ছোটবেলার নাচের দিদিটা! - Women Words

ছোটবেলার নাচের দিদিটা!

ফাহমিদা ফাম্মী
ছোট বেলা থেকেই সাজুনি বুড়ি ছিলাম খুব। মুখে ক্রিম পাউডার মেখে, চুরি আলতা মালায় বউ সাজতাম মাঝে মাঝেই… টিভিতে নাচের অনুষ্ঠানে দেখতাম মেয়েরা অনেক সাজুগুজু করে নাচ করতো। কানে দুল অথবা বাউটি পায়ে রুমঝুম করা নুপুরে বেশ লাগতো। তখন একদিন পাশের বাসার একটা মেয়ে বয়সে আমার ছোট, নাচ শিখতে ভর্তি হল, আমিও সুযোগ পেয়ে গেলাম। বাবাকে বললাম বাবা নাচ শিখবো! বাবা মুখের উপর কখনো না করেন নি সেদিন ও করলেন না তবে আকারে ইঙ্গিতে বুঝিয়ে দিলেন, তিনি তেমন ভাবে রাজী না। পরে শুরু হল অনশন কার্যক্রম। খাওয়া বাদ দিয়ে বারান্দায় বসে গেলাম, হয় নাচে ভর্তি করবে নয়ত নো খাওয়া দাওয়া! বাবা কি মেয়েকে না খাইয়ে বসে থাকতে দেখতে পারে! ভর্তি করলেন নাচে।
নাচের ক্লাসে এক দিদি নাচ শেখাতেন। নাম সুবর্ণা সাহা। তখন আমি অনেক ছোট ক্লাস থ্রিতে পড়ি! দিদিকে তাই অনেক বড় মনে হত! অনেক কড়া স্বভাবের ছিলেন আমার দিদিটা! একটু দুষ্টামি করলেই চোখ রাঙাতেন খুব, কিন্তু আমরাও ছিলাম বিচ্ছুর দল। সবচেয়ে বেশি বকা দিতেন যখন দেখতেন জুতা পড়ে ঘুঙুর পড়েছি। প্রোগ্রামে যখন সাজুগুজু করে আসতাম এইটা সেইটা ভুল ধরতেন, সত্যি বলতে কি তখন অনেক বিরক্ত লাগতো দিদিটা এত বকা দেয় কেন! সময় যেতে লাগলো- আস্তে আস্তে দিদির সমান হতে লাগলাম লম্বায়। এতই লম্বা হলাম যে নাচের ক্লাসে আমার বয়সের মেয়েরা এত লম্বা ছিল না কেউ! স্বভাবতই জুই দি সুবর্ণাদির রো তে নাচ করতে দিতেন। একটার পর একটা প্রোগ্রাম করতে লাগলাম দিদিটার সাথে। মিশতে মিশতে খুব কাছের একটা মানুষ কখন যে হয়ে গেলেন বুঝতে পারলাম না। এভাবে দিন যেতে লাগলো। একদিন সন্ধ্যায় হঠাৎ একটা কল আসলো… ধরলাম ধরতেই কেউ একজন বলে উঠলেন ফাম্মী শুনছো সুবর্ণাদি নাকি আত্মহত্যা করেছেন? আমি বললাম ধুর! কি বল এই সব। কলটা কেটেই সুবর্ণাদির নাম্বারে কল দিলাম। নাম্বারটা অফ পেলাম, অন্য একজনের মাধ্যমে জানতে পারলাম সত্য ছিল কথাটা। আমার জীবনে শোনা এই পর্যন্ত সবচেয়ে রুঢ় শব্দ … চুপ হয়ে গেলাম … কয়েক ফোটা কান্না গড়িয়ে পড়লো চোখ থেকে… এই নিয়ে দুটি আত্মহত্যা দেখলাম একটা খুব কাছের বান্ধবীর আরেকটা আমার নাচের দিদিটার। জানিনা দিদিটা কেন চলে গেলেন আমাদের ছেড়ে, আমরা সবাই আছি দিদিটা নাই… হয়তো খুব বড় কোন কষ্টে আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন।।
জীবনে কষ্ট আসবেই খুব কষ্টের সময়টাতে দাঁতে দাঁত চেপে বেঁচে থাকতে পারলেই ভালো সময় আসে,অবশ্যই আসে। জীবনটাকে একটু সুযোগ দিতে হয়, বেঁচে থাকতে হয়! একটাই তো জীবন এভাবে কেন শেষ হয়ে যাবে… এভাবে শেষ হয়ে যাওয়াকে তো জীবন বলে না… এভাবে শেষ হয়ে যাওয়াকে যা বলে তাকে আমি আর যাই বলি জীবন বলি না…।