দুজনের চোখের কোণে জল - Women Words

দুজনের চোখের কোণে জল

রাহিমা বেগম

নওরিন বসে আছে। ঘড়ি দেখছে বার বার। নওরিনের ঘড়ি খুব পছন্দের। তার সুন্দর সুন্দর সবকয়টা জামার সাথে ম্যাচিং ঘড়ি আছে। নতুন জামা কিনলেই সে অপেক্ষায় থাকে কত তাড়াতাড়ি ম্যাচিং একটা ঘড়ি কিনবে। মা বাবার একমাত্র মেয়ে সে। যখন যা চেয়েছে সবই পেয়েছে। তাছাড়া সে দুইটা টিউশনি করে সেখান থেকে মাসে আট হাজার টাকা পায়। তার হাত খরচের টাকা এই টাকাতে হয়ে যায়। বাসা থেকে যখন বের হইছে তখন বাজে দুপুর আড়াইটা। এখানে এসে পৌঁছাতে পৌঁছাতে তিনটা বেজে গেছে। আর এখন বাজছে চারটা। এক ঘন্টা ধরে সে একা বসে আছে। ভাগ্য ভাল আজ সে জ্যামে পরে নাই। ভাগ্য আজ তার পক্ষে। এত সুন্দর করে সাজুগুজো করে বের হলেও বাসায় কেউ বের হওয়ার সময় কোন প্রশ্ন করেন নাই। প্রশ্ন করলেই মিথ্যা কথা বলে বের হওয়া লাগত। আজকে তার এক ছাত্রের বাসায় বিয়ের দাওয়াত সবাই ধরে নিয়েছে সে ঐ বিয়েতে যাচ্ছে। সে আজ কোন মিথ্যা বলতে চায়না। তাছাড়া মিথ্যা কথা বলা তার পছন্দ ও নয়। মহসিনকে ভালো লাগার তার প্রধান কারণ হচ্ছে মহসিনকে সে কখোনো মিথ্যা কথা বলতে শুনে নাই। মহসিন তাকে প্রথম প্রপোজ করেছিল বছর পাঁচেক আগে যখন তারা দুজন ভার্সিটিতে সেকেন্ড ইয়ারে পড়ে, তারিখটা ছিল ১২ ডিসেম্বর। তাদের এক বন্ধুর চাচার বিয়েতে সবাই মিলে যাচ্ছিল হঠাৎ করে রাস্তায় কি একটা ঝামেলা হলো, সবাই গাড়ি থেকে নেমে গেল। নওরিনের পরনে সেদিন শাড়ি ছিল তাই সে আর গাড়ি থেকে নামেনি। মহসিন হঠাৎ গাড়িতে উঠে তার পাশে এসে বসে। পাশে বসে আস্তে আস্তে বলে, আমরা কি দুজন সারাজীবন এক সাথে চলতে পারিনা? মহসিন আগেই ধরে নিয়েছিল নওরিন হকচকিয়ে যাবে। কিন্তু ঘটলো উল্টা। মহসিন নিজেই একটু হকচকিয়ে গেল। নওরিন খুব সুন্দর করে বলল, পারি। ঝামেলাটা মিটে গেছে। সবাই গাড়িতে উঠছে, নওরিন বলল, রাতে কল কর। দুজনে আগের জায়গামত চলে গেল। গাড়িতে গল্প করার মাঝে মহসিন দু একবার শুধু নওরিনের দিকে পিছন ফিরে তাকিয়েছে। আর কোন কথা হয়নি পুরো বিয়ের অনুষ্ঠানে। রাত আটটার দিকে মহসিন কল করে নওরিনের নাম্বারে। নওরিন বাসার সবার সাথে গল্প করছিল কিন্তু সেদিন তার মন গল্পে ছিলনা। অপেক্ষা করছিল মহসিনের কলের। আচ্ছা দিনে কি সত্যি সত্যি মহসিন তাকে এই কথাটা বলেছিল? তার কানে কথাগুলো এখনো ভাসছে! তাই কলটা আসায় তার কনফিউশন দূর হয়। সে মোবাইল হাতে নিয়ে তার রুমে ঢুকে। সেইদিনের মহসিনের সাথে কথোপকথনের প্রত্যেকটি কথা তার স্পষ্ট মনে আছে। মহসিন জানে তাদের বিশেষ সময়গুলো বেশীর ভাগ কথা তার ডায়েরির পাতায় লিখা আছে। তাদের বিশেষ দিনগুলোতে সেই লিখাগুলো সে মহসিনকে টেক্সট করে পাঠায়। একবার ওর কাছে মহসিন ডায়েরিটা চেয়েছিল। সে দিতে পারে নাই। দিতে অবশ্য না ও করেনি। কারণ কোনো কাগজের ডায়েরিতে কথাগুলো লিখা নেই। লিখাগুলো আছে তার মনের মধ্যে। হ্যালো হ্যালো, নওরিন! হুম কেমন আছো? ভাল তুই কেমন আছিস? তুই না, তুমি। বলবো তো, তবে এত তাড়াতাড়ি আমার হবেনা। আচ্ছা ঠিক আছে। কি করছিলে। তোর কলের অপেক্ষা করছিলাম। তাই? বিশ্বাস হয়না বুঝি? হয়তো। একটা কথা বলি তুই রাগ করিস না, প্লিজ। বল তুই কি সারাদিন আমাকে তুমি বলার প্র্যাকটিস করছিলি? হি হি হি। ঠিক প্র্যাকটিস না, তবে প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম। সারাদিন? না। তাহলে কতক্ষণ? গত এক সপ্তাহ ধরে। শনিবার, পাঁচ তারিখ, ডিপার্টমেন্টের সেমিনারে তুই যখন তোর পেপার প্রেজেন্ট করছিলি ঠিক সেই মুহুর্ত থেকে। মহসিন এত সুন্দর করে সময়টা বলেছিল! এ বিষয়টা ওর মনে গেঁথে গিয়েছিল। তাই হয়ত এর পর থেকে তাদের সব সুন্দর সময়, সুন্দর মুহুর্ত, সুন্দর কথাগুলো তার মনে গেঁথে যায়। এবার বলো, কেন কল করতে বলেছো? আমি না বললে তুমি আমাকে কল করতে না? ধন্যবাদ। তা করতাম। কিন্তু তুমি যখন কল করতে বলেছো নিশ্চয়ই তুমি কিছু বলতে চাও। বলতে তো চাই। কিন্তু কথার মাঝখানে ধন্যবাদ কেন? তুমি বুঝবেনা। কি বলবে বল। তোমাকে তিনটা প্রশ্ন করবো। করো। হুম, তার আগে তোকে একটা কথা বলব। ঠিক আছে, তোর কথা আগে বল পরে প্রশ্ন শোনা যাবে। তুমি কখনো আমাকে আলাদাভাবে খুশি করার জন্য কোন মিথ্যা, ফেইক কিছুর আশ্রয় নিবানা, লোক দেখানো কিছু করবানা। তুমি যেমন তেমন ই ভালবাসবা। আমাদের ভালবাসায় কোন কৃতিমতা থাকবেনা। কথা রেখেছিল সে। রাগ হলে প্রচন্ড রেগে যায়, আমার কথায় কষ্ট পেলে সেটাও বলে দেয়, ভুল করলে উল্টাপাল্টা কিছু করলে পরে অকপটে স্বীকার করে সরি বলে নেয়। অবশ্য এ সব আচরণে সে অনেক বেশী কষ্ট পেয়েছে। তবু আত্মতুষ্টির বিষয় হলো এ কষ্ট পাওয়া কোন মিথ্যা থেকে নয়। বাহ তুমি ত সহজ করে দিলে? হুম, সহজ করে দিলাম। এইবার তোর প্রশ্নগুলো কর। নওরীন একটু রেগে গিয়ে বলে, কি ব্যাপার তুই তোকারি করছিস কেন? এই নিয়ে দুইবার হয়ে গেল। মহসিন অপ্রস্তুত হয়ে যায়। আমি তো ইচ্ছে করে বলছিনা। তুমি ই তো শুরু থেকে তুই তুই করে আসছো। তাই আমার মুখ দিয়ে এসে গেছে! কত সুন্দর করে তুমি করে বলছিলে, কত ভাল লাগছিল। তাই তুই করে বলায় কানে বাজলো। সমস্যা নাই আর বলবোনা। এইবার তোমার প্রশ্নগুলো কর। তার আগে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দাও। আমি তোমাকে প্রপোজ করার সাথে সাথে তুমি কেন পজেটিভ উত্তর দিলা? কারণ তুমি মিথ্যে কথা বলনা। তুমি যে বললে সারাজীবন কি দুজনে একসাথে কাটাতে পারব কিনা। মিথ্যার সাথে পারা যায়না কিন্তু সত্যের সাথে সারাজীবন কাটানো যায়। তুই মিথ্যা বলিসনা দেখে তোকে খুব পছন্দ করতাম। ঠিক আছে জেনে ভালো লাগলো, এইবার তোমার প্রশ্নের পালা। আমার প্রথম প্রশ্ন হলো Why Nourin?

