কন্যা সন্তানেরা জাগো (পর্ব-দুই) - Women Words

কন্যা সন্তানেরা জাগো (পর্ব-দুই)

অনন্যা হক

এটা একটা স্বাভাবিক রীতিতে দাঁড়িয়ে গিয়েছে, পরিবারের ভেতরে ছেলে এবং মেয়েকে ব্যাবধানে রেখে বড় করা।অনেক সূক্ষ সূক্ষ বিষয় থাকে, যে গুলো ঠিক সামনে আনা যায় না, মেয়েরা অবিরত ফেস করতে থাকে, এবং একটা চাপা দুঃখ নিয়ে বড় হতে থাকে। এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তারা মুখ ফুটে বলে না এসব অনাচারের কথা, কিন্তু সন্মানে আঘাত লাগতে থাকে।

ক্ষুদ্র পরিসর থেকে শুরু করে, বড় পরিসর, সব জায়গাতেই এই বৈষম্য দেখা যায়।

সব চেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, তারা বাবা, চাচাদের থেকে, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, এই নারী সমাজ দিয়েই বেশি অবহেলিত হয়। যারা ব্যতিক্রম, এই মনোভাব থেকে বের হয়ে এসেছে, তাদেরকে শ্রদ্ধার সাথে আলাদা করে রাখছি।

বড় বড় বিষয়গুলো আইন ও রেওয়াজে রুপ দিয়েছিল পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, তাদের নিজেদের স্বার্থে। আর মা, চাচী,খালা, ফুফু গোত্রের নারীরাও আর কিছু না মানুক, এই ব্যাপার গুলো তে খুবই সোচ্চার। অনেক সময় দেখা যায়, বাবারা পাল্টাতে চাইলেও এইসব নারীরা কঠিন হাতে লাগাম টেনে ধরছে।

আজকাল কিছু বাবা, চাচা, ভাইরা, যারা নির্লোভ, সুদূরপ্রসারী দৃষ্টিভঙ্গি এবংসত্যিকার অর্থে কন্যা সন্তানকে ভালবাসে, তারা সফল হচ্ছে এ ব্যপারে, যদি দৃঢ় চিত্তের হয়।

আমরা কোন ভাবেই বুঝতে পারি না, একই গর্ভের সন্তান দুই পাল্লায় কিভাবে মাপা যায়।একই রক্ত মাংসের শরীর, মন, মেধা সব এক, শুধু আকৃতি গত পার্থক্যের জন্য এই বিভেদের দেয়াল?

এদের স্বার্থ, দৃষ্টিভঙ্গি, শিক্ষা, অন্ধত্ব, হিসাব, কোথায় সমস্যা? মেয়ে সন্তানের প্রতি, তাদের কিসের এত বিরাগ!!

অথচ এই মমতাময়ী সন্তানেরা, তাদের ঘর সংসারের গোচরে, অগোচরে, বাবা, মা, ভাই বোনদের প্রতি  অনেক যত্নশীল এবং দায়িত্ব পরায়ণ থাকে ।

একটা মেয়ে সম্পদশালী হলে, তার একটা অবস্থান তৈরি হয়। জামাইয়েরা তাকে অবহেলা করতে দুইবার চিন্তা করবে। অনেক মেয়েই শিক্ষিত হলেও, সংসার, বাচ্চা, পরিস্থিতির কারণে হয়তো চাকরি করতে পারে না।

আর একটা ছেলে সম্পদশালী হলে, তার টাকায় যখন একটা  অন্য বাড়ির মেয়ে ভোগ, বিলাসিতা করে, তখন  এই মাতৃসম পর্যায়ের নারীদের খুব একটা গায়ে লাগে না। শুধু ছেলের বউ বলে তখন তারা  উদার মনোভাব সম্পন্ন রুপ ধারণ করে।

একটা মেয়ের শক্ত  অবস্থান যে কোন অনুভূতিশীল মায়ের কাম্য হওয়াটা বাঞ্ছনীয়। আসলে নারীদের প্রতিপক্ষের কোন অভাব নেই।যেন খুব সুচারু রুপে, কোন অজানা কারণে, প্রতি পদে পদে, এই প্রতিবন্ধকতার সিঁড়ি সাজিয়ে রাখা হয়েছে। যাও মেয়ে, তুমি সিঁড়িগুলো ভাঙতে ভাঙতে যাও, পথ মসৃণ করতে, তোমার যে অশেষ দায়!  

এরকম উদাহরণ ঘরে ঘরে আছে। এরকমও হয়, ভাই,ভাবি ভাল না হলে, কন্যা সন্তান তার বাবার ভিটে মাটিতে পাড়া দিতে পর্যন্ত  সুযোগ পায় না।আমি খুব কাছে থেকে  এমন পরিবার দেখেছি য়ে বাবা মারা গিয়েছে, মা এবং ভাইয়েরা মিলে সব বোনগুলোকে ভিটেমাটি ছাড়া করেছে।

বিচার এমন হতে পারে না, যা কিনা সব মেয়েদের বিরুদ্ধে যায় !,! তাই তো সময় এবং প্রকৃতির কি নির্মম প্রতিশোধ, এইসব জুলুমের বিরুদ্ধে!!, 

আজকাল মানুষ একটা দুইটা করে সন্তান নেয়, জীবনের সুবিধা বিবেচনা করে। প্রায় ঘরেই দেখা যায়, একটা, দুইটা, তিনটা করে মেয়ে।কত সুন্দর করে, শক্ত  অবস্থান তৈরি করে, প্রতিষ্ঠিত হয়ে উঠছে, ছেলেদের থেকে কোন কিছুতেই কম নয়।

অনেক পরিবারে দেখতে পাচ্ছি, একটাও ছেলে সন্তান নেই। এবার তোমরা বিভেদের দেয়াল তৈরি কর তো! কার সাথে কার কার করবে? বাধ্য হয়ে সন্মান  আর ভালবাসা দেবে?

কি নির্মম পরিহাস ! কষ্ট  এবং  অপমান গুলো যেন আমাদেরকে  আরও বলিষ্ঠ হতে সাহায্য করছে।

তাই এই যুগের, আজকের নারীদের বলছি, গভীর ভাবে ভেবে দেখুন, কোন ভুল করবেন না।যেটা নিজের সাথে ভুল হয়েছে, সেখান থেকে শিক্ষা নিন। জীবনটা ক্ষনিকের, আজীবনের জন্যে নয়।আমরা চোখ বুজলেই সব শেষ।ভাবতে হবে এই জীবন সমুদ্রে আমাদের সন্তানেরা কেমন থাকবে।

আপনার কন্যা সন্তান যার হাত ধরে এই জীবন সমুদ্র পাড়ি দেবে, সেটা যে আজীবন মসৃণ হবে, এরকম কোন

গ্যারান্টি নেই।বার বার ভাবুন, আন্তরিক ভাবে ভাবুন।ছেলের পাশাপাশি কন্যা সন্তানের অবস্থান শক্ত করুন।

নিজেকে সন্মান করুন, সঠিক ভাবে ভালবাসুন, তাদেরকে আন্তরিক ভাবে ভালবাসুন।

 

এই লেখার প্রথম অংশ

কন্যা সন্তানেরা জাগো (পর্ব-এক)