শাজনীন হত্যাঃ শহীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল, বাকিরা খালাস - Women Words

শাজনীন হত্যাঃ শহীদের মৃত্যুদণ্ড বহাল, বাকিরা খালাস

শাজনীন তাসনিম রহমানকে ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় গৃহভৃত্য শহীদুল ইসলামের (শহীদ) মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখে বাকি চারজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে। প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের পাঁচ সদস্যের বেঞ্চ মঙ্গলবার এ রায় দেন।

খালাস পাওয়ারা হলেন বাড়ির গৃহপরিচারিকা দুই বোন এস্তেমা খাতুন (মিনু) ও পারভীন,
বাড়ির সংস্কারকাজের দায়িত্ব পালনকারী ঠিকাদার সৈয়দ সাজ্জাদ মইনুদ্দিন হাসান ও তাঁর সহকারী বাদল।

প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চে ধর্ষণ ও হত্যার দায়ে ফাঁসির আদেশ পাওয়া পাঁচ আসামির আপিলের শুনানি শুরু হয়েছিল গত ২৯ মার্চ। ওই বেঞ্চের অপর দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ও বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার।  বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা ও বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলীকে যুক্ত করে গত ৫ এপ্রিল পাঁচ সদস্যের বৃহত্তর বেঞ্চ গঠন করে শুনানি নেওয়া হয়। ওই বৃহত্তর বেঞ্চেই আসামিদের আপিল শুনানি শেষে গত ১১ মে রায় অপেক্ষমাণ রাখা হয়। আইনজীবী নজরুল ইসলাম চৌধুরী বাদীপক্ষে শুনানি করেন। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিনউদ্দিন, এ এস এম আবদুল মবিন ও সরোয়ার আহমেদ। আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও এস এম শাহজাহান আসামিপক্ষে শুনানি করেন । রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল খোন্দকার দিলীরুজ্জামান।

১৯৯৮ সালের ২৩ এপ্রিল রাতে গুলশানে নিজ বাড়িতে খুন হন ট্রান্সকম গ্রুপের কর্ণধার লতিফুর রহমানের মেয়ে শাজনীন। শাজনীন তখন ঢাকার স্কলাস্টিকা স্কুলে নবম শ্রেণিতে পড়তেন। পরদিন শাজনীনের বাবা গুলশান থানায় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় একটি হত্যা মামলা করেন। একই বছরের ৪ সেপ্টেম্বর ওই ঘটনায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একটি ধর্ষণ ও হত্যা মামলা করে সিআইডি। তদন্ত শেষে প্রথম মামলায় ঢাকার অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালত-১ এবং দ্বিতীয় মামলায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন বিশেষ আদালতে অভিযোগপত্র দেয় পুলিশ। দুটি মামলাতেই অভিযোগ গঠন করেন আদালত।
দুটি মামলারই অভিযোগ গঠনের আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে আবেদন করেন আসামিরা। ১৯৯৯ সালের ৬ জুলাই বিচারপতি মোহাম্মদ আবদুল করিম ও বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের (পরে প্রধান বিচারপতি) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রায়ে বলেন, যেহেতু নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ইতিমধ্যে আসামিদের খুনের অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে বিচারাধীন ধর্ষণ ও হত্যা মামলাটির কার্যক্রম চলবে। কিন্তু আসামিদের বিরুদ্ধে অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজের আদালতে বিচারাধীন হত্যা মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত থাকবে। ওই রায়ে হাইকোর্ট বলেন, ধর্ষণ ও হত্যা দুটি পৃথক অপরাধ, একটি আরেকটি থেকে আলাদা।

এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আসামিরা আপিল বিভাগে যান। ১৯৯৯ সালের ১১ নভেম্বর তৎকালীন প্রধান বিচারপতি মোস্তফা কামাল, বিচারপতি লতিফুর রহমান (পরে প্রধান বিচারপতি), বিচারপতি এ এম মাহমুদুর রহমান ও বিচারপতি মাহমুদুল আমিন চৌধুরীর (পরে প্রধান বিচারপতি) সমন্বয়ে গঠিত আপিল বিভাগের বেঞ্চ আসামিদের আপিল আবেদন খারিজ করে দেন। সর্বোচ্চ আদালত রায়ে বলেন, হাইকোর্ট সঠিকভাবেই নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে ধর্ষণ ও হত্যার অভিযোগে চলা মামলাটির কার্যক্রম চালানোর নির্দেশ দিয়ে অন্য মামলাটির কার্যক্রম স্থগিত রাখতে বলেছেন। এটা এমন একটি মামলা, যেখানে ধর্ষণের সময় হত্যাকাণ্ড ঘটেনি। বরং স্পষ্টত এখানে প্রথমে ধর্ষণ ও পরে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। ধর্ষণ ও হত্যা দুটি আলাদা অপরাধ এবং এ ক্ষেত্রে একই অপরাধে দুবার বিচার হওয়ার ঘটনা ঘটবে না।

সর্বোচ্চ আদালত থেকে ছাড়পত্র পাওয়ার পর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতে মামলাটির বিচার চলতে থাকে। ২০০৩ সালের ২ সেপ্টেম্বর ঢাকার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আদালতের বিচারক কাজী রহমতউল্লাহ মামলাটির রায় ঘোষণা করেন। রায়ে শাজনীনকে ধর্ষণ ও খুনের পরিকল্পনা এবং সহযোগিতার দায়ে ছয় আসামিকে ফাঁসির আদেশ দেন আদালত।

বিচারিক আদালতের রায়ের পর মৃত্যুদণ্ড অনুমোদনের (ডেথ রেফারেন্স) জন্য মামলাটি হাইকোর্টে যায়। একই সঙ্গে আসামিরাও আপিল করেন। ২০০৬ সালের ১০ জুলাই হাইকোর্ট পাঁচ আসামি হাসান, শহীদ, বাদল, মিনু ও পারভীনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন।

এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের অনুমতি চেয়ে আবেদন (লিভ টু আপিল) করেন চার আসামি হাসান, বাদল, মিনু ও পারভীন। ২০০৯ সালের ২৬ এপ্রিল সাজাপ্রাপ্ত চার আসামির লিভ টু আপিল মঞ্জুর করেন আপিল বিভাগ। ফাঁসির আদেশ পাওয়া আরেক আসামি শহীদ জেল আপিল করেন। ১১ এপ্রিল ওই আপিল শুনানি শেষ হয়।

সূত্রঃ প্রথম আলো পত্রিকা