না ফেরার দেশে ‘বেগম’ সম্পাদক - Women Words

না ফেরার দেশে ‘বেগম’ সম্পাদক

বাংলাদেশ তথা উপমহাদেশে নারীদের প্রথম সাপ্তাহিক পত্রিকা ‘বেগম’ এর সম্পাদক নূরজাহান বেগম আর নেই। গত সোমবার সকাল ১০টায় ঢাকার স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। তাঁর বয়স হয়েছিল ৯১ বছর। মৃত্যুকালে তিনি দুই মেয়ে ও অসংখ্য শুভানুধ্যায়ি রেখে গেছেন।
নূরজাহান বেগম দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভোগছিলেন। স্কয়ার হাসপাতালে কিছু দিন ধরে তিনি  নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউতে) ছিলেন। গত ৪ মে শ্বাসকষ্টের সমস্যা দেখা দিলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
নূরজাহান বেগমের বড় মেয়ে ফ্লোরা নাসরিন খান জানান, উনি আজ সকালে ইন্তেকাল করেছেন। সকাল সাড়ে ৮টায় একটি কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়েছিল। ডাক্তাররা চেষ্টা করেছিলেন। কিন্তু এর মধ্যে দ্বিতীয়বার উনার কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট হয়।
এই মহিয়সী নারীর দাফন কখন হবে সে বিষয়ে এখন কোন সিদ্ধান্ত হয়নি বলে  তাঁর পরিবার সূত্রে জানা গেছে।
বাংলাদেশে নারী সাংবাদিকতার পথিকৃৎ নূরজাহান বেগমের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পৃথকভাবে শোক জানিয়েছেন।
নূরজাহান বেগম ১৯২৫ সালের ৪ জুন চাঁদপুরে চালিতাতলী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৪২ সালে পশ্চিমবঙ্গের ভাগলপুরে বেগম রোকেয়া প্রতিষ্ঠিত সাখাওয়াত মেমোরিয়াল স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাসের পর কলকাতার লেডি ব্রাবোর্ন কলেজ থেকে উচ্চশিক্ষা নেন তিনি।
সাহিত্য চর্চায় মেয়েদের জায়গা করে দিতে তার বাবা সওগাত পত্রিকার সম্পাদক মোহাম্মদ নাসিরউদ্দিন ১৯৪৭ সালে ‘বেগম’ পত্রিকা চালু করেন। প্রথমে কলকাতা থেকে প্রকাশিত হলেও দেশভাগের পর ১৯৫০ সালে পত্রিকাটি ঢাকায় চলে আসে।
প্রতিষ্ঠার প্রথম চার মাস পত্রিকাটির সম্পাদক ছিলেন কবি সুফিয়া কামাল। এর পর সম্পাদনার দায়িত্বে আসেন নূরজাহান বেগম।
বাংলাদেশের নারী সাহিত্যিকদের অনেকের লেখার হাতেখড়ি বেগম পত্রিকার মাধ্যমে।
নারী শিক্ষা ও সাহিত্য ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ১৯৯৭ সালে রোকেয়া পদকে ভূষিত হন নূরজাহান বেগম। এছাড়া বিভিন্ন সময় বাংলাদেশ মহিলা সমিতি, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ, লেখিকা সংঘ, কাজী জেবুন্নেসা-মাহবুবউল্লাহ ট্রাস্ট, রোটারি ক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠন তাকে সম্মাননা জানিয়েছে।
১৯৫২ সালে কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলার প্রতিষ্ঠাতা রোকনুজ্জামান খান (দাদা ভাই) এর সঙ্গে বিয়ে হয় নূরজাহান বেগমের। দাদা ভাই ১৯৯৯ সালে মৃত্যুবরণ করেন।