'সিনিয়র সিটিজেন’ হচ্ছে বার্বি - Women Words

‘সিনিয়র সিটিজেন’ হচ্ছে বার্বি

কয়েক দিন পরেই ষাট পেরোবেন তিনি। হ্যাঁ, ‘সিনিয়র সিটিজেন’ হচ্ছে দুনিয়ার সব থেকে জনপ্রিয় পুতুল— বার্বি। 

সেটা ১৯৫৯ সালের কথা।  ম্যাটেল সংস্থার অন্যতম কর্ণধার রুথ হ্যান্ডলার দেখতেন, তাঁর মেয়ে বারবারা যে সব পুতুল নিয়ে খেলে, সেগুলো সবই ‘বেবি ডল’, অর্থাৎ বাচ্চা বাচ্চা দেখতে পুতুল। রুথ খেয়াল করে দেখেন, ছোট্ট বারবারা মাঝেমধ্যেই কাগজের পুতুল বানিয়ে খেলছে, আর সেই সব পুতুল দেখতে একদমই বাচ্চা মেয়েদের মতো নয়, অনেকটাই বড় তারা। বারবারার সেই কাগুজে পুতুল থেকেই ‘প্রাপ্তবয়স্ক’ পুতুল বানানোর বুদ্ধি মাথায় আসে রুথের। মেয়ের নামের সঙ্গে মিলিয়েই পুতুলটির নাম রাখেন— বার্বি। পরে রুথ বলেছেন, তাঁর ধারণাই ছিল না, এত জনপ্রিয় হবে সেই পুতুল।

ঠিক কতটা জনপ্রিয়? ১৯৫৯ সালের ৯ মার্চ আমেরিকার এক পুতুল মেলায় অবতীর্ণ হওয়ার পরে একশো কোটির বেশি বার্বি বিক্রি হয়েছে পৃথিবী জুড়ে। প্রথম বছরেই বিক্রি হয় তিন লক্ষ পুতুল। এখন ১৫টি দেশে বছরে ৫৮ কোটি বার্বি বিক্রি হয় বলে ম্যাটেলের তরফে জানানো হয়েছে। বিজ্ঞাপন ও বিপণন গুরুদের মতে, সারা পৃথিবীতে সব থেকে পরিচিত যে তিনটি ব্র্যান্ড, তাদের মধ্যে রয়েছে বার্বি। বাকি দু’টি হল ম্যাকডোনাল্ডস ও কোকা কোলা!

ছ’দশকের এই পথ চলা অবশ্য আদপেই মসৃণ ছিল না। ম্যাটেল টয়েজ়ের ডিরেক্টর ন্যাথান বেনার্ডের বললেন, ‘‘রুথ যখন বার্বি তৈরি করেছিলেন, তখন তিনি ভেবেছিলেন এই পুতুল বাচ্চা মেয়েদের অন্য ভাবে জীবন যাপনের স্বপ্ন দেখাবে। বেবি ডল নিয়ে খেলার সময়ে বাচ্চা মেয়েরা শুধু মায়ের ভূমিকাতেই অভিনয় করতে পারত। অন্য দিকে, বাচ্চা ছেলেদের জন্য তখনও অনেক ধরনের পুতুল ছিল— মহাকাশচারী, বিমানচালক, ডাক্তার। নানা ধরনের বার্বি বানিয়ে মেয়েদের সামনেও বিভিন্ন রাস্তা খুলে দিতে চেয়েছিলেন রুথ। মেয়েরা যে শুধু মা নয়, নানা ভূমিকাতেই সফল হতে পারে, এই বার্তাটা সেই ১৯৫৯ সালেই দিয়েছিল বার্বি। ১৯৬৫ সালে, মানুষ চাঁদে পৌঁছনোর চার বছর আগেই, বাজারে চলে এসেছিল মহাকাশচারী বার্বি। ১৯৬৮ সালে প্রথম তৈরি হয় কৃষ্ণাঙ্গিনী বার্বি। বার্বি তাই সাড়ে এগারো ইঞ্চির একটি পুতুল নয়, একটি বৈপ্লবিক ধারণা।’’

নারীবাদীরা অবশ্য সে কথা মানতে নারাজ। তাঁরা মনে করেন, সরু কোমর, সংক্ষিপ্ত পোশাকের এই শ্বেতাঙ্গিনী ভুল শিক্ষা দেয় বাচ্চাদের। ‘সাফল্য ও স্বাধীনতা’র সঙ্গে ‘সুন্দরে’র এই সমীকরণের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছেন নারীবাদীরা। অনেকে আবার সোনালি চুল-নীল চোখের বার্বিকে বর্ণবৈষম্য দোষে দুষ্ট বলেও মনে করেছেন। তা সে বাজারে যতই কৃষ্ণাঙ্গিনী বার্বি থাকুক না কেন!

নানা সমালোচনার মুখে পড়ে নিজের চেহারা পাল্টেছে বার্বি। বয়সের না হোক, প্রজ্ঞার ছাপ পড়েছে তার শরীরে। আজকাল বাজারে কৃষ্ণাঙ্গিনী, পৃথুলা, খর্বকায়, কালো চুল, খয়েরি চুল, কোঁকড়া চুল, সোজা চুল— এ রকম নানা ধরনের বার্বি পাওয়া যায়। যথেষ্ট জনপ্রিয়ও সেগুলি। ম্যাটেল সংস্থার ভাইস প্রেসিডেন্ট লিসা ম্যাকনাইট জানিয়েছেন, এখন যত বার্বি বিক্রি হয়, তার ৫৫ শতাংশের সোনালি চুল বা নীল চোখ নেই। 

বছর কয়েক আগে প্রথম যখন কিঞ্চিত গোলগাল ‘কার্ভি’ বার্বি বাজারে আসে, তখন অনেকে মন্তব্য করেছিলেন, বয়সের মেদ তা হলে এত দিনে গায়ে লাগল বার্বির! পুতুল নির্মাতাকারী সংস্থার পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, খুব সচেতন ভাবেই তাঁরা বার্বিকে স্বাস্থ্যবতী বানাচ্ছেন। কারণ তাঁরা চান না যে, ‘বার্বির মতো রোগা’ হওয়ার দৌড়ে বাচ্চা মেয়েরা ‘অ্যানোরেক্সিয়া’ বা অন্য কোনও অনাহারজনিত রোগের শিকার হয়। 

সিনিয়র সিটিজ়েন হলেও আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে বার্বি বেশ দড়। তার নিজস্ব টুইটার ও ইনস্টাগ্রাম অ্যাকাউন্ট রয়েছে। ফলোয়ারের সংখ্যা কুড়ি লক্ষেরও বেশি। 

কিন্তু ষাট পেরিয়েও কি ‘একা’ই থাকবে বার্বি? ঘর বাঁধবে না? ছেলেপিলে হবে না? না, জানালেন লিসা। বললেন, ‘‘বাচ্চা মেয়েদের উড়তে শেখায় বার্বি। তার কোনও বন্ধন নেই। পরিবারেরও না।’’  

সূত্র: আনন্দবাজার