ক্যান্সার রোগীদের মনোরোগ সারাতে কার্যকর 'ম্যাজিক মাশরুম' - Women Words

ক্যান্সার রোগীদের মনোরোগ সারাতে কার্যকর ‘ম্যাজিক মাশরুম’

মনোরোগ সারাতে বিজ্ঞানীরা দারুণ এক খাবার খুঁজে পেয়েছেন। এর নাম ‘ম্যাজিক মাশরুম’। খুবই কার্যকরভাবে অল্প সময়ে উদ্বেগ এবং বিষন্নতা সামাল দিতে পারে এই মাশরুম। বিশেষ করে ক্যান্সার রোগীদের মনের বিভিন্ন সমস্যা দূর করা সম্ভব। এটি খাওয়ানোর পর কার্যকারিতা কয়েক মাস পর্যন্ত থাকে বলে দুটো গবেষণায় জানানো হয়।

ইতিমধ্যে উপকৃত হয়েছেন অনেকে। তাদের মধ্যে একজন দিনা বেজার। তিনি হেলুসিনেশনে ভুগতেন। ওভারিয়ান ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলেন তিনি। ইস্টালিন ওয়ালকফ জানান, এই মাশরুম তার জীবনে অনেক শান্তি এনে দিয়েছে।

ম্যাজিক মাশরুম নিয়ে গবেষণা এখনও প্রাথমিক পর্যায়েই রয়েছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এর উপাদান নিয়ে আরো গভীর গবেষণা প্রয়োজন, যার নাম সিলোসাইবিন।

কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টারের অ্যাডাল্ট প্যালিয়েটিভ কেয়ার সার্ভিসের পরিচালক ক্রেইগ ব্লিন্ডারম্যান জানান, প্রাথমিক পর্যায়েই এর কার্যকারিতা আশাপ্রদ। তবে গবেষণার সঙ্গে জড়িত নন তিনি।

সিলোসাইবিনকে ‘শ্রোমস’ নামেও ডাকা হয়। কিছু মাশরুমে বেগুনি আভা থাকে। তবে এটা গ্রহণ নিষিদ্ধ আমেরিকায়। অবশ্য চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা যাবে। বিশেষভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরাই এটি রোগীকে দিতে পারেন। তাই কেউ চাইলেই একা এর ব্যবহার ঘটাতে পারবেন না। দারুণ ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠবে, সাবধান করেন নিউ ইয়র্ক ইউনিভার্সিটির ড. স্টিফেন রস এবং জনস হপকিন্স ইউনিভার্সিটির রোল্যান্ড গ্রিফিথস।

ক্যান্সার রোগীদের বিপর্যস্ত মানসিক অবস্থা সামলাতে অতীতেও সাইকিডেলিক ড্রাগ বেশ কাজ করেছে। কিন্তু ১৯৭০ এর দশকে এসব ওষুধ প্রয়োগ নিষিদ্ধ করা হয়। সিলোসাইবিন এক ধরনের সাইকিডেলিক ওষুধের মতো কাজ করে।

গ্রিফিথস জানান, ক্যান্সার রোগী ছাড়া অন্যদের দেহে এটি কাজ করবে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। তবে এর মাধ্যমে বিষন্নতা এবং উদ্বেগের মতো মানসিক অবস্থার মানসম্পন্ন চিকিৎসা দেওয়ার বিষয়টি মাথায় রেখেছেন বিশেষজ্ঞরা।

নতুন এ গবেষণাটি প্রকাশিত হয়েছে জার্নাল অব সাইকোথেরাপিতে।

২০১০ সালে বেজারের ওভারিয়ান ক্যান্সার ধরা পড়ে। তখন তার বয়স ৬৩ বছর। সিলোসাইবিনের মাধ্যমে তার চিকিৎসা সফলতা দেখেছে। তবে ভয় ছিল, আবারো মানসিক পেরেশানি ফিরে আসে কিনা।

২০১২ সালে দুটো সিলোসাইবিন ক্যাপসুল খান তিনি। দুজন প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত চিকিৎসক এগুলো খাওয়ান। বেজারকে কয়েক ঘণ্টা পর্যবেক্ষণে রাখা হয়। তার কানে হেডফোন লাগিয়ে গান শোনানো হয়। চোখ ঢেকে দেওয়া হয় স্লিপ মাস্কের মাধ্যমে। ওষুধ ব্যাপক কাজ করে।

পরে তিনি জানান, আমি গভীর ঘুমে তলিয়ে যাই। পরিবার, স্বজন এবং বন্ধুদের প্রতি দারুণ ভালোলাগা অনুভব করেন।

বিশেষজ্ঞরা জানান, এর প্রভাব দারুণ রহস্যময়। কিভাবে এতটা কার্যকর হয়ে ওঠে তা চিন্তাই করা যায় না।

একই উপকার লাভ করেন ওয়ালকফ। ৬৯ বছর বয়সী এই সাইকোথেরাপিস্ট লিম্ফোমা ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন। পরে সিলোসাইবিন গ্রহণ করেন। জানান, এই মাশুরুম আমাকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছে। আমি এক অদ্ভুত শান্তিপূর্ণ সময়ের মধ্য দিয়ে যাই।

গবেষণায় সিলোসাইবিনের শক্তিশালী প্রভাব দেখা গেছে বিষন্নতা ও উদ্বেগে আক্রান্ত মানুষের মাঝে। যাদের প্রয়োগ করা হয়, তাদের ৮০ শতাংশকে ২৪ ঘণ্টা পর আর ক্লিনিক্যালি মনোরোগে আক্রান্ত বলে আর মনে করা হয় না।

এ গবেষণার সঙ্গে ছিলেন না ড. উইলিয়াম ব্রেইটবার্ট। তিনি নিউ ইয়র্কের মেমোরিয়াল স্লোয়ান-কেটেরিং ক্যান্সার সেন্টারের সাইকিয়াট্রি সার্ভিসের প্রধান। তিনি জানান, সিলোসাইবিন নিয়ে গবেষণার পরিধি আরো বাড়াতে হবে।

বেজার এবং ওয়ালকফ এর সুফল ভোগ করেছেন। তাদের মতে, কেবলমাত্র ক্যান্সারের আক্রান্ত রোগীদের মানসিক শান্তি দেওয়ার চেয়েও আরো অনেক বেশি কিছু করে সিলোসাইবিন মাশরুম। কাজে-কর্মেও তাদের অনেক স্বতঃস্ফূর্ত করে দিয়েছে ম্যাজিক মাশরুম। ক্যান্সার নিয়ে আর কোনো ভয় জেঁকে বসে না মনে।

সূত্র : ইনডিপেনডেন্ট, কালের কন্ঠ