কুষ্টিয়ায় হয়রানির শিকার মার্কিন নারী সাংবাদিক - Women Words

কুষ্টিয়ায় হয়রানির শিকার মার্কিন নারী সাংবাদিক

কুষ্টিয়ায় ছবি তোলার কাজে গিয়ে নিজের হোটেল রুমে রাতে হোটেল মালিকের হয়রানির শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন মার্কিন ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক অ্যালিসন জয়েস। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে রোববার রাত থেকে এমন একটি খবর দেখা যাচ্ছে। কুষ্টিয়া পুলিশ জানিয়েছে, জয়েসকে হয়রানি করার অভিযোগে গতকাল সোমবার দুপুরে ঐ হোটেলের মালিক বিশ্বনাথ সাহা বিশুকে আটক করা হয়েছে।

কিন্তু মার্চের ছয় তারিখ রাতে ঘটা ঘটনাটি এত পরে জানা যাচ্ছে কেন? কী হয়েছিল হোটেলে সেই রাতে?

ওয়াশিংটন পোস্ট, নিউ ইয়র্ক টাইমসের মত প্রতিষ্ঠানে ফ্রিল্যান্সার হিসেবে কাজ করেন জয়েস। সম্প্রতি বাংলাদেশের বাল্যবিবাহ নিয়ে কাজের অংশ হিসেবে গিয়েছিলেন কুষ্টিয়াতে। উঠেছিলেন শহরের থানাপাড়ার খেয়া আবাসিক হোটেলে।
Allison Joyce 2 Women wordsঅ্যালিসন জয়েস জানিয়েছেন, মার্চের ছয় তারিখ রাত সাড়ে বারোটার দিকে তিনি কক্ষের বাইরে হইচই শুনে দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন। এ সময় হোটেলের অফিস কক্ষ এবং হলওয়ে থেকে চিৎকার চেঁচামেচির শব্দ পেয়ে তিনি এগিয়ে গিয়ে তাদের শান্ত হতে বলেন। তখন হোটেলের মালিক মদ্যপ অবস্থায় তার কক্ষে এসে দরজায় দাড়িয়ে মিস জয়েসকে চিৎকার না করতে বলেন।

জয়েস বলন, হোটেল মালিক দরজা জুড়ে দাঁড়ানোয় দরজা বন্ধ করা যাচ্ছিল না। কয়েকবার বলার পর, মালিক সরে গেলে দরজা বন্ধ করে দেন তিনি। এরপর বাইরে থেকে দরজা ধাক্কানো হতে থাকে এবং বারবার জয়েসের কাছে ফোন আসতে থাকে। তিনি ফোন রিসিভ না করলে এক পর্যায়ে হোটেলে থাকা বিকল্প চাবি দিয়ে বাইরে থেকে দরজা খোলারও চেষ্টা করা হয় বলে অভিযোগ করেন জয়েস।

এরপর তিনি কুষ্টিয়ায় থাকা তার পরিচিত একজন সাংবাদিককে ফোন করলে, ঐ সাংবাদিক হোটেলে আসার পর আতংকিত জয়েস রাতেই হোটেল ছেড়ে বেরিয়ে যান। রাতে শহরের অন্য একটি হোটেলে গেলে তারা অ্যালিসন জয়েসকে জায়গা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর কুষ্টিয়ায় এক বেসরকারি সংস্থার অফিসে ওঠেন তিনি।

অভিযোগ করতে দেরির কারণ সম্পর্কে জানা গেছে, ছয় মার্চ রাতে ঐ ঘটনা ঘটলেও জয়েস ঢাকায় ফিরে মার্চের নয় তারিখে কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানান।

অভিযোগ করতে দেরির কারণ জানতে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানিয়েছেন, তার কাজের সময় খুব অল্প থাকায় তিনি অভিযোগ জানাতে যাননি। এছাড়া আইনি জটিলতা সাধারণত দীর্ঘ সময় নেয়, হয়ত সেসময় তিনি বাংলাদেশে থাকবেন না-এমন ভেবে তিনি সেসময় আনুষ্ঠানিকভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগ জানাননি।

মার্চের ছয় তারিখে তিনি ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। কিন্তু পরে বাংলাদেশে থাকা তার বন্ধুদের উৎসাহে মিস জয়েস প্রথমে ইমেইলে অভিযোগ করেন, যেটি তিনি পাঠান পুলিশ সুপারের কাছে। এরপর ১২ই মার্চ তার পক্ষে অভিযোগটি জেলা প্রশাসক এবং পুলিশ সুপারের কাছে হস্তান্তর করেন কুষ্টিয়ার একজন উদ্যোক্তা সুফি ফারুক ইবনে আবুবকর। এরপরই মূলত সক্রিয় হয় পুলিশ।

এদিকে, কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান জানিয়েছেন, ইমেইলে মিস জয়েসের করা অভিযোগটিকে জিডি হিসেবে গ্রহণ করেছে পুলিশ। সেই প্রেক্ষাপটে সোমবার দুপুরে হোটেলের মালিক বিশ্বনাথ সাহা বিশুকে আটক করা হয়েছে।

তাকে সোমবার আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে কারাগারে পাঠিয়েছেন বলে জানান পুলিশ সুপার।

সূত্র : বিবিসি