বৃষ্টির ঝাপটা এসে মুখে লাগলো। রেষ্টুরেন্টের একটা বয়, নাম পলাশ, এসে বললো আপু আপনি তো ভিজে যাচ্ছেন। ভিতরে আসেন। এই রেষ্টুরেন্টের সব স্টাফ খুব ভালো। তারাও তাদের দুজনকে খুব সম্মান করে। গত পাঁচ বছর তারা সবচেয়ে বেশী এই রেষ্টুরেন্টে খেয়েছে। এখানে পরিবেশটা অনেক সুন্দর আর নিরিবিলি। রেষ্টুরেন্টের সামনে একটা বিল। তাদের এখানে ভিতরে আর বাইরে লেকের ধারে খাবার ব্যবস্থা আছে।লেকে ঘুরাঘুরি করার জন্য কয়েকটা নৌকা আছে। তারা যতদিন এখানে এসেছে প্রায় প্রতিদিন নৌকা নিয়ে ঘুরে আসত। নওরীন উঠে ভিতরে গিয়ে বসলো। পলাশ এসে বললো, আপু চা কফি কিছু নিবেন।

সে জানত উনি কিছু নিবেননা। গত পাঁচ বছর থেকে দেখে আসছে উনি অনেক আগে আসলেও কখনো কিছু নেননা যতক্ষণ না মহসিন ভাই আসেন। আপু আজকে আপনাকে খুব সুন্দর লাগছে অন্যদিনগুলোর চেয়ে সম্পূর্ণ অন্যরকম। ধন্যবাদ, আজকে আমাদের একটা অন্যরকম দিন, তাই অন্যরকম লাগছে। অবশ্য কিছুক্ষণ পর আপনারাও জানতে পারবেন। আপু আপনি এক ঘন্টা থেকে বসে আছেন। যে ঝড়বৃষ্টি শুরু হচ্ছে মহসিন ভাইয়া কি আসতে পারবে। কথাটা শুনে নওরিনের বুকটা কেঁপে উঠে। এবার ও কি তবে আগের মত হবে? কিন্তু সে এটা পলাশকে বুঝতে দেয়নি। আশা করছি আসবে। ঠিক আছে, আপনি আপনার কাজে যান। তাদের থার্ড ইয়ারের ভাইবা শেষ হওয়ার পর দুজনে ঘুরতে যায়। মহসিন হঠাৎ বলে চলো দুজনে বিয়ে করে ফেলি। নওরিন প্রথমে রাজি হয়নি। মহসিন অনেক বুঝিয়ে রাজি করালো। দুজনে মিলে প্লান করলো কিভাবে বিয়ে করবে, কেমন খরচ হবে, কোন কোন বন্ধুদের জানানো হবে এসব। নওরিন বললো একটা শর্ত আছে সেটা হলো দুজনে বিয়েতে সমান কাজ করবো। তা তো বটে। মহারাণী কি বলে দিবেন আমাকে কি কি কাজ করতে হবে? তুমি সাক্ষী, কাজী সব ঠিক করবা। এমনকি আমার পক্ষের সাক্ষী মেনেজ করার দায়িত্বও তোমার। আমাদের কোন কোন বন্ধুদের জানানো হবে সেটা তুমি ঠিক করবে, কোথায় বিয়ে হবে, কিভাবে হবে কখন হবে এসবের দায়িত্বও তোমার। তা না হয় করলাম কিন্তু তুমি যে বললে দুজনে সমান সমান কাজ করব। তোমার তাহলে কি দায়িত্ব পরলো? আমি বিয়ের যত খরচ লাগে সব দিব! এটা আবার কেমন কথা? আমার তো ইচ্ছে করছে সব খরচ আমি একাই চালাবো। শুনো, তুমি যে কাজগুলো করছো আমার ও তো