ধাত্রীরা শিখলেন : দক্ষতা দেখালেই নেতৃত্ব সম্ভব - Women Words

ধাত্রীরা শিখলেন : দক্ষতা দেখালেই নেতৃত্ব সম্ভব

মানসুরা হোসাইন, কোপেনহেগেন (ডেনমার্ক) থেকে
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ৪৬২ জন মিডওয়াইফ (ধাত্রী) প্রথমে তালিকাবদ্ধ হন। তারপর নানান পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে ৩১ দেশের ৩২ জন মিডওয়াইফ উপস্থিত হন ডেনমার্কের কোপেনহেগেনের বেলা সেন্টারে। দুই দিনব্যাপী তৃতীয় মিডওয়াইফারি (ধাত্রীবিদ্যা) সিম্পোজিয়ামের শেষ দিনে এই ৩২ জন দাঁড়িয়ে মা ও শিশুর জীবন বাঁচানোর অঙ্গীকার করলেন। আর এ কাজটি তাঁরা করবেন অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে। কেননা, এই দুই দিনে তাঁরা শিখেছেন কাজে দক্ষতা দেখাতে পারলেই নেতৃত্ব দেওয়া সম্ভব। আর সঠিকভাবে নেতৃত্ব দিতে পারলেই ধাত্রীবিদ্যাকে একটি আলাদা পেশা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার কাজটি এগিয়ে নিতে পারবেন।
জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিল (ইউএনএফপিএ), বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা, ইন্টারন্যাশনাল কনফেডারেশন অব মিডওয়াইভস, ড্যানিশ মিডওয়াইভস অ্যাসোসিয়েশন, নিউইয়র্কভিত্তিক বেসরকারি সংস্থা উইমেন ডেলিভারসহ বিভিন্ন সংগঠন এ সিম্পোজিয়ামের আয়োজন করে।
৩১ দেশের ৩২ জনের মধ্যে একজন হলেন বাংলাদেশের নার্সিং অ্যান্ড মিডওয়াইফারি প্রশিক্ষক সেন্ড্রা রুমি মধু। তিনি ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের মিডওয়াইফারি অ্যান্ড নার্সিং বিভাগে কাজ করছেন। সিম্পোজিয়াম শেষে তিনি প্রথম আলোকে বললেন, দেশের ধাত্রীরা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করার পরিবেশ পান, তা নিয়ে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে কাজ করবেন। দেশে এখনো সেভাবে কাজের পরিবেশ তৈরি হয়নি। পরিবেশ দিতে না পারলে ধাত্রীদের কর্মক্ষেত্রে ধরে রাখা যাবে না।
গতকাল সিম্পোজিয়ামের প্যানেল আলোচক ইউএনএফপিএর নির্বাহী পরিচালক বাবাটুন্ডে অসোতিমেহিন সরকার এবং নীতিনির্ধারকদের মনে করিয়ে দেন, মা ও শিশুর জীবন বাঁচানোর ক্ষেত্রে ধাত্রীরা একা কিছু করতে পারবেন না। পুরো স্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনাকে শক্তিশালী করতে হবে। নারী ও শিশুর জীবন বাঁচাতে সরকারের জবাবদিহি বাড়ানোর পাশাপাশি আইনি কাঠামোকেও শক্তিশালী করতে হবে।
সিম্পোজিয়াম শেষে মা ও শিশুর নিরাপত্তার বিষয়টি সরকারের অগ্রাধিকারের তালিকায় থাকলে তা কতটুকু কার্যকরী ভূমিকা রাখতে পারে, সেই গল্প শোনালেন দ্য ড্যানিশ অ্যাসোসিয়েশন অব মিডওয়াইভসের প্রেসিডেন্ট লিলিয়ান বন্ডো। নারী ও শিশুর সার্বিক অধিকার রক্ষাকারী বিশ্বের প্রথম পাঁচটি দেশের মধ্যে একটি দেশ হচ্ছে ডেনমার্ক। লিলিয়ান জানালেন, তাঁর দেশে বর্তমানে সন্তান জন্মের পর নারীরা নয় মাস মাতৃত্বকালীন ছুটি পাচ্ছেন। বাবারাও শুধু সন্তানের দেখভালের জন্য সুবিধামতো সময়ে ছুটি নিতে পারছেন। সন্তান বড় হচ্ছে বাবা-মায়ের কাছ থেকে সমান ভালোবাসা পেয়ে। সন্তানের বয়স এক বছর হলে দিবাযত্ন কেন্দ্রে রাখার সুযোগ করে দিচ্ছে মিউনিসিপালিটি। তার জন্য অর্থ ব্যয় করতে হলেও সেখানে নিরাপত্তার অভাব নেই। তাই দেশটির ৭০ শতাংশ নারীই বাইরে কাজ করতে পারছেন।
শুরু হলো উইমেন ডেলিভার কনফারেন্স
গতকাল বিকেলে বেলা সেন্টারেই বিশ্বের নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় পাঁচ হাজার প্রতিনিধি একসঙ্গে হয়ে নারী ও শিশুর স্বাস্থ্য বিষয়ে নজর বাড়ানোর কথা বললেন। আর এর মধ্য দিয়েই কোপেনহেগেনে শুরু হলো চতুর্থ বৈশ্বিক উইমেন ডেলিভারি কনফারেন্স। সম্মেলন চলবে ১৯ মে পর্যন্ত। এখানে বিশ্বের নানান দেশের প্রতিনিধি একত্র হয়ে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য বা এসডিজিতে নারীর যৌন ও প্রজনন স্বাস্থ্য অধিকার পূরণের ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জগুলো চিহ্নিত করবেন।
উইমেন ডেলিভার আয়োজিত এবারের চতুর্থ এ সম্মেলন আয়োজনে ডেনমার্ক সরকার, ইউএনএফপিএ, ইউএন-উইমেনসহ নানা সংস্থা ও সংগঠন সহায়তার হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
এবারের সম্মেলনে অন্যান্য প্রতিনিধির পাশাপাশি বাংলাদেশসহ ২৫টির বেশি দেশের মন্ত্রী এবং সাংসদেরা অংশ নিয়েছেন।

 

প্রথম আলোর সৌজন্যে