কলকাতার রাজপথে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রাস্তা দিয়ে দৌড়ে পালাচ্ছে এক যুবক। পিছনে তাকে তাড়া করছেন এক তরুণী। খানিকটা দৌড়ানোর পর যুবকটি একটি চলন্ত বাসে উঠে পড়ল। তাতেও তার নিস্তার নেই। হঠাৎ করেই বাসের পাশে অটোতে করে হাজির ২৭ বছর বয়সের ওই তরুণী। হাত বাড়িয়ে চলন্ত বাসের পাদানি থেকে টেনে নামিয়ে আনলেন যুবককে।
ঘটনার প্রাথমিক ঘোর সামলে সেই তরুণীর সাহায্যে এগিয়ে এলেন উত্তর কলকাতার বেলগাছিয়ার ক্ষুদিরাম বোস সরণির পথচারী এবং বাসযাত্রীরা। ধরা পড়ে গেলের শ্লীলতাহানির ঘটনায় অভিযুক্ত দত্তবাগান এলাকার বাসিন্দা মো. এরশাদ।
তরুণীর লড়াইয়ে সহযোগিতা করেন করেন এক অটোচালকও। এটা হিন্দি সিনেমার কোনো শুটিংয়ের দৃশ্য নয়, বাস্তবে এমন ঘটনাই ঘটল রাতের শহরে। এই তরুণী হাওড়ার সালকিয়ার বাসিন্দা হলেও মঙ্গলবার রাতে তিনি বেলগাছিয়ার এসেছিলেন দত্তবাগানে যাওয়ার জন্য। এই ঘটনার পরও অবশ্য সাহস হারাননি সল্টলেকের তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় চাকরি করা এই তরুণী।
উল্টোডাঙা থানার কর্মকর্তরা পুলিশের গাড়িতে বাড়ি পৌঁছে দিতে চাইলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে তা প্রত্যাখ্যান করে জানিয়ে দেন, ”আজ একটা ঘটনা ঘটেছে বলেই কলকাতার সব এলাকা খারাপ হয়ে গেছে ভাবার যেমন কোনো কারণ নেই, তেমনই আমাকে পুলিশের গাড়িতে বাড়ি যেতে হবে পরিস্থিতি এতটাও খারাপ হয়নি।” পুলিশ কর্মকর্তাদেরও বক্তব্য, এ রকম প্রতিবাদ হলে শহরের অপরাধ এমনিতেই কমতে বাধ্য।
ঠিক কী ঘটেছিল মঙ্গলবার রাতে? তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায় কাজ করা ওই তরুণী রাত সাড়ে ৮টা নাগাদ তাঁর অফিসের গাড়িতে চেপে বেলগাছিয়া নামেন। সেখান থেকে অটোতে ওঠেন দত্তবাগানে আত্মীয়ের বাড়ি যাবেন বলে। অটোতে এক যুবক উঠে তার পাশে বসে। মিল্ক কলোনির কাছে এসে সেই যুবক তরুণীটির শ্লীলতাহানি করে বলে অভিযোগ করেন তিনি। তরুণী চেঁচামেচি করতেই চলন্ত অটো থেকে লাফিয়ে পড়ে দৌড়াতে শুরু করে সে। চলন্ত অটো থেকে লাফিয়ে নামেন তরুণীও। ছুটতে থাকেন দুজনই। খানিক পরে হুঁশ ফেরে অটোচালকের। তিনি গতি বাড়িয়ে তরুণীর সামনে গিয়ে বলেন, ‘উঠে আসুন। তাতে সুবিধা হবে।’ তরুণী অটোতে বসেন।
ততক্ষণে অভিযুক্ত যুবক লাফিয়ে উঠে পড়েছে একটি বেসরকারি বাসে। চালক অটোটি দ্রুতগতিতে বাসের পাশে নিয়ে গেলে পিছনের গেটের পাদানিতে দাঁড়িয়ে থাকা যুবকের হাত ধরে চলন্ত অটো থেকেই টান মারেন তরুণী। হাত ছড়ে গেলেও হাল ছাড়েননি তিনি। হেঁচকা টানে রাস্তায় ছিটকে পড়ে যুবক। প্রথমে হতচকিত হলেও পরে পথচারী এবং বাসের যাত্রীরা নেমে এসে পুরো বিষয়টি জানতে পারেন। ধৃত যুবককে খানিকটা উত্তমমধ্যমও দেওয়া হয়। পরে ওই রাস্তার খানিকটা দূরে থাকা পুলিশ কিয়স্কে খবর দেন তারা। পুলিশ যুবককে গ্রেপ্তার করে।
তাকে বুধবার সকালে আদালতে হাজির করা হয়। ওই তরুণী এ দিন আদালতে বিচারকের কাছে গোপন জবানবন্দিও দেন। বিচারক অভিযুক্তের ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।
বুধবার এক পুলিশ কর্মকর্তা জানান, ”এত সাহসিকতা খুব একটা দেখা যায় না। তবে এ ক্ষেত্রে অটোচালকের ভূমিকাও প্রশংসনীয়। সে সাহায্য না করলে অভিযুক্ত যুবক চলন্ত বাসে উঠে পালিয়ে যেতে পারত। এদের পুরস্কৃত করা যায় কি না, তা নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি আমরা।”
সূত্র: এই সময়