ইচ্ছে করছে সেগুলো করি। আমি কি করতে পারছি? তাছাড়া বিয়ের টুকিটাকি আরও অনেক খরচ লাগবে সেগুলো তুমি করবা। তাদের আলাপের কিছুদিন পর মহসিনের হাতে সে ত্রিশ হাজার টাকা তুলে দেয়। কিন্তু পনেরো বিশদিন পার হয়ে গেলেও মহসিন বিয়ের ব্যাপারে কিছুই জানায়নি দেখে নিজে থেকেই জিজ্ঞেস করলো, কি ব্যাপার? বিয়ের ব্যাপারে তুমি কিছু জানালেনা? আসলে তোমাকে জানানোর মত সাহস পাচ্ছিনা। আমাদের পাড়ার যে লোকটি আমাদের সব আয়োজন করছিল, সে হঠাৎ মালোশিয়া চলে গেছে। ওহ! নওরীন কল কেটে দেয়। সে রাতে নওরীন অনেক কেঁদেছিল। এইবার বিয়ের তারিখ যখন তারা ঠিক করলো নওরীন আবারো বিয়ের খরচ মহসিনের হাতে তুলে দিল। মহসিন কিছুতেই টাকাগুলো নিতে চায়নি। শেষপর্যন্ত বলেছিল আচ্ছা আমি আপাতত খরচ করছি তুমি পরে দিয়ে দিও। নওরীন শুধু একটা কথা ই বলেছিল যাকে এই কয়টা টাকা দিয়ে বিশ্বাস করতে পারবনা তার সাথে কোন বিশ্বাসে সারা জীবন কাটাবো। তুমি জাননা তোমার নওরীন তোমাকে কতটা ভালবাসে, কতটা বিশ্বাস করে? মহসিন আর কোন উত্তর দিতে পারেনি। বৃষ্টির গতি আরো বাড়ছে। খুব শব্দ হচ্ছে, ঘন ঘন বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। নওরীন কিছু চিন্তা করতে পারছেনা। তার খুব কান্না পাচ্ছে। সে টেবিল থেকে ওঠে বারান্দার খুঁটি ধরে দাঁড়ায়। হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির পানির ঝাপটা নিজের মুখে দেয়। তার দুচোখ বেয়ে পানি পড়ছে। আজ ও কি মহসিন আসতে পারবেনা। মহসিন ঘন্টাখানেক আগে কল করেছিল। তখন বলেছিল তার সব প্রস্তুতি আছে। এখন তার মোবাইলে কল ঢুকছে না। নিশ্চয়ই নেটওয়ার্ক সমস্যা। তবুও বুকটা ধুকপুক ধুকপুক করছে! বাবা মার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছে! তারা যখন শুনবেন কতটা কষ্ট পাবেন। আচ্ছা আমি যতটুকু হারাচ্ছি ততটুকু ফিরে পাব তো? মহসিন তুমি আসতেছো তো? হঠাৎ একটা কালো নোহা গাড়ি এসে রেষ্টুরেন্টে ঢুকলো। মহসিন কাকভেজা অবস্থায় নেমে এল। একে একে গাড়ি থেকে একজন হুজুর সম্ভবত কাজী, মহসিনের যে বন্ধুর বড় ভাইয়ের এই রেষ্টুরেন্ট সেই বন্ধু, তাদের আরও তিনজন বন্ধু যাদেরকে দেখে সে খু্ব লজ্জা পাচ্ছিলো।