একজন নারী কনস্টেবল সাইকেল চালিয়ে কর্মস্থলে যাচ্ছেন। তার কাঁধে ব্যাগ, মাথায় হেলমেট।
চিত্রটি বাংলাদেশের। আর এই ছবিটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মোশতাক আহমেদ। স্টেটাস দিয়ে তিনি লেখেছেন, ‘পুলিশে পরিবর্তন বিস্মিত, অভিভূত আমি!! আজ সকালে আমি অফিসে আসার সময় মগবাজার মোড়ে দেখলাম একজন নারী কনস্টেবল সাইকেল চালিয়ে অফিসে যাচ্ছেন। তার কাঁধে ব্যাগ, মাথায় হেলমেট।’ বিষয়টি তাকে আলোড়িত করেছে। তিনি আরও লিখেছেন, ‘১৬ বছরের চাকরি জীবনে পুলিশে বহু ইতিবাচক পরিবর্তন দেখলেও সাইকেলে করে এক নারী সহকর্মীর কর্মস্থলে যাওয়ার এই ঘটনা আলোড়িত করেছে। আরও লিখেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি লুৎফার এরূপ কর্মস্থলে গমন বাংলাদেশ পুলিশের পরিবর্তন ও উন্নয়নের এক অবিস্মরণীয় মাইলফলক। তার সহকর্মী হতে পেরে আমি গর্বিত।’
জানা গেছে, ছবির নারী পুলিশ কনেস্টেবল লুৎফা বেগম তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় কর্মরত। ২০০৮ সালের ৪ মার্চ পুলিশে নিয়োগ পাওয়া এই তরুণীর বাড়ি সিলেটের বালাগঞ্জ থানায়। এখন থাকছেন রাজারবাগে, পুলিশ হোস্টেলে। চাকরির পাশাপাশি হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করছেন।
তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানার কনস্টেবল লুৎফা বেগম বলেছেন, সাইকেল চড়েই অফিস, কোর্টসহ অফিসিয়াল ডিউটিতে যাই, ঢাকায় অনেক যানজট দেখে বেশ কিছুদিন ধরে সাইকেলেই যাতায়াত করছি।।
নিজেকে একজন সাধারণ কৃষকের মেয়ে বর্ণনা করে এ পুলিশ সদস্য জানান তার সংগ্রামী জীবনের কথা, ছোটবেলা থেকেই সংসারে অনেক অভাব অনটন ছিল, আমি সব সময় ভাবতাম কী করা যায় নিজে থেকে। বেকারত্বকে সবসময় ঘৃণা করে এসেছি, একটা দিনও বেকার থাকতে চাইনি। নবম শ্রেণি থেকেই টিউশনি করে নিজের খরচ নিজে চালিয়েছি।
এভাবেই ২০০৪ সালে সিলেটের বোয়ালপুর বাজার উচ্চ বিদ্যালয় থেকে মাধ্যমিক আর ২০০৬ সালে বালাগঞ্জ ডিগ্রি কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা পাশ করেন লুৎফা। এরপর ২০০৭ সালে পুলিশের সার্কুলার দেখে আবেদন করেন। প্রথমে বাবা-মা কেউ রাজি ছিলেন না। মেয়েরা পুলিশে চাকরি করবে- তা তাদের এলাকায় কেউ কল্পনাও করতে পারত না বলে তিনি জানান। তবে শেষ পর্যন্ত বড় ভাই লুৎফাকে পরীক্ষা দিতে নিয়ে যান। পরীক্ষায় টিকেও যান তিনি। ২০০৭ সালে রংপুর পুলিশ ট্রেনিং কেন্দ্রে ছয় মাসের প্রশিক্ষণ শেষে ঢাকা মহানগরীতে পুলিশে কনস্টেবল পদে যোগ দেন তিনি।