রোমাঞ্চকর জয়ে দশমাস না খেলার দূরত্ব ঘুচালো বাংলাদেশ - Women Words

রোমাঞ্চকর জয়ে দশমাস না খেলার দূরত্ব ঘুচালো বাংলাদেশ

কোথায় যেন একটা গাণিতিক মিল! ১০ মাস পরে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে নামা বাংলাদেশ ১০ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে পড়ার দশায়! জয়ের জন্য তখন আফগানদের দরকার ৭৭ রান। পুরো ১০ ওভার হাতে, সাথে ৮ উইকেট। যেন জয়টা শুধুই সময়ের ব্যাপার। তবে কি ১০ মাস পরে ফেরাটা হবে অপয়া হার দিয়ে? এরকম দোলচাল যখন ১৬ কোটি তনু-মনে, তখন কে ভেবেছিল ১০ মাসের দূরত্বটা ১০ ওভারের রোমাঞ্চে জিততে চায় বাংলাদেশ! শেষ ১০ ওভারে কি দূর্দান্ত লড়েই না ঘুরে দাঁড়াল। আফগান চ্যালেঞ্জকে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজের প্রথম ম্যাচ ৭ রানে জিতলো বাংলাদেশ।

টস জয়ী স্বাগতিকরা যখন নির্ধারিত ওভারে সবকটি উইকেট খুইয়ে ২৬৫ রান করল, তখন মনের কোণে কোথাও সুক্ষ্ম ব্যথার মতো করে মনে হলো-রান কম হয়ে গেলো না তো? সেই গোপন শঙ্কা গোপন করে বল হাতে নামা মাশরাফিদের কিছুটা বিপদেই ফেলে দিয়েছিলেন মোহাম্মদ নবীরা পরিপক্ক ব্যাটিং দিয়ে। সাবির নূর আর মোহাম্মদ শাহজাদের উদ্বোধনী জুটি দারুণ শুরু করেছিল। দলীয় ৪৬ রানের মাথায় শাহজাদকে ফিরিয়ে দিয়ে প্রথম আঘাতটা হেনেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। ততক্ষণে ২১ বলে ৪টি বাউন্ডারি ও ১টি ছক্কায় দ্রুত ৩১ রান করে ভয়ংকর হয়ে উঠছিলেন শাহজাদ। পরের ওভারেই নূরকে ব্যক্তিগত ৯ রানের মাথায় এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলে নিজের অনন্য রেকর্ড গড়ার পথে এক ধাপ এগিয়ে যান সাকিব। তবে বিপদ তখনও ওৎ পেতে ছিল। রহমত শাহ ও হাসমতউল্লাহ শহীদি এমন সতর্কতা ও বিচক্ষণতার সাথে ব্যাট করতে লাগলেন যে রীতিমতো বাংলাদেশের মাথা ব্যথার কারণ হয়ে উঠলেন এই জুটি। দলীয় স্কোরকে ৪৬ রান থেকে ১৯০ রানে নিয়ে গেলেন তারা। ‘ফেবিকলের’ সেই জোড়া ভাঙ্গতে ত্রাণ কর্তা হয়ে এলেন তখন বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন সাকিব আল হাসান। ৯৩ বলে ২ বাউন্ডারী ও ৩ ছক্কায় ৭১ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলা রহমত শাহকে ফিরিয়ে দিয়ে তিনি যেন দম বন্ধ হয়ে আসা বাংলাদেশকে বুক ভরে শ্বাস নেওয়ার সুযোগ করে দেন। সেই সাথে নিজের অনন্য রেকর্ডও গড়ে বসেন। দেশের হয়ে তিন ফর্মের ক্রিকেটেই সর্বোচ্চ উইকেট শিকারী একমাত্র বোলারের ইতিহাস গড়েন এই তারকা অলরাউন্ডার। তবে রহমত বিদায় নিলেও হাসমতউল্লাহ এবার অভিজ্ঞ নবীর সাথে জুটি বেঁধে আবারও প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেন। দলীয় সংগ্রহ ২১০ এ পৌছার পর আঘাত হানেন তাইজুল। ক্যারিয়ারের প্রথম অর্ধশত করা (১১০ বলে ৭২ রান) হাসমতউল্লাহকে যখন তাইজুল ফিরিয়ে দেন তখন ম্যাচে ভালোভাবেই ছিল আফগানিস্তান। একটু পর নজীবুল্লাহ জাদরানকে ফিরিয়ে আবারও খেলা জমিয়ে দেন মাশরাফি।

৪ ওভারে ২৮ রান দরকার এমন অবস্থায় বোলিংয়ে এলেন সাকিব। প্রথম বলে এক রান, এর পর আর কোনো রান হলো না ওই ওভারে। কিন্তু তৃতীয় বলটিতেই ম্যাচটি বাংলাদেশের দিকে হেলে পড়তে পারত। সাকিবের দুর্দান্ত এক বলে ক্যাচ তুলেছিলেন স্টানিকজাই, কিন্তু মুশফিক যে ক্যাচটি ধরতেই পারলেন না!

