অন্য কারো জন্য শরীর তৈরির প্রয়োজন নেই - Women Words

অন্য কারো জন্য শরীর তৈরির প্রয়োজন নেই

কানিজ ফাতেমা ছন্দা

ইউভার্সিটিতে যখন প্রথম ভর্তি হলাম, এক মেয়ে আমাকে ডেকে নিয়ে চুপিচুপি বললো, ‘তুমি সবসময় ব্রেসিয়ার পরো না?’ আমি না-সূচক মাথা নাড়লাম..মেয়েটা খুব অবাক হয়ে আমাকে উপদেশ দিলো, ‘এমন করো না, শুধু বাইরে না, বাড়িতেও পরো..শেষে বুক ঝুলে যাবে, ছেলেরা টাইট ব্রেস্ট ছাড়া মেয়েদের পছন্দ করে না!’

সত্যি বলতে বয়ঃসন্ধির পর জীবনে প্রথম কেউ (তাও একজন মেয়ে) আমাকে ২৪ ঘণ্টা ব্রেসিয়ার পরে থাকার উপদেশ দেয়ায় আমি ভীষণ ধাক্কা খেয়েছিলাম..ভাবছিলাম, তবে কি আমাকে কেউ পছন্দ করবে না? কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার, কখনোই ২৪ ঘণ্টা বক্ষবন্ধনী দিয়ে নিজেকে দম বন্ধ করা অনুভূতিতে শাস্তি দিতে পারি নি..তখন এতোখানি খোলাখুলি কিছু না জানলেও এটুকু বুঝেছিলাম, কোন ছেলের আমার শরীরকে ভালোবাসার চেয়ে আমার নিজের শরীরের প্রতি নিজের ভালোবাসা বেশি গুরুত্বপূর্ণ!

আ্যঞ্জেলিনা জোলি- সব ছেলের হার্টথ্রব! তার নিজের মা যখন ব্রেস্ট ক্যান্সারে মারা গেলো, তখন সে জানতে পারলো সে নিজেও ঐ জিনটি শরীরে বহন করছে..সিদ্ধান্ত নিলো, দুটো ব্রেস্টই কেটে ফেলে দেয়ার এবং নকল ব্রেস্ট লাগানোর!

একটা মানুষ হিসেবে ভাবুন তো, আপনি যদি জানেন যে আপনার পায়ে খুব বড় কোন অসুখের জিন রয়েছে, যার জন্য অসুখ হলে আপনি মরেও যেতে পারেন, সেই সময়ে নিজের দুটো পা কেটে ফেলে নকল পা লাগিয়ে বাকি জীবন কাটাতে কেমন লাগবে আপনার?

এটা পা নয়, বুক! আর মেয়েদের জন্য ব্রেস্ট শুধু আরেকটা অঙ্গ নয়..এই অঙ্গ তাকে ভালোবাসার মানুষের স্পর্শে আলোড়িত করে, এই অঙ্গ দিয়ে তার সন্তান খাবার পায়, বড় হয়! কিন্তু তারপরেও জীবন আগে, জীবনটাই না থাকলে ভালোবাসার মানুষ কোথায় থাকবে আর কোথায় থাকবে নাড়িছেঁড়া সন্তান?

জোলির এই সিদ্ধান্ত অনেক মেয়েকে সাহস জুগিয়েছে নিজের জীবন নিয়ে ভাবতে! ৯৫% থেকে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ঝুঁকি ৫% এ নেমে আসাটা অনেককে আশার আলো দেখিয়েছে!

ক’দিন আগে এক মেয়েকে দেখেছি ক্লিভেজ দেখিয়ে অন্যের পুরুষকে আকৃষ্ট করার চেষ্টা করতে, যদিও তার নিজের জীবনে ভালোবাসার মানুষ তখন বিদ্যমান! মেয়েটাকে দেখার পর আমার ভার্সিটি জীবনে উপদেশ দেয়া সেই মেয়েটির কথা মনে পড়ে গেলো! মনে পড়ে গেলো ফেইসবুকের বিজ্ঞাপনের কথা, ‘বুক বড় করো, টাইট প্যাডেড ব্রেসিয়ার পরো!’

মনে পড়ে গেলো বারবির লিটল মারমেইডের কথা, সিন্ডারেলা, রাপুঞ্জলের মত রূপকথার নায়িকাদের কথা- যারা বাচ্চা বয়সেই মেয়েদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়, আকর্ষণীয় স্তন থাকতে হবে; আর সেই স্তনের মাঝে ভাঁজও থাকতে হবে! আর কিছু মেয়ে সত্যি সত্যি নিজের শরীরকে অন্যের ভালোবাসার জন্য তৈরি করতে চায় প্রকৃতির বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও! অথচ নিজের শরীরটার প্রতি ভালোবাসা সবার আগে নিজের আসা উচিত!

ব্রেসিয়ার, স্তনের মত এতো খোলামেলা কথা কেন বললাম? ট্যাবু ভাঙার চেষ্টায়! ‘নো ব্রা ডে’ পালিত হলো। এরকম দিবসের আহ্বানকে অর্থবহ করতে হলে মেয়েদেরকে বলবো, নিজের শরীরটাকে স্রষ্টার উপহার ভেবে যত্ন করো, জীবন থাকলে ভালোবাসতে তুমিও পারবে, অন্য কারো জন্য শরীর তৈরির প্রয়োজন নেই..যে তোমার শরীরের ভাঁজ দেখে তোমার কাছে আসবে, সে তোমার প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে অন্য কোন শরীরের ভাঁজে আকৃষ্ট হবে না তা কিন্তু বলা যায় না!

জোলি-ব্রাড পিট জুটিটাকে দূর থেকে ভালো লাগতেই পারে, তবে এটাও কিন্তু সত্যি স্তন কেটে ফেলে দেয়ার পরের যুদ্ধজীবনে জোলির হাতের মুঠোয় পিটের হাত স্থায়ী হয় নি!