যে স্থাপত্যগুলো পেয়েছে এবারের আগা খান পুরস্কার - Women Words

যে স্থাপত্যগুলো পেয়েছে এবারের আগা খান পুরস্কার

স্থাপত্য শিল্পের অন্যতম সেরা আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি হল আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার। এ বছর বিশ্বের ৩৪৮টি স্থাপত্যকর্ম থেকে জুরিদের বিচারে ছয়টি স্থাপনাকে এ পুরস্কারের জন্য বেছে নেয়া হয়েছে। যার দুইটি স্থাপত্যকর্মই বাংলাদেশের। এই দুই স্থাপত্যকর্ম দিয়ে দেশের জন্য অনন্য গৌরব ‘আগা খান ২০১৬ পুরস্কারে’ ভূষিত হয়েছেন দুই বাংলাদেশী স্থপতি। পুরস্কার জয়ী নান্দনিক সেসব স্থাপনাকলার বিষদ বিবরণআর্কিটেকচারাল রেকর্ড.কম থেকে পাঠকের জন্য অনুবাদ করেছেন অদিতি দাস

 

বায়তুর রউফ মসজিদ
bait-ur-rouf-mosque-women-w৭৫৪ বর্গমিটারের মসজিদটি রাজধানীর দক্ষিনখান থানার ফায়দাবাদে অবস্থিত। এর স্থপতি বাংলাদেশের মেয়ে মেরিনা তাবাসসুম। ২০১২ সালে এর নির্মাণ কাজ শেষ হয়।মসজিদটির বিশেষত্ব হলো, বাংলাদেশের আর সব মসজিদের মত এতে কোন গম্বুজ বা মিনার নেই। চতুর্দিকে আটটি পিলারের ওপর এটি তৈরি। এর মধ্যে রয়েছে বায়ু চলাচলব্যবস্থা। ফলে মসজিদের ভেতর শীত বা গরমে আবহাওয়ার বিরূপ প্রভাব বোঝা যায় না। আর রয়েছে আলোর চমৎকার বিচ্ছুরণ। আলো প্রবেশের জন্য চারদিকে রাখা হয়েছে বিশেষ ব্যবস্থা। এই মসজিদে আলো হাওয়া খেলার যে ব্যবস্থা মেরিনা রেখেছেন, সেটাই আগা খান পুরস্কারের জুরি বোর্ডের প্রশংসা কুড়িয়েছে।মসজিদটির নকশার বিশেষত্ব হলো, কিবলার দিকে ১৩ ডিগ্রি কোনাকুনি করা একটি থাম। এর স্থাপত্য তৈরি হয়েছে সুলতানি আমলের মসজিদের অনুপ্রেরণায়। ।
ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার
friendship-centre-women-worগাইবান্ধার ফুলছড়ি উপজেলার মদনেরপাড়া গ্রামে বাংলাদেশের স্থপতি কাশেফ মাহবুব চৌধুরীর নকশায় গড়ে উঠেছে ফ্রেন্ডশিপ সেন্টার। মূলত এটি একটি এনজিও ট্রেইনিং সেন্টার। গাইবান্ধা-বালাসী সড়ক ঘেঁষে গড়ে ওঠা ভবনের আয়তন ৩২ হাজার বর্গফুট। স্থানীয়ভাবে হাতে তৈরি ইট, কাঠ আর পাথরের মিশেল ছাপিয়ে নজর কাড়ে এ ভবনের ঘাসে ছাওয়া সবুজ ছাদ। ইট-সুড়কির সাথে প্রকৃতির মেলবন্ধনই মূলত জুরি বোর্ডের দৃষ্টি কেড়েছে। এটি একাধিক ব্লকে বিভক্ত একটি ভবন। এতে রয়েছে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, লাইব্রেরি, অভ্যন্তরীণ খেলাধুলা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা। বারান্দা ও খোলা প্যাভিলিয়ন দিয়ে একটির সঙ্গে আরেকটি সংযুক্ত । ভবনটি বিশাল হলেও পুরো ভবনটিই দৃষ্টির আড়ালে। এর পাশ দিয়ে চলে গেছে গ্রাম্য রাস্তা। সেখানে দাঁড়িয়ে ভবনটি চোখেই পড়বে না। কারণ, পুরো ভবনটি মাটির তলায়। এর বিভিন্ন কক্ষের ছাদ মাটির সমতলে। এতে লাগানো সবুজ ঘাস মিশে গেছে আশপাশের মাঠের সঙ্গে। দেখে মনে হয় যেন প্রকৃতির মধ্যে মিশে অদৃশ্য হয়ে আছে ভবনটি।
হুটং চিলড্রেনস লাইব্রেরি অ্যান্ড আর্ট সেন্টার
micro-yuaner-women-wordsচীনের স্থপতি ঝাং কে এবং স্ট্যান্ডার্ডআর্কিটেকচার ও জেডএও এর এক দল স্থপতিরা মিলে এর নকশা করেছেন। এটি বেইজিংয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। যা থেকে তিয়ানানমেন স্কয়ারের দূরত্ব এক কিলোমিটার। গ্রন্থাগার ও চিত্রাংকন কেন্দ্রটির বাইরে রয়েছে সিড়ি, যার মাধ্যমে শিশুরা ছাদে যেতে পারে এবং উঠোনের মাঝখানে অবস্থিত গাছের ছায়ায় খেলা করতে পারে। গাছটির নিচে রয়েছে একেবারে ছোট আকারের এটি রিডিং রুম, যার দেয়াল কংক্রিট আর চাইনিজ কালি দিয়ে তৈরি। ৩০০ বছরের পুরোনো উঠোনে বিদ্যমান কাঠামোর সঙ্গে নতুন আয়তনের ইট সংযুক্ত করা হয়েছে। ভবনটি শিশুদের ডে কেয়ার বা দিবা যত্ন কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।
সুপারকিলে পার্ক
superkilen-women-wordsডেনমার্কের স্থপতি বার্কে ইঙ্গেলস এর নকশা করা সুপারকিলে পার্ক। এটি কোপেনহেগেনে গড়ে তোলা হয়েছে। এটি কোপেনহেগেনের সবচেয়ে বিচিত্র নগরায়ন। যা আশেপাশে বসবাসরত বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের আভিজাত্যতা তুলে ধরেছে। ২০১১ সালে গড়ে তোলা পার্কটিকে বার্কে এতটাই বৈচিত্রময় ও আবেদনময় করে গড়ে তুলেছেন যে এখানে তিনি রেখেছেন মোটরবাইকের জন্য আলাদা পথ, খেলাধুলার জন্য ভিন্ন জায়গা, ও প্লেগ্রাউন্ড বা খেলার মাঠ। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা হয়েছে বিভিন্ন বিষয়বন্তু, যেমন কাজাখস্তানের বাস স্টপ, মরক্কোর ঝর্ণা, জাপান থেকে কালো অক্টোপাসের ভাস্কর্য। আরও রয়েছে নিচু জায়গায় গড়ে তোলা বাস্কেটবল কোর্ট। সুপারকিলের রেড স্কয়ার বা লাল চত্ত্বরে রয়েছে জনসমাগমের জন্য তুলনামূলকভাবে অনেক বেশি জায়গা।
তবিয়ত পেডেস্ট্রিয়ান ব্রিজ
tabiat-pedestrian-bridge-woইরানের স্থপতি লেইলা আরাগিয়ান,আলীরেজা বেহজাদি ও দিবা টেনসিল আর্কিটেকচারের নকশা করা তবিয়ত পেডেস্ট্রিয়ান ব্রিজ বা পথচারি পারাপারের জন্য সেতু। এটি ইরানের রাজধানী তেহরানে গড়ে তোলা হয়েছে। যা তেহরানের দুইটি পার্কের মধ্যে সংযোগ স্থাপন করেছে। তরঙ্গায়িত ব্রিজটিতে রয়েছে তিনটি আলাদা ধাপ এবং চলাচলের জন্য রয়েছে ঢালু পথ। প্রতিটা ধাপেই রয়েছে বসার স্থান ও সবুজ গাছপালা দিয়ে ঘেরা বাগান। সবচেয়ে নিচের ধাপে রয়েছে রেস্তোরাঁ।
ইসাম ফারেস ইনস্টিটিউট
issam-fares-institute-womenলেবাননের স্থপতি জাহা হাদিদের নকশা করা ইসাম ফারেস ইনস্টিটিউট। এটি রাজধানী বৈরুতের আমেরিকান ইউনিভার্সিটির পাবলিক পলিসি অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স বিভাগের জন্য ২০১৪ সালে গড়ে তোলা হয়েছে। কংক্রিটের বিল্ডিংটি অনেকগুলো ঢালু রাস্তা, নতুন ভবনসমূহ ও বাইরের স্থানগুলোর মাধ্যমে ক্যাম্পাসের সাথে নব সংযোগ স্থাপন করেছে। এতে রয়েছে দ্বিগুণ উচ্চতার আচ্ছাদনযুক্ত (কাভারড) প্রবেশপথের উঠোন, যা এই ইনস্টিটিউটের প্রধান বৈশিষ্ট্য। ভবনটির ছাদ থেকে রয়েছে সমুদ্র দেখার সুযোগ। আরও আছে আলোয় পরিপূর্ণ আরামদায়ক বসার স্থান-যেখানে পড়াশুনা ও মনকে শিথিল করা যায়।

অদিতি দাস, সম্পাদক, উইমেন ওয়ার্ডস
আর্কিটেকচারাল রেকর্ড.কম থেকে অনূদিত