দুই স্কুলছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগ পাওয়া গেছে টাঙ্গাইলের মির্জাপুর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদের বিরুদ্ধে। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে কলেজের চারতলা ভবনের দু’তলার একটি কক্ষে আটকিয়ে তাদের শ্লীলতাহানী করা হয় বলে জানা গেছে।
কলেজটি পৌরসভার অন্তর্গত বাওয়ার কুমারজানি এলাকায় অবস্থিত।
এদিকে মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজগার হোসেন, পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোশারফ হোসেন ও উপপরিদর্শক (এসআই) মনিরুজ্জামান মুন্সি খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করে থানায় নিয়ে আসেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার হারুন অর রশিদকে প্রধান করে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মশিউর রহমান ও উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মিনু পারভীনকে সদস্য করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক জানিয়েছেন।
জানা গেছে, বৃস্পতিবার বেলা বারোটার দিকে ওই দুই স্কুলছাত্রীসহ কয়েকজন শিশু কলেজ মাঠে ব্যাডমিন্টন খেলতে যায়। এ সময় কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ ওই শিশুদের কলেজ ভবন দেখানোর কথা বলে ভেতরে নিয়ে যান। সেখানে তাদের বিস্কুট খাইয়ে ওই দুই স্কুল ছাত্রীকে তার কক্ষে রেখে সবাইকে বের করে দেন। ওই কুই স্কুল ছাত্রী ষষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়ে বলে জানা গেছে। পরে তাদের কক্ষে নিয়ে দরজা আটকিয়ে ওই স্কুল ছাত্রীদের জড়িয়ে ধরে শরীরের স্পর্শকাতর জায়গায় হাত দিতে থাকে এবং ঝাপটিয়ে ধরে। এ সময় তারা চিৎকার করলে জনৈক এক ছাত্রীর মা গেটের সামনে এগিয়ে গিয়ে তালা দেখতে পান। পরে তিনিও চিৎকার করলে অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ নিজেই লুঙ্গি পড়া অবস্থায় এসে গেটের তালা খুলে দেন। পরে দু’তলায় গিয়ে তার কক্ষ থেকে মেয়েদের উদ্ধার করেন।
খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন কলেজ মাঠে গিয়ে অধ্যক্ষকে গালিগালাজ করতে থাকে। এ সময় কলেজের পাশের বাড়ির বাসিন্দা ও কলেজের অফিস করনিক ইরশাদ আলী এসে অভিভাবকদের উপর উত্তেজিত হয়ে ওঠেন। কলেজ বন্ধ থাকলেও অধ্যক্ষ কলেজের ভেতরেই অবস্থান করছিলেন। ওই দুই স্কুল ছাত্রীর বাড়ি মির্জাপুর পৌর এলাকার বাওয়ার কুমারজানি গ্রামে মহিলা কলেজ পাড়ায় বলে জানা গেছে।
বাওয়ার কুমারজানি গ্রামের বাসিন্দা মো. ছোবহান মিয়া, ফিরোজা বেগম, ঠান্ডু মিয়া ও জাহাঙ্গীর মিয়া জানান, কলেজের অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ কলেজের ছাত্রীদেরও বিভিন্ন ভাবে শ্লীলতাহানীর চেষ্টা করে। এ অভিযোগে অনেক অভিভাবক তাদের মেয়েদের অন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তি করেছেন বলে জানান।
স্থানীয় লোকজন অভিযোগ করেন, এর আগেও লতা নামের একটি মেয়েকে ডেকে নিয়ে কলেজ অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ তার কক্ষে আটকিয়ে শ্লীলতাহানী ঘটিয়েছিল।
দুই স্কুল ছাত্রীর মা স্বপ্না বেগম ও রাশেদা বেগম বলেন, খবর পেয়ে কলেজের অফিস করনিক ইরশাদ আলী কলেজ চত্ত্বরে এসে তাদের বিভিন্ন ভাবে ভয়ভীতি দেখান এবং অধ্যক্ষ সরকারি লোক তোমরা তাকে কিছুই করতে পারবা না বলে হুমকি দেন। তারা মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেকের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন বলে জানান।
মির্জাপুর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মো. মোশারফ হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি সাংবাদিকদের জানান, প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
মির্জাপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. আজগর হোসেনের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে দুই স্কুল ছাত্রী ও অভিভাবকদের সঙ্গে কথা বলে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়েছে।
এ ব্যাপারে মির্জাপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আব্দুল মালেক সাংবাদিকদের বলেন, দুই স্কুল ছাত্রীকে শ্লীলতাহানীর অভিযোগে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গঠিত কমিটির তদন্তে অভিযোগ প্রমাণিত হলে অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সূত্র: কালের কন্ঠ