‘সালোয়ারের উপর গেঞ্জি পরা নিষেধ!’  - Women Words

‘সালোয়ারের উপর গেঞ্জি পরা নিষেধ!’ 

শাকিলা রূম্পা 
কী? শিরোনাম দেখে চমকে গেলেন তো? আমিও প্রথমে চমকে গিয়েছিলাম এরকম সংবাদ শিরোনাম দেখে। এমন আদেশ জারি করে নোটিশ টানানো হয়েছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম সুফিয়া কামাল হলে।

এ বিষয়ে কিছু প্রশ্ন আমার মাথায় খেলা করছে। আচ্ছা আমি বাসায় কিংবা হলে কি পোশাক পরব সেটা কেন অন্য কেউ নির্ধারণ করে দেবে বা অন্যজন কেন নাক গলাবে? যে পোশাকে আমি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করব সেটাই তো আমার পরা উচিত। নাকি?

দ্বিতীয় কথা হলো এই আবাসিক হলে কি মেয়েদের পাশাপাশি ছেলেরাও থাকে? যদি তা না হয় তাহলে, হল সীমানার মধ্যে মেয়েরা কি পোশাক পরল তাতে কি আসে যায়? ঘরের বাইরে বেরুতে মেয়েরা কি পোশাক পরবে সে বিষয়ে নাক গলানোর কাজটা তো আদিকাল থেকেই করে আসছে সমাজ-আপনারা। এবার হলের ভেতরের বিষয়ে নাক গলানো শুরু হলো। এরপরে কি? এধরণে নোটিশ দিয়ে মুক্ত মনের পরিচয় দিলেন হল কর্তৃপক্ষ? এখন কথা হলো, ঠিক এরকম একটা শিরোনামের সংবাদ হবে এমন ভবিষ্যৎ চিত্র কি আমাদের পূর্ব প্রজন্ম চেয়েছিল?

পেছনের দিকে তাকালে গত ৪০ বছরে আমাদের সমাজে কোন কোন ক্ষেত্রে যেমন নারী সাফল্য, অগ্রগতি হয়েছে ঠিক তেমনি কোন কোন ক্ষেত্রে উন্নতি নেই বললেই চলে। নারীরা এখন সরকারি-বেসরকারি ক্ষেত্রে পুরুষদের পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রে সফলতা দেখিয়েছে, অবস্থান তৈরি করে নিয়েছে। সরকারি কর্মকর্তা থেকে শুরু করে, ব্যবসা, জনপ্রতিনিধি হয়েছেন নারীরা। দেশের প্রধানমন্ত্রী, স্পিকার, বিরোধী দলের নেতাও নারী। এসব আমাদের জন্য যেমন আশাব্যঞ্জক, তেমনি প্রদীপের নিচে অন্ধকারও আছে। বাসা থেকে বের হলে গলির মোড়ের চা বিক্রেতা, বখাটে, বাসের হেলপার-পুরুষ সহযাত্রী, অফিসে বস থেকে শুরু করে প্রায় সবখানেই নারীকে উত্যেক্তকারী ঘাপটি মেরে আছে। শুধুমাত্র ‘নারী চিহ্ন’ শরীরের থাকার কারণে শুনতে হয় অশ্লীল, অশ্রাব্য বাক্য। প্রতিদিন কত নারী এসবের শিকার হন তার হিসেব রাখে কেউ? কতজন ধর্ষিত হয় তার প্রতিকার হয় কি?

নারী শুধু বাইরে নয় ঘরেও অনিরাপদ। তার টাটকা প্রমাণ সুফিয়া কামাল হলের নোটিশটি। কিন্তু এরকম নোটিশ নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারবে? নাকি সুরক্ষিত করতে গিয়ে আরও অরক্ষিত করা হচ্ছে নারীদের? দয়া করে পেছনে না হেঁটে সামনের পানে হাঁটুন। ঘরে নই বাইরের নিরাপত্তা নিয়ে ভাবুন আগে। আপনার মেয়ে যাতে ঘরে-বাইরে সবখানে স্বাচ্ছন্দে চলতে পারে সেই ব্যবস্থা নিয়ে ভাবুন। মেয়েকে বলুন, গ্রাম, শহর বা দেশের জন্য নয় বরং সে পৃথিবীর নাগরিক। তাকে বাঁধা দিয়ে, লুকিয়ে রেখে নয় লড়াই করার মানসিকতার শিক্ষা দিন। তাকে গুটিয়ে নয় চুটিয়ে বাঁচতে দিন।

 

এ সংক্রান্ত সংবাদ পড়ুন-

ঢাবির সুফিয়া কামাল হলের প্রাধ্যক্ষের প্রতিবাদ

‘সালোয়ারের ওপর গেঞ্জি’ পরা নিষেধ