাসারউই এর শোক ভারাক্রান্ত বাবা

মেয়ের মৃতদেহ শনাক্ত করতে গতকাল বৃহস্পতিবার আইয়ার বাবা সাঈদ মাসারউই অস্ট্রেলিয়া আসেন এবং যে স্থান থেকে লাশ উদ্ধার হরা হয়, সে জায়গাটি পরিদর্শন করেন। তিনি দেখতে পান, শোকার্ত ও প্রতিবাদী জনগণ আইয়ার উদ্ধেশ্যে শ্রদ্ধা জানাতে জায়গাটি ফুল দিয়ে ঢেকে দিয়েছে।   

আইয়ার বাবা সাঈদ সাংবাদিকদের জানান, পুলিশ, লা ট্রোব বিশ্ববিদ্যালয় এবং বৃহত্তর সম্প্রদায়ের কাছ থেকে তিনি ও তার পরিবার সাহায্য ও সমর্থন পাওয়ায় তাদের প্রতি তিনি কৃতজ্ঞ।

তিনি বলেন, আমি দুঙখিত, কারণ এটাই সর্বশেষ স্থান, যেখানে আমার মেয়ে ছিল। আইয়ার বাবা আরও বলেন, মেয়ের সাথে থাকার অনেক স্বপ্ন ছিল আমার কিন্তু এখন আর সম্ভব নয়… আমি চাই, আশা করি ও প্রার্থণা করি, যে সে এখন এই জায়গার চেয়ে আরও ভালো জায়গায় আছে, স্বর্গে আছে।

তিনি বলেন, সে সব সময় হাসতো, একগুঁয়ে ও চালাক নারী ছিল। পড়াশুনা করতে ও নতুন নতুন সংস্কৃতি অন্বেষণ করতে ভালোবাসত।  

মেলবোর্ন এজ পত্রিকার খবরে বলা হয়, আইয়াকে যৌন হয়রানি করার বিষয়টি পুলিশ উড়িয়ে দিচ্ছে না।

গত বছরের জুন মাসে মেলবোর্নেই কমেডিয়ার ইউরিডাইস ডিক্সনকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়। তিনিও শো শেষ করে হেঁটে বাড়ি ফিরছিলেন। এরপর থেকে নারীদের প্রতি সহিংসতার প্রতিবাদে বিক্ষোভ চলে। ২০১২ সালেও মেলবোর্নে আইরিশ নারী জিল মেঘারকে বাড়ি ফেরার সময় ধর্ষণ ও হত্যা করা হয়।

অস্ট্রেলিয়ার মানবাধিকার কমিশন বলছে, দেশে নারীদের প্রতি সহিংসতার ঘটনা বেড়ে গেছে। সরকারি হিসাবে ৫ জনে ১ জন নারী এবং ২০ জনে ১ জন পুরুষ যৌন সহিংসতার শিকার হন। অস্ট্রেলিয়ার দ্বিতীয় বড় শহর মেলবোর্ন। এখানকার বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিদেশ থেকে অনেক শিক্ষার্থী পড়তে আসেন। ২০১৭ সালের এক জরিপ বলছে, দুই লাখেরও বেশি শিক্ষার্থী মেলবোর্নের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেন।