বাংলাদেশে প্রবাসীদের টাকা বিনিয়োগের কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা নেই - Women Words

বাংলাদেশে প্রবাসীদের টাকা বিনিয়োগের কোনো নিরাপদ ব্যবস্থা নেই

রাহিমা বেগম

ও ড্রাইভার যাইবায়নি জিন্দাবাজার? ৩০ টাকা দিমু (এই রিক্সা যাবে? ৩০ টাকা দিব)। যে জায়গায় যেতে রিকশা ভাড়া ১০ টাকা, সিলেটে থাকা প্রবাসীর আত্মীয়রা আগ বাড়িয়ে ৩০ টাকা রিকশা ভাড়া বলে দিবেন। যেখানে ৩০/৪০ টাকা রিকশা ভাড়া সেইসব আত্মীয়রা ২০০ টাকা সিএনজি রিজার্ভ করে ঘুরে আসবেন। নিজে ইনকাম করলে হয়ত ১০০০ টাকা দামের জামা কিনতেন না, অথছ প্রবাসী আত্মীয়’র পাঠানো টাকায় ৩০০০/৪০০০ টাকার নীচে জামাকাপড় কিনেন না। আজ এই মোবাইল সেট, দুই-তিনমাস পরে নতুন আরেক মডেল, এই রেষ্টুরেন্টে একদিন খেতে যাওয়া, অন্যদিন আরেকটাতে। বন্ধু বান্ধব নিয়ে হৈ হুল্লোড়, আড্ডা দেওয়া, ঘুরতে যাওয়া এসব লেগেই থাকে। সর্দি কাশি দেয়ার আগে ডাক্তার, এই ডাক্তার সেই ডাক্তার কত কত টেস্ট, দামী দামী ক্লিনিকে ভর্তি না হলে চিকিৎসাই হয়না। এত এত বিলাসিতা, খরচ করতে এইসব আত্মীয়দের এতটুকু চাপ নিতে হয়না কারণ সেই খরচের টাকা পেতে কোন কষ্ট করতে হয়না, শুধু মোবাইলে ৫০০ এমবি রিচার্জ করে ধৈর্য ধরে ঐ প্রবাসী একাকী আত্মীয়কে ১/২ ঘন্টা সময় দিতে হয় মাত্র। ব্যস আপনার একাউন্টে কাঙ্ক্ষিত টাকা এসে পৌঁছে যাবে। সৌদি আরব, থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, ইন্দোনেশিয়া ভ্রমণকালে সচক্ষে দেখে এসেছি প্রবাসীরা কত কষ্টে রোজগার করেন। আমি বাংলাদেশি পেলেই টুকটাক গল্প জুড়ে দিতাম, সাথে তাদের প্রবাস জীবন সম্পর্কেও জানার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশে তাদের যেসব আত্মীয়রা বছরে ৮/১০ টি জামা কিনেন, সেইসব প্রবাসী সারা বছরে একটা ফেইউ জামা পড়ে কাটিয়ে দেন। দেশে ২৬-২৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা হলে অনেকেই হা হুতাশ শুরু করি, বাসায় এসি দেয়ার জন্য প্রবাসী আত্মীয়কে চাপ দেই। সৌদিতে দেখেছি ৩৮/৪০ ডিগ্রি তাপমাত্রায় নিরলস রাস্তা পরিষ্কারের কাজ করছেন, মাস শেষে বেতনও আহামরি কিছু না, ঘুরতে যাওয়া মানুষজন যে টিপস দেন সেটার দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। বাসায় দামী ডাইনিং টেবিল না হলে প্রেস্টিজ থাকেনা আর প্রবাসীদের দেখেছি বড় পলিথিন বিছিয়ে ৭/৮ জন এক সাথে সেই পলিথিনে খাবার খাচ্ছেন। যেই ছেলেটা দেশে এক গ্লাস পানি ঢেলে খেতনা, সে হাজার মানুষের গ্লাসে পানি ঢেলে দিন রাত অক্লান্ত পরিশ্রম করে দেশে টাকা পাঠায়। অনেক প্রবাসীরা দেশে টাকা পাঠান জায়গা জমি কেনার জন্য কিংবা বাড়ি বানানোর জন্য কিন্তু দেখা যায় যেই আত্মীয়র পাঠানো টাকায় নিজেদের বিলাসিতা চলে, তার সঙ্গে বেঈমানি করে জায়গা ঘরবাড়ি নিজের নামে করে নেন, অনেকে আবার একই সময়ে নিজেদের ঘর তৈরীর কাজ শুরু করে দেন আর প্রবাসীর বাড়ি নিম্নমানের জিনিস দিয়ে তৈরী করে নিজের ঘরে ভালো মানের উপকরণ ব্যবহার করেন ঐ টাকায়। প্রবাসীরা সারাজীবন কষ্ট করে যে টাকা দিয়ে আত্মীয়দের ভরণপোষণের দায়িত্ব নেন, দেশের সব আত্মীয়দের আত্মীয়তার বন্ধনে আগলে রাখতে চান, দেখা যায় তাদের সেই আত্মীয় খুব সহজে বিশ্বাসঘাতকতা করেন, আত্মীয়তার বন্ধন নষ্ট করেন। মে, ২০১৯ সালে সর্বোচ্চ সংখ্যক রেমিটেন্স অর্থাৎ ১৪ হাজার ৮৩৫ কোটি টাকা বাংলাদেশে পাঠিয়ে ইতিহাস গড়েছেন প্রবাসীরা। শুধু মে মাস নয় সারাবছর জুড়ে তারা দেশে টাকা পাঠান, দেশের অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে, দেশের মানুষকে খুশি রাখতে কত কষ্টের আয়ের টাকা তারা দেশে পাঠান। সেই টাকায় দেশের আত্মীয়রা বিলাসিতা করে বেড়ান। তারপর ও দিনশেষে অভিযোগ থাকে গতবার এই টাকা পাঠালো, এইবার জিনিসপত্রের এত দাম আরেকটু বেশি পাঠালে কী ক্ষতি হতো, এইবার নতুন ফ্রিজ কিনবো ভেবেছিলাম, কিন্তু ফ্রিজের টাকাটাও হলোনা। প্রবাসীরা কষ্ট করে টাকা পাঠান অথচ তাদের কোন সেভিংস থাকেনা। কেউ অসুস্থ হয়ে দেশে ফিরে এলে চিকিৎসার টাকা পর্যন্ত ব্যবস্থা করতে হিমশিম খেতে হয়। আমাদের দেশে প্রবাসীদের টাকা বিনিয়োগের সেইরকম কোন নিরাপদ ব্যবস্থা নাই। অথচ প্রবাসীদের টাকা বিনিয়োগ করে দেশের অর্থনীতি আরো শক্তিশালী করা সম্ভব হতো। আমাদের সরকারের উচিত প্রবাসীদের টাকা বিনিয়োগের একটা নিরাপদ ব্যবস্থা বা কাঠামো দাঁড় করানো যাতে তাদের টাকা ব্যবহার করে একদিকে যেমন দেশের অর্থনীতি শক্তিশালী হবে অন্যদিকে প্রবাসীদের দেশে একটা সম্পদ থাকবে, নিজের জন্য কিছু সেভিংসও থাকবে।