বাবা নেই, কিন্তু কথা রে‌খে‌ছে রিম‌ঝিম - Women Words

বাবা নেই, কিন্তু কথা রে‌খে‌ছে রিম‌ঝিম

গার্গী ভট্টাচার্য্য

আমি বোধহয় তখন অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী,বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে থাকি। হঠাৎ এক সকালে আমার ডাক পড়ল গেষ্ট রূমে। গিয়ে দেখি বাবা বসে আছেন। আমাকে বললেন তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আসো মামা বাড়ী যাবে। আমি তো অবাক , খুশী হয়ে জানতে চাইলাম কেন হটাৎ? বাবা বললেন, আগে আসো গাড়ীতে তোমার মা ,ভাই বসে আছে, গিয়েই দেখবে। আমি মহা খুশী নিশ্চয়ই কোন সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে। ছুটে গিয়ে রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়লাম।

গাড়ীতে বসে দেখি সবারই মুখ ভার, কিন্তু স্বাভাবিক কথা বার্তা চলছে…মনে মনে ভাবছি কি জানি মজা হবে, তাই কেউ আগাম কিছু বলতে চাইছে না। যাক, আমিও আগ্রহ নিয়ে পথ ফুরানোর দিকে চেয়ে রইলাম। একসময় তা ফুরালোও…কিন্তু হায় মামা বাড়ীর কাছে এসেই শুনি কান্নাকাটির আওয়াজ, মা ঘরে ঢুকার আগেই ডুকরে কেঁদে উঠলেন। ভিতরে গিয়ে দেখি দিদা বিছানায় পড়ে কেঁদে যাচ্ছেন, মাটিতে বড়মামার প্রানহীন দেহখানি পরম যত্নে ধরে কেঁদে যাচ্ছেন বড়মামী। রিমঝিম (যাকে আমি নাম বিপর্যয়ে রেমঝেম বলে ডাকি) বড়মামার পাশেই বসে কেঁদে চলেছে , বাকি দুটো মামাতো বোন গুলো কিছু না বুঝে কেবল ফ্যাল-ফ্যাল দৃষ্টিতে বাবার নিথর দেহ পানে চেয়ে রয়েছে…রিমঝিম কাঁদছে আর বলে যাচ্ছে ” বাবা আমি কাল থেকে ঠিক-ঠাক অংক করবো, পড়াশুনা ঠিকমতন করবো, তুমি ভালো হয়ে যাও…ছোট্ট রিমঝিম তখন আর কিসে পড়ে হয়ত ৩য় বা ৪র্থ শ্রেনীতে…!

তার বাবা ভাল হয়ে উঠে দাঁড়ান নি। কিন্তু ও তার কথা রেখেছে সাধ্যমত। কাল রিমঝিমের মাস্টার্সের রেজাল্ট বের হল সে প্রথম শ্রেণীতে (বিভাগে ২য়, ফ্যাকাল্টিতে ৩য়) উত্তীর্ণ হয়েছে, অনার্সে ডীন পুরস্কারে ভূষিত হয়েছে, সামনে তার অফুরন্ত স্বপ্ন, নিজেকে নিয়ে, মা কে ঘিরে, ছোট বোনদের নিয়ে। নিশ্চয়ই ও তার সাফল্যের ফানুশ ওড়াবে একদিন, এই শুভ কামনাই রইল বোন… কেবল বড়মামা কে খবর জানানোটা বাকি ছিল যে!(যদিও তাঁর বসত পিঠে হয়ত খবর জানানোর প্রয়োজন পড়ে না, সব ই হয়ত তাঁর জানা!) তবু নিতান্ত সৌজন্যতার খাতিরেই আজকের আমার এ ভাব বিশ্লেষণ বড়মামার জন্য ।।

কাছের লোকেদের মুখের ভাষায় অভিনন্দন জানানো আমার কোন কালেই ফুটে ওঠে না, (অন্তর্মুখিতার অসুখটা যে আমার আজন্মের!) তাই , ফেসবুক এর আশ্রয়েই তোকে জানাই অফুরন্ত আশীষ আর আগামী পথ চলায় শুভ কামনা…এমনি করেই সফলতায় ছেয়ে উঠুক তোর, তোদের জীবন…