কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-১) - Women Words

কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার (পর্ব-১)

reza-gotok-women-wordsগোটা বিশ্বের সাহিত্যপ্রেমীদের চোখ আগামী সপ্তাহের সুইডিশ নোবেল কমিটির দিকে। কে পাচ্ছেন এবার সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার? এ বছর চিকিৎসা শাস্ত্র দিয়ে অক্টোবর মাসের ৩ তারিখ নোবেল পুরস্কার ঘোষণা শুরু হয়। চিকিৎসা শাস্ত্রে এবার নোবেল পেয়েছেন জাপানের ইউশিনোরি ওসুমি। ৪ অক্টোবর ঘোষিত হয়েছে পদার্থ বিজ্ঞানে এবারের নোবেল পুরস্কার বিজয়ীদের নাম। এ বছর পদার্থবিজ্ঞানে নোবেল পেয়েছেন তিন ব্রিটিশ বিজ্ঞানী। এঁরা হলেন ডেভিড জে. থাওলেস, এফ. ডানকান এম. হ্যালডেন এবং জে. মাইকেল কোস্টারলিৎজ। ডেভিড জে. থাওলেস পাবেন পুরস্কারের অর্ধেক আর বাকিটা সমান ভাগ হবে এফ. ডানকান এম. হ্যালডেন এবং জে. মাইকেল কোস্টারলিৎজের মধ্যে।

আজ ঘোষণা করা হয়েছে রসায়ন বিজ্ঞানে এ বছরের নোবেল বিজয়ীদের নাম। তারা হলেন ফ্রান্সের জাঁ পিয়েরে সভেজ, স্কটল্যান্ডের স্যার ফ্রেশার স্টডডার্ট ও নেদারল্যান্ডসের েবার্নাড ফেরিঙ্গা। আগামী ৭ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে চলতি বছরের শান্তিতে নোবেল বিজয়ীর নাম। ১০ অক্টোবর ঘোষণা করা হবে অর্থনীতি শাস্ত্রে এবারের বিজয়ীর নাম। কিন্তু সাহিত্যে এ বছর নোবেল পুরস্কার বিজয়ীর নাম জানা যাবে সবার শেষে। সুইডিশ নোবেল কমিটি এখনো সেই তারিখ ঘোষণা করেনি। হয়তো ১১ বা ১২ বা ১৩ অক্টোবর সেই নামটি জানবে বিশ্ববাসী। সুইডিশ নোবেল কমিটির স্থায়ী সেক্রেটারি সারা ডানিউস সেই নামটি ঘোষণা করবেন।

তো চলুন এবার সম্ভাব্য সাহিত্যে নোবেল বিজয়ীদের নাম ও একটু পরিচিতি খুটিয়ে দেখি। সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পান একজন। সেটি যে কোনো মহাদেশ থেকে হতে পারে। তো আমি আলোচনায় মহাদেশ ভিত্তিক একটা তালিকা তুলে ধরার চেষ্টা করব। শুরুতেই আমি বলতে চাই আফ্রিকা মহাদেশের সম্ভাব্য নামগুলি।

আফ্রিকা মহাদেশ:
আফ্রিকা মহাদেশ থেকে আমার প্রিয় লেখক চিনুয়া আচেবে নোবেল পুরস্কার না পেয়েই মারা গেলেন। এটা নোবেল কমিটির জন্য একটা চরম ব্যর্থতা। তারপরেও আফ্রিকা মহাদেশে এবার সম্ভাব্য লেখকদের মধ্যে শীর্ষে রয়েছেন কেনিয়ার ঔপন্যাসিক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ। একদিকে তিনি আফ্রিকান লেখক। অন্যদিকে তিনি লেখেন ট্রাইবাল জিকুইউ ভাষায়। নগুগি একজন ঔপন্যাসিক, উত্তর-ঔপনেবেশিক তাত্ত্বিক এবং সামজিক আন্দোলনকারী। ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি নগুগি কেনিয়ার কিয়াম্বু জেলার লিমুরু শহরের কাছে কামিরিথু পল্লীতে জন্মগ্রহন করেন। জন্মের পর পরিবার থেকে তাঁররাখা হয়েছিল জেমস নগুগি। কিন্তু ১৯৭৬ সালে নগুগি নাম পরিবর্তন করে রাখেন নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ও। সাহিত্যের বিভিন্ন শাখায় তাঁর অবাধ বিচরণ। নগুগির উপন্যাস, নাটক, প্রবন্ধ, সমালোচনা, ছোটগল্প এবং শিশুতোষ রচনাবলী সারা বিশ্বে ব্যাপকভাবে পরিচিত, আলোচিত এবং নন্দিত।

