প্রচারবিমুখ জেসমিন আরা বেগম - Women Words

প্রচারবিমুখ জেসমিন আরা বেগম

Romena Laisআমাদের দেশটা ছোটো। ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইলের উত্তর পূর্বকোণে সুনামগঞ্জ জেলা অবস্থিত। অভাব এখানে আকাশছোঁয়া বৃক্ষের। নানা প্রতিকূলতায় ভেঙে পড়ে বেড়ে ওঠার আগেই। 

সমাজে কিছু মানুষ অন্তর্মুখী।আত্মপ্রচার ভালবাসে না। জেসমিন আরা বেগম তেমনি একজন প্রচারবিমুখ মানুষ। সহকারী জজ হিসেবে ১৯৮৮সালে পথ চলা শুরু করে পদোন্নতি পেয়ে আজ তিনি জেলা ও সেশন জজ। তবুও মনে করেন, তিনি অতি নগন্য।

তিনি ১৯৬০ সালে সুনামগঞ্জে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা এডভোকেট শহীদ সুনাওর আলী আর মা রাশেদা মাজেদা খানমের দ্বিতীয় সন্তান। সতীশ চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় (এস সি উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়) থেকে ১৯৭৬ সালে এস এস সি পাশ করেন। সুনামগঞ্জ কলেজ থেকে ১৯৭৮ সালে এইচ এস সি পাশ করেন। ১৯৮১ সালে বিএ আর ১৯৮৩ সালে মাস্টার্স পাশ করেই সিলেট ল কলেজে ল তে ভর্তি হন।১৯৮৪ সালে ল পাশ করেন। সুনামগঞ্জ বারে তিনিই প্রথম মহিলা আইনজীবি হিসাবে যোগ দিয়েছিলেন ১৯৮৬ সালে। ১৯৮৮ সালে বিসিএস দিয়ে শিক্ষানবিশ সহকারী জজ হিসাবে ঢাকা জজ কোর্টে যোগদান করেন। হরিরামপুর উপজেলা, মানিকগঞ্জে সহকারী জজ ছিলেন ১৯৮৯ থেকে ১৯৯১ পর্যন্ত। সিনিয়র সহকারী জজ দাউদকান্দি উপজেলা কোর্ট, কুমিল্লা ১৯৯১-১৯৯৪। ঢাকা জজ কোর্টে ১৯৯৪-১৯৯৭ পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন।

প্রশাসনিক এপিলেট ট্রাইবুনালে ১৯৯৭ থেকে ২০০০ পর্যন্ত ছিলেন। সিলেট জজ কোর্টে ছিলেন ২০০৩ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত। শেরপুর জজকোর্টে সিনিয়র জজ হিসাবে ২০০৭-২০০৯ পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এডিশনাল জেলা জজ হিসেবে ঢাকা জেলা জজ কোর্টে ২০০৯-২০১১ পর্যন্ত। চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ময়মনসিংহ ২০১২-১৩ পর্যন্ত। কুমিল্লার জেলা জজ হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন ২০১১-২০১৫। বর্তমানে ঢাকা জেলা জজ কোর্টে কর্মরত। ২০০০-২০০১ এ এম এস সম্পন্ন করেন সুইডেনের স্টকহোম ইউনিভার্সিটি থেকে তুলনামূলক আন্তর্জাতিক আইন বিষয়ে।

তার স্বামী ডক্টর মুহাম্মদ সাদিক বর্তমানে বাংলাদেশ সরকারী কর্মকমিশন (পিএসসির ) চেয়ারম্যান। তাদের একপুত্র ও এক কন্যা।

সতীশ চন্দ্র উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের ছাত্রী থাকাকালীন সময় থেকেই আমরা পরস্পরের কাছাকাছি ছিলাম।১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধের সময় পিতাকে হারিয়ে মায়ের কাছে মানুষ হওয়া জেসমিন আরা ছিলেন ভীষন নরম প্রকৃতির।গল্পের বই পড়তে বা সিনেমা দেখতে গিয়ে দুঃখের দৃশ্য আসলে তিনি কেঁদে আকুল হতেন। তার কান্নার কথা জানতাম। বৃত্তির টাকায় পড়া চালিয়ে গেলেও নিজেকে মেধাবী মনে করেন না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এম এ পড়ার সময় থাকতেন রোকেয়া হলে ।আমিও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়ে রোকেয়াহলেই ছিলাম। আমাদের হল জীবনে আমরা সুনামগঞ্জের যারা ছিলাম, তারা খুব পারিবারিক বন্ধনে জড়িয়ে ছিলাম। বিজু আপা,গোপাদি,জেসমিনআপা,নেলীআপা,বিউটিআপা, চমন, মাহফুজা, মিলন আপা, আফরোজা আমরা যেন এক অভিন্ন পরিবার। পরিবার ছেড়ে এসে আমরা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে হল জীবনে এদের সাথে জড়িয়ে ছিলাম বোনের মায়াময় বাঁধনে। হলের পরিজনহীন জীবনে বড়বোনের স্নেহের আঁচলে তিনি জড়িয়ে রেখেছিলেন পরম মমতায়।

১৯৭১ সালে মাত্র এগারো বছর বয়সে একইদিনে পিতা এবং নয় বছরের ছোট বোন কে হারান। মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সংগ্রাম করে করে ক্লান্ত না হয়ে প্রতিকূলতাকে জয় করেছেন। জীবনে দুঃখ আর সুখের পাশাপাশি অবস্থান। দুঃখ আসলে ভেঙে না পড়ে জীবনকে নতুন করে গড়ে তুলতে হবে। দুঃখকে জয় করতে হবে।

জেসমিন আরা বেগম সুইডেন, স্ক্যান্ডিনেভিয়ান দেশসমূহ, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত ভ্রমণ করেছেন। ১৯৯০ থেকে তিনি বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশনের সদস্য ।পরবর্তীতে কোষাধ্যক্ষ ও সচিব এর দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে তিনি বাংলাদেশ মহিলা জজ এসোসিয়েশন এর ভাইস প্রেসিডেন্ট। উল্লেখ্য আমাদের সরকারী সতীশ চন্দ্র বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পূর্ববর্তী নক্ষত্র এডভোকেট শামসুন্নাহার রব্বানী শাহানা এম পি তার বড়বোন। আমি তার সুখী সমৃদ্ধ জীবন কামনা করি।