মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ - Women Words

মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ

বাংলা চলচ্চিত্রের কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের জন্মদিন আজ বৃহস্পতিবার। ১৯৩১ সালের ৬ এপ্রিল পাবনায় জন্মগ্রহণ করেন তিনি।

তাঁর জন্মগত নাম ছিল রমা দাশগুপ্ত। তিনি বাংলার পাশাপাশি হিন্দি চলচ্চিত্রে অভিনয় করেও খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। বাংলা চলচ্চিত্রে উত্তম কুমারের বিপরীতে নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করে তিনি বিশেষ জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিলেন।

১৯৬৩ সালে ‘সাত পাকে বাঁধা’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের জন্য মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবে “সিলভার প্রাইজ ফর বেস্ট অ্যাকট্রেস” জয় করেন সুচিত্রা সেন। তিনিই প্রথম ভারতীয় অভিনেত্রী যিনি কোনো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে পুরস্কৃত হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে ভারত সরকার তাঁকে পদ্মশ্রী সম্মান প্রদান করে। শোনা যায়, ২০০৫ সালে তাঁকে দাদাসাহেব ফালকে পুরস্কার দেওয়ার প্রস্তাব রাখা হয়েছিল; কিন্তু সুচিত্রা সেন জনসমক্ষে আসতে চান না বলে এই পুরস্কার গ্রহণ করেন নি। ২০১২ সালে তাঁকে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সম্মাননা বঙ্গবিভূষণ প্রদান করা হয়।

সুচিত্রার বাবা করুণাময় দাশগুপ্ত ছিলেন এক স্থানীয় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও মা ইন্দিরা দেবী ছিলেন গৃহবধূ। তিনি ছিলেন পরিবারের পঞ্চম সন্তান ও তৃতীয় কন্যা। পাবনা শহরেই তিনি পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি কবি রজনীকান্ত সেনের নাতনী।

১৯৪৭ সালে বিশিষ্ট শিল্পপতি আদিনাথ সেনের পুত্র দিবানাথ সেনের সঙ্গে সুচিত্রা সেনের বিয়ে হয়। তাঁদের একমাত্র কন্যা মুনমুন সেন, নাতনী রাইমা ও রিয়াও খ্যাতনামা অভিনেত্রী। ২০১৪ সালের ১৭ জানুয়ারি কলকাতার বেলভিউ হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন কিংবদন্তি মহানায়িকা সুচিত্রা সেন।

বীরেশ্বর বসু’র ‘শেষ কোথায়’ ছবির মাধ্যমে তাঁর চলচ্চিত্রে যাত্রা শুরু। কিন্তু প্রথম অভিনয় করা ওই ছবিটি মুক্তি পায়নি। এরপর ১৯৫৩ সালে সুকুমার দাশগুপ্তের ‘সাত নম্বর কয়েদী’ ছবিতে সুচিত্রা সেন অভিনয় করেন। আর এটি প্রথম মুক্তি পাওয়া চলচ্চিত্র।

১৯৫২ থেকে ১৯৭৮_এ ২৬ বছরে তিনি ৬২টি ছবিতে অভিনয় করেন। ১৯৫৩ সালে মহানায়ক উত্তম কুমারের সঙ্গে তিনি প্রথম অভিনয় করেন ‘সাড়ে চুয়াত্তর’ এ। উত্তম কুমার-সুচিত্রা সেন হলেন বাংলা চলচ্চিত্রের সর্বশ্রেষ্ঠ জুটি। ১৯৫৪ তে ‘সাত নম্বর কয়েদি’ ‘এটম বোমা’, ‘ওরা থাকে ওধারে, ‘দুলি’ ‘মরণের পরে’, ‘সদানন্দের মেলা’, অন্নপূর্ণার মন্দির’, ‘অগি্নপরীক্ষা’ ‘গৃহপ্রবেশ’ ও ‘বলয়াগ্রাস’ । ১৯৫৫ সালে ‘সাঁঝের প্রদীপ’, ‘সাজঘর’, ‘শাপমোচন’, ‘মেজ বৌ’, ‘ভালোবাসা’ ও ‘সবার উপরে’, ১৯৫৬ সালে ‘সাগরিকা’, ‘শুভরাত্রি’, ‘একটি রাত’, ‘ত্রিযামা’, ‘শিল্পী’ ও ‘আমার বৌ’। ১৯৫৭ সালে ‘হারানো সুর’, ‘চন্দ্রনাথ’, ‘পথে হলো দেরী’ ও ‘জীবন তৃষ্ণা’। ১৯৫৮ সালে ‘রাজলক্ষ্মী-শ্রীকান্ত’, ‘চন্দ্রাণী’ ও ‘সূর্য তোরণ’। ১৯৫৯ সালে ‘চাওয়া পাওয়া’ ও ‘দ্বীপ জ্বেলে যাই’। ১৯৬০ সালে ‘হাসপাতাল’ও ‘স্মৃতিটুকু থাক’ । ১৯৬১ সালে ‘সপ্তপদী’ ১৯৬২ সালে ‘বিপাশা’ ১৯৬৩ সালে সাত পাকে বাঁধা ও ‘উত্তর ফাল্গুনী’ । ১৯৬৪ সালে ‘সন্ধ্যা দীপের শিখা’ ১৯৬৭ সালে ‘গৃহদাহ’ ১৯৬৯ সালে ‘কমল লতা’ এবং ১৯৭৮ সালে ‘প্রণয় পাশা’ ছবিতে অভিনয় করেন তিনি।

তার ৫৩টি ছবিই বক্স অফিস হিট করেছে। সুচিত্রা সেন অভিনীত হিন্দি ছবিগুলো হচ্ছে_ ১৯৫৫ সালে ‘দেবদাস’, ১৯৫৭ সালে ‘মুসাফির’ ও ‘চম্পাকলি’, ‘১৯৬০ সালে ‘বোম্বাই কা বাবু’ ও ‘সরদে’ ১৯৬৬ সালে ‘মমতা’ এবং ১৯৭৪ সালে ‘অাঁধি’। ১৯৭৮ সালে তার শেষ ছবি ‘প্রণয় পাশা’য় অভিনয়ের পর তিনি অন্তরালে চলে যান।

সুচিত্রা সেনের জন্মদিন উপলক্ষে পাবনা জেলা প্রশাসন, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংসদ, পাবনা টেলিভিশন ও অনলাইন সাংবাদিক সমিতি, পাবনা ড্রামা সার্কেল, সুচিত্রা সেন স্মৃতি সংরক্ষণ পরিষদসহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন জন্মদিনের কেক কাটা এবং আলোচনা সভাসহ নানা কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। দিবসটি উদযাপন উপলক্ষে শহরের গোপালপুর মহল্লার হেমসাগর লেনের সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িতে আলোকসজ্জা করা হয়েছে।

মৃত্যুর ছয় মাসের মাথায় একই বছরের ১৭ জুলাই সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক বাড়িটির লিজ বাতিল করে জেলা প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার নির্দেশ দেন। পাবনাবাসীর দাবি ছিল বাড়িটিতে সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ করার। কিন্তু নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে সুচিত্রা সেনের পৈত্রিক ভিটা দখলমুক্ত করার পরও বাড়িটিতে ‘সুচিত্রা সেন স্মৃতি আর্কাইভ’ করার যে পরিকল্পনা তার দৃশ্যমান কোনও অগ্রগতি নেই। এ নিয়ে হতাশ জেলার সাংস্কৃতিক কর্মীরা।