পরকীয়া নিয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের রায় ও কিছু কথা - Women Words

পরকীয়া নিয়ে ভারতের সুপ্রীম কোর্টের রায় ও কিছু কথা

তমিস্রা তিথি

পরকীয়া নিয়ে বেশ হুলুস্থুল হলো ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের রায়ে। পরকীয়া কি জানার আগে জানতে হবে মানুষের প্রবনতাকে, প্রায় সব সমাজবিজ্ঞানীরা স্বীকার করেছেন মানুষের প্রবণতা হলো বহুগামিতা। এখন বহুগামিতা ব্যাপার টা কি? বহুগামিতা মানে শুধুই যৌনতা নয় বা যৌনতা নির্ভর নয়। আদিম মানুষ দলবদ্ধ থেকেছে, তখন পরিবার প্রথার উদ্ভব হয়নি, মানুষের জীবন ছিলো প্রকৃতির আইনে চালিত। প্রকৃতি ও প্রবণতা তাকে যা বলেছে, সে তার ঐ প্রবনতা বা ইচ্ছাকে প্রাধান্য দিয়ে চলেছে। তারপর সম্পত্তির ধারণা বিকাশ লাভ করলো, সৃষ্টি হলো ট্রাইব বা কৌম, কৌমের অধিপতি তার সম্পত্তি নারীদেরকে রক্ষা করতেন! নারী তখন তার সবটুকু মর্যাদা হারিয়ে হয়ে গেলো সম্পত্তি। ধর্ম এসে নারীর শরীর কেন্দ্রিক সতীত্ব ধারণার জন্ম দিলো। নারীর ডানা কেটে তাকে খাঁচায় পুরে পুরুষ সমাজ, ধর্মের হর্তাকর্তা সবাই বেশ নিশ্চিন্ত হলেন, কিন্তু নিজেরা কেমন যেনো ‘ঘরকা মুরগী ডাল বরাবর’ এরকম হাপিয়ে উঠলেন, তাই তাদের মনোরঞ্জনের জন্য আসলেন বারবণিতারা, তারা কোথা থেকে আসলেন? তারা আসলেন দরিদ্র শ্রেণি থেকে। মন্দিরে পুত্র লাভের আশায় কন্যাকে দেবদাসী হিসেবে দান করা হতো, দেবদাসীরা দেবতাদের নেচে গেয়ে সন্তুষ্ট করতেন, আর শরীর দিয়ে সন্তুষ্ট করতেন পূজারী আর পুরোহিতদের। যজ্ঞের ঘোড়ার পাশাপাশি শয়ে শয়ে নারীদের দান করা হতো, পূজারীরা নিজের জন্য বেছে বেছে রেখে দিয়ে বাদবাকি দান করতেন প্রজাদের, রাজা খুশি, প্রজাও খুশি, দারুণ ব্যবস্থা। এরপর ব্রিটিশ আমলে সৈন্যদের ব্যারাকে সাপ্লাই দেয়া হতো ভারতীয় বারবণিতাদের, ফলাফল সিফিলিস রোগ এবং অ্যাংলো ইন্ডিয়ানদের জন্ম। এসব ঠেকাতে তখন এদেশে আসলেন ব্রিটিশ সুগন্ধী রমণীরা। অন্যদিকে মুসলমানদের মাঝে বিবি, বাঁদীএবং ঘেটু রাখারও চল ছিলো। হুমায়ূন আহমেদ ‘ঘেটুপুত্র কমলা’ সিনেমায় দেখিয়েছেন এই কাহিনী, বেশিদিন আগের কথা না। অভিজাত কন্যাদের বিয়ের সময় সাথে দাসী দেয়া হতো, যে দাসীরাও তাদের স্বামীদের যৌন চাহিদা পুরণ করতো। দাসীর গর্ভজাত সন্তানরা সম্পত্তির অধিকার পেতো না। এসব কিছু এই সমাজেরই গল্প! এ সমাজে বিভিন্ন ধর্মের প্রেরিত পুরুষদের জীবনী দেখুন কৃষ্ন বা নবী, তাদের জীবনে অসংখ্য নারী, অবারিত ভোগ। কিন্তু নারীর প্রবণতা কে স্বীকার করা হয়নি, যত যাই করা হোক নারী এবং পুরুষের বায়োকেমিক্যাল ডিফারেন্স খুব কম এবং জেনেটিক কোড অনুযায়ী তারা এক রকম হতে বাধ্য। ভারতীয় সুপ্রীম কোর্টের রায়ে বলা হয়েছে, কেউ কারো সম্পত্তি নয়, ব্যক্তিস্বাধীনতাকে স্বীকার করা হয়েছে। দাঁতে দাঁত চেপে সংসার টিকিয়ে রাখার চেয়ে হাসিমুখে মিউচুয়াল সেপারেশন করে আলাদা হয়ে যদি ভালো থাকা যায় তবে তাই থাকবে মানুষ, এটাই আদালত বলেছে।