তারাও নওরীনের দিকে তাকিয়ে দুষ্টুমি হাসি দিল। জীবনে এত লজ্জা সে কোনদিন পায়নি। মহসিন নওরীনের দিকে তাকিয়ে বললো বাসা থেক বের হওয়ার সময় কোন বৃষ্টি ছিলনা, আর একটু পর এমন ঝড় শুরু হলো। তুমি খুব টেনশন করছিলে? সে আস্তে করে বললো, ঠিক আছে। ওর বন্ধুরা তখন বলল, তুই ভেবেছিলি আমরা আর আসবনা, তাই না? শোন তোর হয়ে আমরা সাক্ষী দিবনা, তুই আমাদের আগে কিছু জানাসনি যে আজকেই বিয়ে করছিস। মহসিনের বন্ধু আতাহার বলল, তোরা আর ভাবির সাথে লাগতে যাইসনা। বেচারীর উপর দিয়ে কত ধকল গেছে সেটা চোখমুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে! সবাই ভিতরে গিয়ে বসি। আর দেরী করা ঠিক হবেনা। শুভকাজে দেরী করতে নেই। সকলে গিয়ে বসলো। কাজি সাহেব বিয়ে পড়ানো শেষ করলেন। মহসিন নওরিনের পাশে টুপি পড়া অবস্থায় বসে ছিল। সে নওরীনের হাতের উপর হাত রাখলো। ভরসা খুঁজে পেল।সারাজীবন একসাথে পথ চলার ভরসা। আতাহার একটা বাটিতে মিষ্টি নিয়ে এলো। মহসিনের হাতে মিষ্টি দিয়ে চলে যায়। মহসিন নওরিনের মুখে মিষ্টি তুলে দেয়। নওরীন মিষ্টি খাচ্ছিলো হঠাৎ মহসিনের ঠোট তার ঠোটের কাছে নেমে এল। বৃষ্টিটা বাইরে কিছু কমেছে তাইনা? হতে পারে। দাঁড়াও দেখে আসি। নওরীন ওঠে নামাজ পড়ে। নামাজ শেষ হলে তাদের বন্ধুরা ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানায়। নওরীন তখোনো লজ্জা পাচ্ছে। আতাহার এসে বললো আমাদের কারোর ই আজকে লাঞ্চ করা হয়নি। চলো তাড়াতাড়ি বাইরে চলো। বাইরে? এইখানে লাঞ্চের অর্ডার দেয়া হয়নি? নওরীন আস্তে করে কথাগুলো বললো। ভাবি  প্যাকেট লাঞ্চ, আমরা নৌকায় বসে লাঞ্চ করবো। নওরীন মহসিনের দিকে তাকালো। কেন তোমার পছন্দ হয়নি? খুব! চলো তাহলে। সবাই নৌকায় উঠে বসলো। তাদের বন্ধুরা এক পাশে আর তারা দুইজন একপাশে। হালকা বৃষ্টি হচ্ছে। তারা গল্প করতে করতে খাচ্ছে। নৌকা ধীরে ধীরে ঘাট থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সুন্দর স্বচ্ছ পানির উপর দিয়ে তাদের নৌকা ভেসে যাচ্ছে। সবার চোখ বিলের পানির উপর, সকলে টলমলে পানির সৌন্দর্য উপভোগ করছে। কিন্তু তাদের দুজনের চোখ আজ টলমলে পানি, স্নিগ্ধ শীতল সবুজ পরিবেশ- কোনটার উপরেই নেই। সব ছাপিয়ে দুজনের চোখে শুধু তাদের দুজনের চোখের কোণায় জমানো পানিটুকু ভেসে উঠলো!