তাসমিয়া শান্তার অসম্পূর্ণ গল্প - Women Words

তাসমিয়া শান্তার অসম্পূর্ণ গল্প

ফেসবুক থেকে জানতে পারলাম তাসমিয়া শান্তা সুপ্তিকা নামের একটি মেয়ে আত্মহত্যা করেছে। মানুষ কেন আত্মহত্যা করে জানিনা। তবে মনটা ভীষণ খারাপ হয়ে যায় এরকম মৃত্যুতে। কেউ যেন কষ্টে লীন হয়ে আর হারিয়ে না যায়-এটাই কামনা করি।

ফেসবুক পোস্ট থেকে তাসমিয়া শান্তার একটি লেখা উইমেন ওয়ার্ডস  এর পাঠকদের জন্য তুলে দেয়া হল:

আমি খুব একটা অর্ণামেন্টস পরি না। নাকফুল, কানেরদুল, গলার মালা হাবিজাবি কিছুই পরিনা। তবে আমার দুইটা জিনিসে খুব দুর্বলতা..খুউব। এক আংটি আর দুই পায়েল। এই দুইটা অর্ণামেন্টস কেন জানিনা, খুব পছন্দ আমার। পায়েল সবসময় না পড়লেও, আংটি পড়ি।

সিএনজিতে বসে আছি আমি। আমার পাশে বসে আছে অর্ক, আমার প্রেমিক। আমার হাতে অনেক পছন্দের একটা আংটি। হাত মুঠো পাকিয়ে আংটিটার দিকে তাকিয়ে আছি আমি। আংটিটা সম্ভবত রবিউল মার্কেটের কোন একটা দোকান থেকে কেনা।
অর্ক আমাকে বললো, ‘আংটিটা তো সুন্দর! কবে কিনছো?’
আমি হাসতে হাসতে বললাম, অনেকদিন! সম্ভবত রোজার ঈদের আগে।
ও এটা শুনে আর কিছু বললো না। চুপ করে রইলো।

কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আমিই বললাম, আমাকে একটা আংটি কিনে দিবা, হুম?
ও কেমন যেন, হঠাৎ করে খুব কঠিন হয়ে গেল।
চোখ-মুখ শক্ত করে বললো, ‘না, আমি কখনো তোমাকে আংটি কিনে দেবো না। কক্ষনো না। এমনকি আমাদের বিয়ের সময়ও না। তুমি আমার প্রথম আংটি ভেঙে ফেলছিলা, মনে আছে আমার’
আমার বুকের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। কেমন যেন অদ্ভুত রকমের কষ্ট হচ্ছিল। ও আমার সাথে এমন করে কথা বললো কেন?
আমি প্রচন্ড কষ্টে আর অভিমানে, হাতের আঙুল থেকে আংটিটা খুলে চলন্ত সিএনজির মধ্যে থেকে ছুড়ে ফেললাম বাইরে। সেই সাথে বললাম, ‘আমি আর কখনো আংটি পড়বো না।’
আচ্ছা, মানুষের অভিমানও কি এত কঠিন হয় কখনো, আমার মত?’
অর্ক আমার দিকে কিংকর্তব্যবিমূঢ়ের মত হা করে তাকিয়ে রইলো। তারপর খুব অবাক হবার মত মুখভঙ্গি করে বললো, ‘আংটিটা ফেলে দিলে তুমি?’
আমি আস্তে করে বললাম, ‘হ্যাঁ’
তারপর ওর কাধে মাথা দিয়ে ঘুমের ভান করে বললাম, ‘আমার খুব ঘুম পাচ্ছে’
.
বছর তিনেক আগের কথা। আমাদের প্রেমের বয়স প্রায় বছর গড়িয়ে যাচ্ছে। আমরা তখন দু’জনই ছোট। সবে স্কুলের গন্ডি পার করেছি।
আমাদের তুমুল প্রেম চলছিল। প্রচন্ড আবেগ।
ওই বয়সে যা হয় আরকি…
ছেলেটা এমনিতে অগোছালো টাইপ..বোকাসোকা।
ছুটির সময়গুলোতে সারাদিন বাসার সামনে দিয়ে ঘুরঘুর করতো সাইকেল নিয়ে। একটু আধটু দেখা হতো। কখনো জানালা দিয়ে মুখ বের করে, কখনো রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে। কখনো দু-একটা গোলাপ ছুঁড়ে দিত। মাঝেমাঝে আবার সাহস করে এগিয়ে যেতাম। সাইকেলের হ্যান্ডেল ধরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দু-চারটা কথা বলতাম।
তারপর রাস্তায় পরিচিত কাউকে দেখলেই, দে ছুট…

এরমধ্যে আমার জন্মদিন এসে গেল।
ও আমার জন্মদিন নিয়ে খুব এক্সাইটেড। কিভাবে সেলিব্রেট করবে, কোথায় করবে, কত পাউন্ডের কেক অর্ডার করবে, কে কে থাকবে ইত্যাদি। প্রেম হওয়ার পর প্রথম জন্মদিন বলে কথা! এক্সাইটমেন্ট একটু বেশিই।
এরপরে সব প্লান ভেস্তে দিয়ে জন্মদিনের আগে হঠাৎ করেই অসুস্থ হয়ে গেলাম আমি। ওই অসুস্থ শরীর নিয়ে আম্মু আমাকে আর বের হতে দিলনা।
সে আগের মতই বাড়ির সামনে দিয়ে সাইকেল নিয়ে ঘুরতেছিল। সন্ধ্যার পর মোবাইলে ম্যাসেজ দিয়ে জানালো, আমি যেন একটু রাস্তায় যাই!
আমি সাথে আরেকজনকে নিয়ে রাস্তায় গেলাম।
ও সাইকেল থামিয়ে দাঁড়াল। আমার বাম হাতটা টেনে নিয়ে একটা আংটি পড়িয়ে দিলো। তারপর কিছু বুঝে উঠার আগেই, ওর দুইহাত আমার দুই গালে রেখে টুপ করে একটা চুমু খেলো! এই চুমুর অনুভূতি ব্যাখ্যা করার মতন শব্দ নেই আমার অভিধানে।

আমাদের প্রেম হবার পরে ও আমাকে যা কিছু দিয়েছে, হোক সেটা গোলাপ অথবা সরিষা ফুল, আমি প্রত্যেকটা জিনিস খুব যত্ন করে রাখতাম, রাখি এখনো। এমনকি একটা গোলাপের পাঁপড়িও হারাতে দেইনি।

(গল্পটা অসম্পূর্ণ। শেষ করতে পারিনি। ডিলেট করতে ইচ্ছা করলো না। তাই এটুকুই পোস্ট করলাম)