স্মৃতিতে ঈদ... - Women Words

স্মৃতিতে ঈদ…

রোমেনা লেইস

অদ্ভুত কুয়াশা ঢাকা ভোরে ঘুম থেকে ওঠে পুকুর ঘাটে চলে যেতাম আব্বার সাথে।আব্বা বলতেন পুকুরের পানি ঠান্ডা না। সত্যি কেমন যেন হালকা হালকা ধোঁয়া উঠতো।তখনো চারদিকে আঁধার ।শুকতারাটা চকচক করতো।হিম হিম কু্য়াশার চাদরে মোড়ানো শহর তখনো ঘুমিয়ে। ডুব দেয়ার পর আর ঠান্ডা লাগতো না। গোসল করে এসে ঈদের জামা-জুতা পরতাম।আব্বা ভাইকে নিয়ে ঈদগায় চলে যেতেন।আর আমি আর আমার ছোটবোন বাসার সামনের মাঠে দাঁড়িয়ে থাকতাম।আর আমাদের হাতে আব্বা দিয়ে যেতেন ব্যাংক থেকে আনা এক টাকার নোট।আমরা সেগুলো মানুষদের দিতাম, যারা এসে হাত পাততো। দেখতাম শহরের সব মানুষ সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে মসজিদে আসছেন।আমার বড়বোন ঘর গুছিয়ে, টেবিলে সব নাস্তা সাজিয়ে আম্মার সাথে সেজেগুজে রেডি হতো। আম্মা আমাদের সব বোনকে সোনার চেন, আংটি, চুড়ি পরিয়ে দিতেন। ঈদের দিন নাকি এসব পরতে হয়।

ঈদের দিন আমাদের বাসাটা টিপটপ সাজানো হতো।আমাদের বাসা থেকে ঈদগাহ পঞ্চাশ গজ দূরে।শৈশবে দেখতাম সবাই সাদা পাজামা পাঞ্জাবি পরে ঈদের নামাজ পড়তে আসতেন।তখন রঙিন কাপড় কেউই ঈদের দিন সকালে পরতো না।সাদা ঢেউ রুকু থেকে সেজদায় যাচ্ছে দেখতাম । আব্বা ফিরে আসলে আমরা আব্বা-আম্মাকে সালাম করতাম।আব্বা আমাদের সালামি দিতেন।আমাদের ছেলেবেলা থেকে বড়বেলা পর্যন্ত আব্বা-আম্মার কাছেই শুধু সালামি পেতাম। আমাদের আরেকটা কাজ ছিলো-পাড়ার হিন্দু ও খ্রীষ্টান ধর্মাবলম্বীদের বাসায় গিয়ে আমাদের বাসায় আসার জন্য দাওয়াত দিয়ে আসতাম। বিকালে আসতো সিপি,আভাদি,অর্পা,নীতা,গৌতম , টিঙ্কু জয়ারা।

রমজানের শেষের দিকে আরতি মাসি, শান্তি মাসি,অক্ষয় মিনিস্টার কাকুর বাসা থেকে ইফতার আসত।পাঁচ বাটির টিফিন বক্স ভর্তি মজার মজার ইফতার। এরমধ্যে আরতিমাসির বাসার ইফতার আমার সবচেয়ে প্রিয় ছিলো। দুধের সন্দেশ এক বাক্স।নারকেলের বরফি এক বাক্স ।ছানার মালপোয়া এক বাক্স ।আলুর সিঙারা।লবঙ্গ এক বাক্স ।আর নারকেলের পুলি কখনো আলুর কালোজাম।ইশ কত্ত যে মজা। ঈদের দিন নামাজের পরপরই আমার বান্ধবীরা আসতো।সন্দেশ , পুডিং , শেমাই, খেয়ে তারপর আমরা বেরিয়ে পড়তাম বন্ধুদের বাসায় ঘুরতে।ছোট শহর।প্রজাপতির মতো রঙিন পাখা মেলে কলকল করে ঘুরে ফিরে আসতাম বাসায়। আব্বার নির্দেশে দুপুরে সবাই আমাদের বাসায় খেতে হতো।আম্মার রান্না করা পোলাও মাংস ,কোরমা,ফিরনী খেয়ে বন্ধুরা ঘরে ফিরে যেতো ঈদের আনন্দ নিয়ে ।ঈদ শেষ হয়ে যাচ্ছে, তাই আমাদের মন বিষন্ন হয়ে যেতো ঈদের দিন সন্ধ্যায়।আবার বছর ঘুরে ঈদ আসবে।ঈদের অপেক্ষায় থাকি বিষন্নতা বুকে চেপে। ঈদের নতুন জামার ঘ্রাণ আর সারাদিনের ঈদ স্মৃতি নিয়ে বিছানায় যাই। ঈদের স্বপ্ন দেখি ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে।