ভারতে কন্যা শিশু কেন এত অনাকাঙ্ক্ষিত? - Women Words

ভারতে কন্যা শিশু কেন এত অনাকাঙ্ক্ষিত?

ভারতে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ প্রক্রিয়া বেআইনি। কিন্তু তা দেশটির অনেক জায়গাতেই চলমান রয়েছে এবং এর বেশ জনপ্রিয়তাও রয়েছে। আর এর ধারাবাহিকতায় চলছে কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যা।

দেশটিতে প্রতিবছর গর্ভপাতের কারণে মারা যায় প্রায় ছয় লাখ কন্যা শিশু। এর একটি বড় অংশই এমন হত্যাকাণ্ডের শিকার বলে এক হিসেবে জানা যাচ্ছে।

কিন্তু ভারতে কন্যা শিশু কেন এত অনাকাঙ্ক্ষিত?

মুম্বাই থেকে প্রায় চারশো কিলোমিটারের মত দক্ষিণ-পূর্ব দিকে একটি শুকিয়ে যাওয়া খাল। এলাকাটি জনবিরল, যদিও খালটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়কের খুব পাশেই এবং সেখানে দাঁড়িয়ে মহাসড়কটি ধরে ছুটে যাওয়া যানবাহন পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে।

এই খালের বাদামি নরম মাটিতেই পোতা ছিল উনিশটি কন্যা শিশুর ভ্রূণ। কয়েক সপ্তাহ আগে, মাটি খুঁড়ে সেগুলোকে উদ্ধার করা হয়। মানবশিশুগুলোর দেহাবশেষ ছিল ছোট ছোট নীল রঙের এক একটি প্লাস্টিক ব্যাগে মোড়ানো।

পুলিশের ধারণা কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যাকারীদের একটি বড়সড় চক্র এই এলাকায় তাদের কার্যক্রম চালাচ্ছে।

পুরো ঘটনাটি বেরিয়ে আসে যখন গর্ভপাত ঘটানোর সময় এক তরুণীর মৃত্যু ঘটে। ২৫ বছর বয়সী সোয়াতি জামদাদির বাবা সুনীল যাদব বলেন, তার মেয়ের গর্ভে ছিল একটি কন্যা শিশু, একারণেই তার স্বামী তাকে গর্ভপাত করতে বাধ্য করে।

পরে যাদব থানায় একটি অভিযোগ করেন, আর এই অভিযোগের সূত্র ধরেই ভ্রূণ হত্যাকারীদের এই চক্রের সন্ধান মেলে।

সুনীল যাদবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, দেয়ালে একটি বড়সড় রঙিন ছবি টানানো। সেখানে হাসিমুখ সোয়াতির পরনে একটি বর্ণীল শাড়ি। যাদব এই ছবি দেখেন আর চোখের পানি মোছেন।

“আমার মেয়ে আর ফিরবে না। কিন্তু যদি ব্যবস্থা নেয়া হয় তাহলে এ ধরণের ঘটনা ঘটা বন্ধ হবে। ভারতীয় পিতা মাতাদেরকে একটি কন্যাকে বড় করতে এবং বিয়ে দিতে অনেক কিছুর মধ্যে দিয়ে যেতে হয়, কিন্তু এই যদি হয় তার পরিণতি, তাহলে এসব করে লাভ কি?”

কয়েক সপ্তাহ আগে তের জনকে গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়। এদের মধ্যে সোয়াতির স্বামী এবং তিনজন চিকিৎসকও ছিলেন।

পুলিশের তদন্ত কর্মকর্তা দীপালি কারে বলছেন, “এদেরকে জিজ্ঞাসাবাদের মাধ্যমে আমরা আবিষ্কার করেছি, এই চক্রের সাথে চারজন মধ্যস্থতাকারী রয়েছে। আর এই চক্রের একজন চিকিৎসক সপ্তাহে কমপক্ষে ২ থেকে ৩ জন মহিলার গর্ভপাত ঘটান”

ছোট্ট এক শহরের সরু একটি গলির পাশে যে হাসপাতালটিতে এই সব গর্ভপাত ঘটানো হচ্ছিল বলে পুলিশের অভিযোগ, কর্তৃপক্ষ কথিত এই হাসপাতালটিকে সিলগালা করে রেখেছে।

সমাজকর্মী বারশা দেশপান্ডে বহু বছর ধরে ভ্রূণ হত্যার বিরুদ্ধে সোচ্চার।

তিনি বলছেন, “মেয়ের বিয়ে দিতে গেলে পিতামাতাকে যৌতুক দিতে হয়। ফলে পরিবারের কাছে কন্যারা সবসময়ই বোঝা হিসেবে বিবেচিত। একারণেই সে কাঙ্ক্ষিত নয়। ভারতে গর্ভের শিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ ও কন্যা শিশুর ভ্রূণ হত্যার প্রধান কারণই এই যৌতুক।”

এই যৌতুক প্রথাও ভারতে নিষিদ্ধ এবং আইনত দণ্ডনীয়। কিন্তু বাস্তবে খুব কমই প্রভাব ফেলতে পেরেছে এই নিষেধাজ্ঞা।

সূত্র: বিবিসি বাংলা