মুক্তিযোদ্ধাকে পেটানোর ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড় - Women Words

মুক্তিযোদ্ধাকে পেটানোর ভিডিও নিয়ে ফেসবুকে তোলপাড়

একটি দোকানের সামনে চেয়ারে বসে আছেন এক প্রৌঢ় ব্যক্তি। বলা নেই কওয়া নেই, হঠাৎ তাকে এসে নির্বিচারে পেটাতে শুরু করল একদল যুবক।

তাদের হাতে লাঠি, স্টিলের রড। কমপক্ষে তিনজন মিলে পেটাচ্ছিল। দলে তারা আরো কয়েকজন। একজন এগিয়ে এসে আরেকজনের হাত থেকে লাঠি কেড়ে নিয়ে আবার পেটাতে শুরু করলেন। দৃশ্যটি ধরা পড়েছে একটি দোকানে বসানো ক্লোজ সার্কিট (সিসি) ক্যামেরায়।

ভিডিওতে আরো দেখা যাচ্ছে, পেটানোর এক পর্যায়ে অনতিদূর থেকে আরেকজন তরুণ এসে প্রৌঢ়কে রক্ষার চেষ্টা করলেন। আক্রমণকারী দল তখন প্রৌঢ়কে ছেড়ে এই তরুণকে পেটাতে শুরু করল। পেটাতে পেটাতে তাকে ক্যামেরার আওতার বাইরে নিয়ে গেল। কিছুক্ষণ পর তারা আবার ফিরে এলো।

এদের একজন ওই প্রৌঢ়কে সম্ভবত ছুরি নিয়ে আঘাত করতে উদ্যত হল।

পাশের এক ব্যক্তি তাকে নিবারণ করল।

এই ভিডিওটি সোমবার ( ৭ নভেম্বর) থেকে বাংলাদেশের সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ঘুরছে।

যদিও, সিসিটিভির ভিডিওতে ঘটনার সময়কাল দেখা যাচ্ছে ১৮ই অক্টোবর, সন্ধ্যে পৌনে সাতটা। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঘটনাটি ঘটেছিল ঝিনাইদহের শৈলকূপায়।

গত মাসের শেষ দিকে এই ভিডিওটি সংগ্রহ করে বেসরকারি এনটিভিতে প্রচার করেন ঝিনাইদহের সংবাদদাতা মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, যাকে পেটানো হচ্ছে তার নাম মুক্তার আহমেদ মৃধা। তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা।

পরে যে তরুণকে পেটানো হয়েছে, তিনি আহমেদের ছেলে সুমন মৃধা। আর যারা পেটাচ্ছিলেন তারা স্থানীয় যুবলীগ সভাপতি ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শামিম হোসেন মোল্লার অনুসারী ছাত্রলীগ-যুবলীগ নেতা-কর্মী।

মিজানুর রহমান উল্লেখ করেন, স্পষ্টতই এই ঘটনাটি স্থানীয় আওয়ামী লীগের গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের ফসল।মূলত টেন্ডার প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়া সংক্রান্ত কলহের জের ধরে এই ঘটনা ঘটে। এরকম ঘটনা বাংলাদেশে নতুন নয়।

কিন্তু ক্যামেরার সামনে এভাবে একজন প্রৌঢ় মুক্তিযোদ্ধাকে নির্মম প্রহারের ভিডিও দেখে ফেসবুকে অনেকেই তীব্র প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছেন।

মাহবুব হোসেন নামে একজন ফেসবুকে এই ভিডিওটি শেয়ার করে লিখেছেন, “প্রতিবাদের ভাষা হারানো নির্বাক আমি!! এই জন্ম কুলাঙ্গারদের পাপ মনে করি আমি”।

জানা যাচ্ছে, এ ঘটনার কয়েকদিন পর শামিম হোসেন মোল্লা ও যুবলীগ সাধারণ সম্পাদক শামীম জোয়ারদার সহ দশ জনকে আসামী করে একটি মামলা করেন মুক্তার আহমেদের ছেলে।

পুলিশ শামীম হোসেন মোল্লা ও শামিম জোয়ারদারকে গ্রেপ্তারও করে। কিন্তু অচিরেই তারা জামিনে মুক্তি পেয়ে যান।

এদিকে, পিটুনিতে মারাত্মক আহত মুক্তার আহমেদ পঙ্গু হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নেয়ার পর এখন ঢাকার বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।

যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, তার হাতের অবস্থা খুব খারাপ। সেটি কয়েক জায়গায় ভেঙে গেছে। রড ঢুকে গিয়ে মারাত্মক ক্ষত তৈরি হয়েছে।

এর আগে এক দফা অস্ত্রোপচার হয়েছিল। মঙ্গলবার হাতে দ্বিতীয় দফায় অস্ত্রোপচার হয়েছে।

ছেলে সুমন আহমেদ সম্পর্কে তিনি জানান, তার দু পাই ভেঙে দিয়েছে আক্রমণকারীরা। সে পঙ্গু হাসপাতালে কয়েক দিন চিকিৎসা শেষে দু পায়ে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায় এখন বাড়িতে অবস্থান করছে।

সূত্র: বিবিসি বাংলা