প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান: অ্যাসিডে পুড়ল ঘুমন্ত কিশোরী - Women Words

প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান: অ্যাসিডে পুড়ল ঘুমন্ত কিশোরী

মাকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছিল ১৩ বছরের মেয়েটি। হঠাৎ আর্তনাদ- ‘‘গা পুড়ে যাচ্ছে মা, কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছি না!’’ মেয়ের গায়ে হাত দিয়ে হাত পোড়ে মায়েরও। ঘরে ঢুকে অ্যাসিড ছুড়ে ততক্ষণে পালিয়ে গিয়েছে নাছোড়বান্দা ‘প্রেমিক’।

ঘটনাটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমানের পূর্বস্থলীর দামপাল এলাকার ।

পরিবারের দাবি, প্রেম ও বিয়ের প্রস্তাবে না বলার মাসুল এ ভাবেই দিল ওই কিশোরী। বাঁ চোখ, মুখ, বুক, হাতে পোড়া নিয়ে বর্তমানে সে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।  

চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ক্ষত গভীর। ৪৮ ঘণ্টা না পেরোলে নিশ্চিত ভাবে কিছু বলা সম্ভব নয়।  

দামপালের অষ্টম শ্রেণির ওই কিশোরীর বাবার অভিযোগ, গৌরব চিরকূট পাঠিয়ে, ফোন করে বছরখানেক ধরে তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করছিল। ২০ বছরের ওই যুবক কাজের সুবাদে কিছু দিন বেঙ্গালুরুতে ছিল। গত মাস চারেক সে বাড়ি ফিরে বিরক্ত করার মাত্রা বাড়ায়। শুক্রবারও সে মেয়েটির সঙ্গে দেখা করতে চেয়ে চিরকূট পাঠিয়েছিল।  

মেয়েটির বাবার কথায়, ‘‘শত চেষ্টাতেও মেয়েকে বশ করতে না পেরে তিন মাস আগে কাপড়ের গোলা কেরোসিনে ভিজিয়ে আগুন জ্বালিয়ে আমাদের ঘরে ছুড়েছিল গৌরব। সে সময় আমরা দেখে ফেলেছিলাম বলে বিপদ হয়নি। এ বার হল। ’’ 

গতকাল সোমবার কালনা হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, চোখ খুলতে পারছে না মেয়েটি। নড়ার অবস্থাও নেই। তাঁর মা বলেন, ‘‘গৌরব এমন কাণ্ড ঘটাবে বুঝতে পারিনি! বুঝলে তিন মাস আগেই পুলিশের দ্বারস্থ হতাম। পরে মেয়েটিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজে সরানো হয়। ’’

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, রোববার পাশাপাশি টিনের ছাউনি দেওয়া দুই ঘরের একটিতে মা-মেয়ে ঘুমাচ্ছিলেন। অন্যটিতে মেয়েটির বাবা। রাত ১টা নাগাদ মা-মেয়ের চিৎকারে বেরোতে গিয়ে ভদ্রলোক দেখেন, দরজার বাইরের দুটি কড়া নারকেলের দড়ি দিয়ে বাঁধা। টানা আতর্নাদে প্রতিবেশীরা জড়ো হন। এরপরে মেয়েটিকে নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে।

এ ব্যাপারে বর্ধমানের পুলিশ সুপার কুণাল অগ্রবাল জানিয়েছেন, অ্যাসিড-হামলার অভিযোগে ধরা হয়েছে গৌরব মণ্ডল নামে মেয়েটির প্রতিবেশী এক যুবককে। পরীক্ষায় পাঠানো হয়েছে ওই অ্যাসিডের নমুনা।

এ প্রসঙ্গে জেলা পুলিশের এক কর্মকর্তার আশ্বাস, ‘‘ছেলেটা কোথা থেকে অ্যাসিড পেয়েছে জানলেই, সেই জায়গায় ধরপাকড় করব আমরা। ’’

এর আগে নবমীর রাতে নদিয়ার হাঁসখালিতে ঠিক একই কারণে অ্যাসিড-হামলা হয়েছিল মা-মেয়ের ওপরে। এক সপ্তাহ যুদ্ধ করে মারা যায় একাদশ শ্রেণির মেয়েটি। পুলিশ অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে। যে লোকটি অভিযুক্তকে সালফিউরিক অ্যাসিড বিক্রি করেছিল, তাকেও ধরা হয়। কিন্তু অ্যাসিড অপরাধ কমেনি।
সূত্র: আনন্দবাজার