জাতিসংঘের এক তৃতীয়াংশ কর্মীই যৌন হয়রানির শিকার - Women Words

জাতিসংঘের এক তৃতীয়াংশ কর্মীই যৌন হয়রানির শিকার

জাতিসংঘের এক তৃতীয়াংশ কর্মী ও চুক্তিতে কর্মরতরা যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন তাদের সহকর্মীদের কাছে। আর্ন্তজাতিক এই সংস্থার বিভিন্ন অফিসে অথবা ইভেন্টে গিয়ে নারী কর্মীরা অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শ অথবা অশালীন গল্পের বিষয়বস্তু হয়েছেন। মঙ্গলবার জাতিসংঘের প্রকাশিত এক জরিপের ফলাফলে এমন তথ্য উঠে এসেছে। গত বছরের নভেম্বরে জাতিসংঘ ও এর অন্যান্য সহযোগী সংস্থার প্রায় ৩০ হাজার ৩৬৪ কর্মীর ওপর এই অনলাইন জরিপ পরিচালনা করে বিশ্বের বৃহত্তম প্রফেশনাল পরিষেবা নেটওয়ার্ক ডিলয়েট।

জাতিসংঘের সব সংস্থার মোট ১৭ শতাংশ কর্মী এই জরিপে অংশ নেয়। এক চিঠিতে জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তনিও গুতেরেস কর্মীদের সাড়াদানের এই হারকে ‘কম মাঝারি’ মাত্রার বলে উল্লেখ করেছেন।

তিনি লিখেছেন, এই বিষয়টি আমাকে দুটি জিনিস সম্পর্কে ধারণা দিচ্ছে। এক. প্রকাশ্যে ও পূর্ণাঙ্গভাবে যৌন হয়রানির ব্যাপারে আলোচনা করতে সক্ষম হওয়ার আগে আমাদের আরো অনেকদূর যেতে হবে। দুই. এটাতে অবিশ্বাসের চলমান ধারণা, নিষ্ক্রিয়তা এবং দায়বদ্ধতার অভাবও আছে।

যৌন হয়রানি ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের আন্দোলন মি-টু নিয়ে যখন ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে ঠিক তখনই এই জরিপের ফল প্রকাশ করলো জাতিসংঘ।

জরিপের ফলাফলে বলা হয়েছে, জরিপে অংশ নেয়া জাতিসংঘের ২১ দশমিক ৭ শতাংশ কর্মী বলেছেন, তারা আপত্তিকর কৌতুক অথবা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ গল্পের বিষয়বস্তুতে পরিণত হয়েছেন, ১৪ দশমিক ২ শতাংশ তাদের শারীরিক গঠন, শরীর অথবা যৌন কার্যকলাপের ব্যাপারে আপত্তিকর মন্তব্য পেয়েছেন। ১৩ শতাংশ কর্মী যৌনতা নিয়ে আলোচনায় আগ্রহী না হওয়া সত্ত্বেও তাদের সেই আলোচনায় টেনে আনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

ডিলয়েটের এই জরিপ বলছে, ১০ দশমিক ৯ শতাংশ কর্মী বলেছেন, তারা অঙ্গভঙ্গি বা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ আচরণের শিকার হয়েছেন; যা বিব্রতকর এবং তাদের বিক্ষুব্ধ করে তুলেছে। এছাড়া ১০ দশমিক ১ শতাংশ কর্মীর শরীর এমনভাবে স্পর্শ করা হয়েছে; যা অনাকাঙ্ক্ষিত।

যৌন হয়রানির শিকার হয়েছেন যারা, তাদের অর্ধেকের বেশি বলেছেন, এসব হয়েছে অফিস পরিবেশে; অন্যদিকে, ১৭ দশমিক ১ শতাংশ বলেছেন, তাদের কাজ সম্পর্কিত সামাজিক ইভেন্টে যৌন হয়রানির মুখোমুখি হয়েছেন তারা। মার্কিন এই সংস্থার জরিপ বলছে, যৌন হয়রানিকারীদের তিনজনের মধ্যে দু’জনই পুরুষ।

তবে জরিপে অংশগ্রহণকারীদের এক তৃতীয়াংশ বলেছেন, যৌন হয়রানির শিকার হওয়ার পর তারা ব্যবস্থা নিয়েছেন। জরিপের গুরুতর এই প্রতিবেদন জাতিসংঘের কর্মক্ষেত্রে পরিবর্তন আনাকে জোরালো করে তুলছে বলে মন্তব্য করেছেন অ্যান্তনিও গুতেরেস।

তিনি বলেছেন, সমতা, মর্যাদা এবং মানবাধিকারের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত একটি সংস্থা জাতিসংঘ। আমাদের অবশ্যই নেতৃত্বের পর্যায়ে অনুকরণীয় উদাহরণ ও মান তৈরি করতে হবে।