ক্রীড়া প্রতিবেদক : শততম ম্যাচ জয় যেমনটা হওয়া উচিত ঠিক তেমনটাই হলো। প্রতিপক্ষ আফগানদের ১৪১ রান ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে ঐতিহাসিক জয়কে আলাদা মাত্রা দিলেন মাশরাফি-তামিমরা। এমন স্মরণীয় দিনে তামিমের সেঞ্চুরীটিও পেল বিশেষত্ব। ফলে আগের ম্যাচে হেরে যাওয়া যে নিছক দুর্ঘটনা ছিল তাও যেন প্রমাণ করে দিল বড় ব্যবধানের জয়টি। বাংলাদেশের তোলা ৮ উইকেটে ২৭৯ রানের জবাবে আফগানিস্তান অলআউট হয়ে যায় ১৩৮ রানে।
সিরিজের শেষ ম্যাচে টস জয়ী বাংলাদেশের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা প্রথমে ব্যাটিংয়ে নামার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। দলীয় ২৩ রানের মাথায় সৌম্য সরকার যখন ১১ রানে বিদায় নিলেন তখন খানিকটা সংশয় হয়তো দেখা দিয়েছিল অনেকের। কিন্তু দারুণ ছন্দে থাকা তামিম সাব্বিরকে নিয়ে সব শঙ্কার কালো মেঘ উড়িয়ে দিয়ে দলকে নিয়ে যান নিরাপদ দূরত্বে। দলীয় ১৬৩ রানের মাথায় ছয়টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৭৯ বলে ৬৫ রানের গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলা সাব্বির রহমান ফিরে গেলেও তামিম থাকেন আপন ছন্দে। ১১৮ বল খেলে ১১টি বাউন্ডারী ও ২টি ছক্কা হাঁকিয়ে ১১৮ রানের দূর্দান্ত ইনিংস খেলে বাংলাদেশের এই ড্যাশিং ওপেনার যখন সাজ ঘরের পথ ধরেন, ততক্ষণে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৩৮ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে ২১২ রান। গড় রান দলীয় স্কোরকে ৩শ রানে নিয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত দিচ্ছিল। কিন্তু তামিমের পর খানিকটা আগেভাগে নেমে যাওয়া সাকিব ক্রিজে এসে অতিমাত্রায় রক্ষণাত্মক হয়ে উঠেন। ১৭ রান করতে তিনি ৩৫টি বল খরচ করে বসেন। ফলে রানের চাকার গতি কমে যায়। এরপর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের ৩২ রান ছাড়া বাকিরা উল্লেখ করার মতো রান তুলতে পারেননি। বাংলাদেশ নির্ধারিত ওভারে ৮ উইকেট হারিয়ে করে ২৭৯ রান। আফগানিস্তানের পক্ষে বল হাতে মোহাম্মদ নবী, মিরওয়াইস আশরাফ এবং রশিদ খান ২টি করে উইকেট পান।
জবাবে খেলতে নামা আফগানিস্তান শিবিরে তৃতীয় ওভারের প্রথম বলেই আঘাত হানেন অধিনায়ক মাশরাফি। রানের খাতা খোলার আগেই তার বলে বিদায় নেন ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ। কিন্তু আফগানিস্তান ইনিংসের তৃতীয় ওভারের প্রথম বলে উইকেট পাওয়ার পর গগনবিদারী উল্লাসের ছাপ শেষ হয়েছে কি হয়নি, হঠাৎই নিস্তব্ধ পুরো স্টেডিয়াম। সম্ভবত স্তম্ভিত হয়ে পড়েছিল বাংলাদেশও। পায়ে ব্যথা পেয়ে যে তখন মাটিতে পড়ে আছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। আগের বলেই দুর্দান্ত সুইং ডেলিভারিতে মোহাম্মদ শেহজাদকে বোল্ড করেছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। পরের বলটি করতে গিয়েই পা ফেলতে হলো গড়বড়, মাশরাফি বসে পড়লেন মাটিতে। খেলোয়াড়েরা তাঁকে ঘিরে ছিলেন, ফিজিও এলেন। আর পুরো স্টেডিয়ামে তখন শঙ্কার রেণু উড়ছে, এত এত অস্ত্রোপচার করা পায়েই যে ব্যথা পেলেন মাশরাফি।
চাইলে ঘটনাটিকে এই সিরিজের বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি ধরে নিতে পারেন। দুর্দান্ত স্বপ্নযাত্রার মতো কাটানো একটি বছরের পর এই সিরিজ দিয়ে আবার আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরেছে বাংলাদেশ। তাতে সহযোগী দেশ আফগানিস্তানের সামনে এমন হোঁচট! সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচের কোনোটিতেই ভালো ক্রিকেট খেলেনি বাংলাদেশ। প্রথমটিতে শেষ কয়েক ওভারের দুর্দান্ত বোলিং প্রদর্শনীতে জয়, দ্বিতীয়টিতে তো হেরেই গেল।
আজ সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় ম্যাচে বাংলাদেশ ঘুরে দাঁড়াল, মাশরাফির মতো করেই। সব শঙ্কাকে দূরে ঠেলে আবার উঠে দাঁড়ান বাংলাদেশ অধিনায়ক, ওই ওভারেই আবার বোলিং করলেন। বাংলাদেশও আফগানিস্তানের কাছে সিরিজে অঘটনের শঙ্কা এক ফুঁতে উড়িয়ে দিয়ে আজ পেল রানের বড় জয়। খেলার ১৬ ওভার ১ বল বাকি থাকতেই মাত্র ১৩৮ রানে গুটিয়ে গেল সফরকারীরা। আফগানদের পক্ষে ব্যাট হাতে রহমত শাহ সর্বোচ্চ ৩৬ রান করেন। এছাড়া নওরোজ মঙ্গল ৩৩, নাজিবুল্লাহ জাদরান ২৬, রশিদ খানের ১৭ এবং সামিউল্লাহের ১৩ রান ছাড়া বাকিরা দুই অংকের ঘরেই পৌছতে পারেননি।
বাংলাদেশের পক্ষে বল হাতে সবচেয়ে সফল ছিলেন মোশাররফ হোসেন রুবেল। দীর্ঘবিরতীতে দলে ফেরা এই স্পিনার ৮ ওভার বল করে ২৪ রান দিয়ে এক মেডেনসহ তুলে নেন ৩টি উইকেট। এছাড়া তাসকিন ২টি এবং মাশরাফি, সফিউল ও মোসাদ্দেক ১টি করে উইকেট পান।
২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে আগামী ৭ অক্টোবর থেকে শুরু হতে যাওয়া ইংল্যান্ড সিরিজের আগে কিছুটা স্বস্তিও উপহার দিল দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের।
এ সংক্রান্ত অন্য সংবাদ পড়ুন-
তামিম ইকবালের সপ্তম শতক