শুরুর দিকে নগুগি প্রথমে ইংরেজিতে লিখতেন। কিন্তু ১৯৭৭ সালে ‘আই উইল ম্যারি হোয়েন আই ওয়ান্ট’ (আমার যখন মন চায় বিয়ে করবো) নাটকের গ্রন্থটির কারণে কেনিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল আরাপ মোই তাঁকে গ্রেফতার করার নির্দেশ দিলে তাঁকে কারাবন্দী করা হয়। ওই ঘটনার পর থেকেই নগুগি নিজের মাতৃভাষায় লেখার সিদ্ধান্ত নেন। কারাগারে বসেই তিনি লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত উপন্যাস ‘ডেভিল অন দ্য ক্রোস’ (ক্রুশকাঠের শয়তান)। পুরো উপন্যাসটি নগুগি কারাগারের বন্দীদশায় থেকে টয়লেট পেপারের উপর লিখেছিলেন।

তাঁর প্রথম উপন্যাস ‘উইপ নট, চাইল্ড’ (কেঁদো না, সোনামণি) প্রকাশিত হয় ১৯৬৪সালে। এটি একটি ঐতিহাসিক উপন্যাস। যার মাধ্যমে তিনি নিজেকে একজন শক্তিশালী ও রাজনৈতিক কথাসাহিত্যিক হিসেবে আত্মপ্রকাশ ঘোষণা করেছিলেন। কেনিয়ার মানুষ ও ব্রিটিশ উপনিবেশের সম্পর্ককে বিষয়বস্তু করে তিনি এ উপন্যাস রচনা করেছেন। ব্রিটেনের লিডস বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ে তিনি এটি রচনা করেন। নগুগির দ্বিতীয় উপন্যাসের নাম ‘দ্য রিভার বিটউইন’ (নদীর এপার-ওপার) প্রকাশিত হয় ১৯৬৫ সালে। এ উপন্যাসে তিনি মাউ মাউ বিপ্লবকে উপজীব্য করে এক খ্রিষ্টান ও নন-খ্রিষ্টান জুটির ভালোবাসার সম্পর্কের রোমান্সগুলো কতটা অসুখী তা বিশ্লেষণ করেছেন।

১৯৬৭ সালে প্রকাশিত হয় তাঁর তৃতীয় উপন্যাস ‘এ গ্রেইন অব হুইট’ (গম গাছের বেড়ে ওঠা)। এই উপন্যাসে নগুগি মার্ক্সের সমাজতন্ত্রের দিকে ঝুকে পড়েন। এরপর নগুগি নিজের নাম বদল করে রাখেন নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ও। আর তখন থেকেই ইংরেজির পরিবর্তে নিজের ট্রাইবাল জিকুইউ ও শ্বাহিলি ভাষায় লিখতে থাকেন। নগুগি উগান্ডার কামপালা’র ম্যাকারিরি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ থেকে ইংরেজিতে স্নাতক পাস করেন। ওই সময় ‘দ্য ব্ল্যাক হারমিট’ নামে তাঁর প্রথম নাটকের বই প্রকাশিত হয় ১৯৬২ সালে। পরবর্তী সময়ে ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব লিডস-এ উচ্চতর শিক্ষা লাভ করার সময় ১৯৬৪ সালে প্রথম কোনো পূর্ব আফ্রিকান লেখক হিসেবে নগুগির প্রথম উপন্যাস ‘উইপ নট, চাইল্ড’ (কেঁদো না, সোনামণি) ইংরেজিতে প্রকাশিত হয়। বর্তমানে তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (আর্ভিং) ডিস্টিংগুইশড প্রফেসর হিসাবে অধ্যাপনা করছেন।সেখানে বর্তমানে তিনি এরিক মারিয়া রিমার্ক চেয়ার হোল্ডার। তিনি মূলত তুলনামূলক সাহিত্যতত্ত্ব পড়ান।

২০১০ সালে সাহিত্যের নোবেল পুরস্কারের জন্য প্রথম শর্টলিস্টেড হয়েছিলেন নগুগি। তাঁর স্মৃতিচরণ মূলক আত্মজীবনী ‘ড্রিমস ইন এ টাইম অব ওয়ার: এ চাইল্ডহুড মেমোইর’ (যুদ্ধে কালের স্বপ্ন) মূলত ব্রিটিশ উপনিবেশবিরোধী সংগ্রামের একটি শিল্পীত দলিল। এছাড়া নগুগির ‘উইজার্ড অব দ্য ক্রো’ ( কাকের জাদু) উপন্যাসটি আফ্রিকার আঞ্চলিক ভাষার সবচেয়ে ক্লাসিক্যাল উপন্যাস হিসেবে স্বীকৃত। তাঁর সাহিত্যকীর্তির স্বীকৃতিস্বরূপ ২০০১ সালে তিনি নোনিনো ইন্টারন্যাশনাল প্রাইজ ফর লিটেরেচার লাভ করেন। এ ছাড়া বিশ।বের অন্তত ৭টি বিশ্ববিদ্যালয় তাঁকে সম্মানসূক ডক্টরেট ডিগ্রী প্রদান করেছে। চলতি বছর সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী সম্ভাব্যদের তালিকায় কেনিয়ার ঔপন্যাসিক নগুগি ওয়া থিয়োঙ্গ’ও অন্যতম।

চলবে…