যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন সাহায্য সংস্থার কর্মীরা - Women Words

যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন সাহায্য সংস্থার কর্মীরা

বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন সাহায্য সংস্থার কর্মীরা নানা দেশে কাজে নিয়োজিত থাকেন। কাজের সময় অনেক ধরনের ঝুঁকির মধ্যে থাকেন তারা। কিন্তু নারী উন্নয়ন কর্মীরা ধর্ষণ বা যৌন হেনস্থার শিকার হচ্ছেন বলে সম্প্রতি তথ্য প্রকাশিত হয়েছে।

এক পরিসংখ্যানে উঠে এসেছে, এসব ঘটনার জন্য বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সহকর্মীরাই দায়ী।। আর সাহায্য সংস্থাগুলো এ বিষয়ক তথ্য চেপে চাওয়ার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

যুদ্ধ হোক বা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, জরুরী সাহায্য সংস্থার কর্মীরা সাধারণত বেশ ঝুঁকিতে থাকেন। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে কাজে নিয়োজিত নারী কর্মীরা থাকেন বাড়তি ঝুঁকিতে।

মেগান নোবার্ট দক্ষিণ সুদানে জাতিসংঘ শান্তি রক্ষী বাহিনীর সাথে সাহায্য কর্মী হিসেবে কাজ করতেন। বছর খানেক আগে নিজের সহকর্মীর কাছেই ধর্ষণেরর শিকার হয়েছেন।

“সাহায্য সংস্থার কর্মীরা আসলে একটি ছোট গোষ্ঠী। আমি যে তাঁবুতে থাকতাম সেটা তার তাঁবুর খুব কাছেই ছিলো। লোকটা মাঝে মাঝে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতো।

এই বিষয়টি নিয়ে আমার মায়ের সাথে কথা বলা ছিলো আমার জীবনের সবচেয়ে কঠিন কাজের একটি। আমি জানি এটা তার জন্য একটি ভয়ানক খবর ছিলো। আমি বলেছিলাম সে যেন বিষয়টা আমার বাবাকে না জানায়।”

বছর খানেক আগের এই ঘটনায় ঐ সহকর্মী তাকে চেতনানাশক ঔষধ খাইয়েছিলো।

“প্রাথমিক পরীক্ষায় দেখা গিয়েছিলো যে সে মরফিন, কোডিন, অক্সিকোটিন এরকম কয়েকটা ঔষধের এক ধরনের সংমিশ্রন ব্যবহার করেছিলো। কিছু দেশে এগুলো পাওয়া খুবই সহজ”-বলছিলেন মেগান।

মেগান যে অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে গেছেন সেটি নাকি সাহায্য সংস্থাগুলোর নারী কর্মীদের জন্য বেশ নিয়মিত ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সম্প্রতি এক জরিপে দেখা গেছে ৫৪ শতাংশ ঘটনার জন্য নিজের সংস্থার সহকর্মীরাই দায়ী।

“আপনি যখন মাঠ পর্যায়ে কাজে নিয়োজিত থাকবেন তখন আপনার দুনিয়াটা খুবই ছোট থাকবে। মাঠে সাহায্য দেয়ার মতো ব্যবস্থা বা যোগাযোগের মাধ্যম খুবই সীমাবদ্ধ থাকে। একদম ভিন্ন একটি দেশে সংস্কৃতি থাকে অন্য রকম। তারপর থাকে ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ। সেখানে যে পরিবেশ তৈরি হয় তাতে এমন ঘটনা ঘটার সম্ভাবনা বেড়ে যায়”।

মেগানের মতো অভিজ্ঞতার মধ্যে যাওয়া অনেক নারী কর্মীরা বিষয়টি গোপন রাখেন।

সাহায্য সংস্থার কর্মীদের জন্য ইদানিং যৌন হেনস্থা বা ধর্ষণের ঘটনা মোকাবেলার বাড়তি প্রশিক্ষণ দেয়া হচ্ছে।

লন্ডনে এমন একটি কেন্দ্রের প্রশিক্ষক ক্যাথরিন প্লামারেজ। তিনি বলছেন, শুধু নারী নয় পুরুষরাও যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন।

“মূলত নারীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। কিন্তু পুরুষরাও হচ্ছেন। এতদিন ধরে বিষয়টিকে শুধু মেয়েদের সমস্যা বলেই মনে করা হতো। আমাদের সেই ধারণা থেকে সরে আসতে হবে। পুরুষরা যখন এমন ঘটনার মধ্যে দিয়ে যান তারা একেবারেই তা প্রকাশ করেন না”-বলছেন ক্যাথরিন প্লামারেজ।

ধর্ষণের মতো ঘটনা নারী পুরুষ সবার জন্যেই দীর্ঘ দিনের প্রভাব রেখে যায়। রাতে ঘুমের মধ্যে দু:স্বপ্ন, হঠাৎ শব্দে আতংকিত হয়ে ওঠা, উদ্বেগ, বিষাদ এমন অনেক সমস্যার জন্ম দেয়।

কর্মীদের এসব সমস্যা মোকাবেলায় সহায়তা বা এসব ঘটনাই যাতে না ঘটে সেই দায়িত্ব উন্নয়ন বা সাহায্য সংস্থাগুলো কতটা নিচ্ছে?

জাতিসংঘে মানবিক সাহায্য সংস্থা ওরচা’র কর্মকর্তা ইয়েন স্লেগ বলছেন “পরিস্কারভাবেই এই সমস্যাটা রয়েছে এবং বিষয়টিকে আমাদের খুবই গুরুত্বের সাথে নিতে হবে। ধর্ষণ অবশ্যই খুবই সহিংস একটি ঘটনা।

একদিকে কর্মীদের নিরাপত্তা দেয়া অন্যদিকে বিপর্যস্ত মানুষকে সহায়তা দেয়া এই দুটো বিষয়ে সঠিকভাবে ভারসম্য বজায় রাখতে গিয়ে আমরা প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করছি। বিষয়টা খুবই জটিল। এ দুটোর সামঞ্জস্য না থাকলে আমাদের কার্যক্রম ঝুঁকিতে পড়ে যাবে”।

কিন্তু সাহায্য সংস্থাগুলো এ ধরনের অভিযোগে সহায়তা এবং তদন্তের গ্রহণযোগ্য পদ্ধতি তৈরিতে এখনও পিছিয়ে রয়েছে।

আর তাই মেগানের মতো অনেকে কাজ ছেড়ে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন।

সূত্র: বিবিসি