সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়বে যুক্তরাষ্ট্র: প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে কেরি - Women Words

সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে এক সঙ্গে লড়বে যুক্তরাষ্ট্র: প্রধানমন্ত্রীর সাথে বৈঠকে কেরি

সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র এক সঙ্গে লড়বে বলে জানিয়েছেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি। এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞ সহায়তা দেয়ার প্রস্তাব দেন কেরি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে বৈঠকে এ আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দেখা করতে যান মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এক ঘণ্টার বেশি সময় ধরে তাদের মধ্যে Jon Cary n Hasina 02 Women wordsবৈঠক চলে। বৈঠকে সন্ত্রাস, দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়  ও যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফেরতের বিষয়ে আলোচনা হয়।  পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম এ বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন।

তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, দুই দেশের মধ্যে তথ্য আদান-প্রদানের প্রয়োজন রয়েছে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র একসঙ্গে লড়াই করবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অস্ত্র ছাড়া সব ধরনের বাংলাদেশি পণ্যের ‘শুল্ক ও কোটামুক্ত’ প্রবেশাধিকার চেয়েছেন শেখ হাসিনা। একই সঙ্গে বাংলাদেশের বাজারে আরও মার্কিন বিনিয়োগ প্র‌ত্যাশা করেছেন তিনি।

প্রেস সচিব জানান, বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর সঙ্গে আরও ‘ঘনিষ্ঠভাবে’ কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেছেন কেরি।

কেরি বলেছেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় তাদের যথেষ্ট এক্সাপার্টিজ আছে এবং তারা এ বিষয়ে সহায়তা করতে পারেন।

ইহসানুল করিম বলেন, “প্রযুক্তি সুবিধায় যুক্তরাষ্ট্র এগিয়ে থাকায় জঙ্গি কর্মকাণ্ডের বিষয়ে দেশটির কাছে অনেক তথ্য আসে। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সেসব তথ্য তারা আমাদের দিলে জঙ্গি ধরতে সুবিধা হবে।”

আইএস ধীরে ধীরে কোনঠাসা হয়ে পড়ায় তাদের বিদেশি যোদ্ধারা (যারা সিরীয় নন) নিজ নিজ দেশে ফিরে যাচ্ছেন বলে জানান যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

আইএসের অর্থ ও অস্ত্র কোথা থেকে আসছে, প্রধানমন্ত্রীর এ প্রশ্নের জবাবে কেরি বলেন, ইরাক ও সিরিয়ায় আইএস এর দখল করা খনি থেকে তেল বিক্রি করে এবং ব্যাপক চাঁদাবাজি করে অস্ত্র সংগ্রহ করে তারা।

শেখ হাসিনা বলেন, বিত্তবান পরিবারের অনেক সন্তানেরাও এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে। এটা অবাক করার মত। তাদের সবকিছু থাকার পরও মা-বাবা ঠিকমতো সময় না দেওয়ায় তারা এর সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন তিনি। জন কেরি বলেন, মা-বাবা  ঘর থেকে বের হয়ে গেলে ছেলেমেয়েরা এখন প্রচুর সহিংসতাপূর্ণ ভিডিও গেমস খেলে।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাতের আগে ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ঘুরে দেখেন জন কেরি। তিনি সেখানে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

প্রেস সচিব বলেন, “বঙ্গবন্ধুর স্মৃতি জাদুঘর দেখার অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে জন কেরি বলেছেন, হি ইজ ইমপ্রেসড।”

কেরি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে সিনেটর এডওয়ার্ড মুর কেনেডির (টেড কেনেডি) সমর্থনের কথাও তুলে ধরেন।

জন কেরি বেলা ১২টা ১০ মিনিটে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পৌঁছালে তাকে স্বাগত জানান শেখ হাসিনা।এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী ও প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা গওহর রিজভী। অন্যদিকে কেরির সঙ্গে ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিশা দেশাই বিসওয়াল, ঢাকায় দেশটির রাষ্ট্রদূত মার্শা বার্নিকাটসহ জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা।

বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যার ঘটনা তুলে ধরে যুক্তরাষ্ট্রে থাকা বঙ্গবন্ধুর খুনিদের ফিরিয়ে দিতে অনুরোধ করেন শেখ হাসিনা। জবাবে জন কেরি বলেন, “আমি আপনার কষ্ট বুঝি। এ বিষয়টি পর্যালোচনা পর্যায়ে আছে।’

কেরির কাছে বাংলাদেশের বর্তমান পররাষ্ট্রনীতি ব্যাখ্যা করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে শত্রুতা নয়’- এই নীতি নিয়ে তার সরকার কাজ করছে।

সোমবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কেরির সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলীর আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়েছে। এ সময় সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ নির্মূল নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।

বঙ্গবন্ধুর খুনি রাশেদ চৌধুরীকে ফেরত পাঠানোর বিষয় নিয়ে তিনি বলেন, ”জন কেরিকে রাশেদ চৌধুরীর বিষয়ে আমরা জানিয়েছি। তিনি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র ফিরে বিষয়টি দেখবেন।”

সূত্র: প্রথম আলো, বিডিনিউজ২৪