তবে সেই দুঃখ কাটল পরের ওভারেই। আগের ৬ ওভারে ৪৯ রান নিয়ে কোনো উইকেট নেই। ভয়ংকর চাপে বোলিং করতে এসেও মাত্র ৬ রান দিয়ে দুই দুইটি উইকেট তুলে নিলেন তাসকিন। ২ ওভারে দরকার ২১ রান এমন পরিস্থিতিতে নিজের জাত চেনালেন পুরো ম্যাচে অদৃশ্য থাকা রুবেল হোসেন। একের পর এক ইয়র্কার। প্যাডেল স্কুপে একটি চার খেলেও শেষ বলে বোল্ড রশিদ খান।
শেষ ওভারে দরকার ১৩ রান। বোলিংয়ে ফিরলেন তাসকিন। আগের ওভারেই দুই উইকেট নিয়ে ম্যাচ টেনে এনেছেন বাংলাদেশের দিকে। কিন্তু শেষ ওভারে চাপটা তবু কমল না। এই ওভারে হয় হিরো হবেন, নয়তো জিরো। প্রথম বলে ২ রান চাপ আরও বাড়িয়ে দিল। দ্বিতীয় বলেই এলবিডব্লু মিরওয়াইশ আশরাফ। পরের ২ বলে মাত্র ৩ রান। শেষ দুই বলে দরকার ৮ রান। পঞ্চম বলে ডট! কোনো অতিরিক্ত রান না হলে বাংলাদেশ তো জিতেই গেছে। শেষটা সর্বোচ্চ সুন্দর করতেই তাসকিন শেষ বলে ক্যাচ তুলতে বাধ্য করলেন জাদরানকে। ৭ রানে জিতে গেল বাংলাদেশ।

এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নামে বাংলাদেশ। ১০ মাস পর ওয়ানডে খেলতে নামা বাংলাদেশের শুরুটা ছিল নড়বড়ে। পঞ্চম বলেই ফিরে যান সৌম্য সরকার। দৌলত জাদরানের বল পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড় করে মিডউইকেটে সহজ ক্যাচ দেন এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান।
তিন নম্বরে নামা ইমরুল কায়েসের শুরুতে কয়েকবার বেঁচে গেছেন অল্পের জন্য। ১৩, ১৭, ২১ রানে ক্যাচ দিয়ে ফিরতে পারতেন তিনি। তবে ধীরে ধীরে নিজেকে ফিরে পাওয়া এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের সঙ্গেই প্রতিরোধ গড়েন তামিম।

বিপজ্জনক হয়ে উঠা দ্বিতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন মোহাম্মদ নবি। দ্বিতীয় স্পেলে ফেরা এই অফ স্পিনারের বল ইমরুলের ব্যাটের কানায় লেগে প্যাড হয়ে স্টাম্পে আঘাত হানে।
তৃতীয় উইকেটে মাহমুদউল্লাহর সঙ্গে ৭৯ রানের আরেকটি কার্যকর জুটি উপহার দেন তামিম। রশিদ খানের বলে কাট করে চার হাঁকিয়ে ৬৩ বলে পৌঁছান অর্ধশতকে। মিরওয়াস আশরাফের বল সীমানা ছাড়া করতে গিয়ে লংঅফে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় তার দারুণ ইনিংসটি।

৯৮ বলে ৯টি চারে ৮০ রান করার পথে দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯ হাজার রানের মাইলফলক অতিক্রম করেন তামিম।
বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিবের সঙ্গে মাহমুদুউল্লাহর ৪০ রানের জুটিতে দুইশ’ পার হয় বাংলাদেশের সংগ্রহ। দৌলতের বলে লংঅন ও মিডউইকেটের মাঝ দিয়ে দারুণ এক চারে ৬৫ বলে অর্ধশতকে পৌঁছান এই মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান।

রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় নবির বলে সীমানায় মিরওয়াইস আশরাফকে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন মাহমুদউল্লাহ। ৭৪ বলে খেলা তার ৬২ রানের ইনিংসটি গড়া ৫টি চার ও দুটি ছক্কায়।
৪১তম ওভারে বাংলাদেশের সংগ্রহ ছিল ৩ উইকেটে ২০৩ রান। তখনও মাঠে নামতে বাকি মুশফিকুর রহিম, সাব্বির রহমান, মাশরাফি বিন মুর্তজাদের। সেখান থেকে ২৮০/২৯০ রান অসম্ভব ছিল না।
রশিদ খানের স্পিনে পরপর দুই ওভারে মুশফিক ও সাব্বির ফিরে গেলে চাপে পড়ে স্বাগতিকরা। বোল্ড হয়ে ফিরেন মুশফিক, বিতর্কিত সিদ্ধান্তে এলবিডব্লিউ হন সাব্বির। দুই ব্যাটিং ভরসার কেউই দুই অঙ্কে যেতে পারেননি।

বাংলাদেশকে আড়াইশর পথে রাখেন বিশ্বের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার সাকিব। কয়েকটি সহজ ক্যাচ হাতছাড়া আফগানরা এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ফেরায় দুর্দান্ত এক ক্যাচে। ৪০ বলে তিনটি চারে ৪৮ রান করেন সাকিব।

অভিষেকে একটি উইকেট পেয়েছেন আফগানিস্তানের নাভিন-উল-হক। ১৭ বছর বয়সী পেসার ফিরিয়েছেন মাশরাফিকে। ৭ উইকেট হাতে থাকা বাংলাদেশ শেষ ১০ ওভারে ৬৯ রানের বেশি রান করতে পারেনি। ৭৩ রানে ৪ উইকেট নেন নেন পেসার দৌলত। দুটি করে উইকেট নেন রশিদ ও নবি।