কাশ্মিরের হামলায় লস্কর-ই তৈয়বাকে সন্দেহ - Women Words

কাশ্মিরের হামলায় লস্কর-ই তৈয়বাকে সন্দেহ

ভারত শাসিত কাশ্মীরে সোমবার সন্ধ্যায় যাত্রিবাহী বাসে জঙ্গিদের হামলায় সাতজন হিন্দু তীর্থযাত্রী নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছেন তিন পুলিশসহ ১৯জন। এ ঘটনায় পাকিস্তানভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন লস্কর-ই তৈয়বাকে দায়ী করা হচ্ছে।

পুলিশের দাবি, ওই হামলার মাস্টারমাইন্ড পাক জঙ্গি আবু ইসমাইল। পাকিস্তানে বসেই এই হামলার ছক কষা হয়।

কাশ্মির পুলিশের বরাত দিয়ে ভারতীয় সম্প্রচারমাধ্যম এনডিটিভির ওয়েবসাইটে এই কথা জানানো হয়েছে।

এদিকে  সিএনএন-এর নিউজ এইটিন নিরাপত্তা সূত্রের বরাত দিয়ে দাবি করেছে, লস্কর-ই তৈয়বা কাশ্মিরের স্বাধীনতা আন্দোলনের সশস্ত্র সংগঠন হিজবুল মুজাহিদীন-এর সঙ্গে যৌথভাবে এই হামলা চালিয়েছে।

আহতদের মধ্যে এর মধ্যে ৪ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানা গেছে।

কাশ্মীরের অনন্তনাগ জেলার অমরনাথ তীর্থকেন্দ্র থেকে পুণ্যার্থীবাহী বাসটি যখন ফিরছিল তখন সেটির উপর জঙ্গি হামলা হয়।

নিহতরা সবাই নরেন্দ্র মোদীর রাজ্য গুজরাট থেকে এসেছিলেন।

পুলিশ ও সিআরপি সূত্রের খবর, সোমবার সন্ধে সোয়া আটটা নাগাদ জনা তিনেক জঙ্গি মোটরবাইকে চেপে বিভিন্ন জায়গায় পরপর হামলা চালিয়ে উধাও হয়েছে। প্রথমে তারা অনন্তনাগের খান্নাবলে বাহিনীর চেকপোস্টের উপরে গুলি চালিয়ে বাতেঙ্গু এলাকার দিকে পালায়। সে সময় বাতেঙ্গুতে শ্রীনগর-জম্মু সড়কের উপরে অমরনাথ যাত্রীদের একটি গাড়ি যাচ্ছিল। সেই বাস লক্ষ করে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় জঙ্গিরা। অন্ধকারের সুযোগে দ্রুত গা ঢাকা দেয় তারা। ওই হামলায় নিহত হন এক মহিলা-সহ ৭ তীর্থযাত্রী।  বাতেঙ্গু থেকে পালানোর সময়ে আরওয়ানিতেও বাহিনীর শিবির লক্ষ করে গুলি চালায় জঙ্গিরা। এলাকা ঘিরে ফেলে তল্লাশি শুরু করেছে বাহিনী। তাদের সন্দেহ, লস্কর ও হিজবুল মিলে এই হামলা চালিয়েছে।

কাশ্মীরের পর্যটনমন্ত্রী প্রিয়া শেঠির দাবি, যে বাসটিতে যাত্রীরা যাচ্ছিলেন, সেটি নথিভুক্ত ছিল না। ফলে বাসটিকে তীর্থযাত্রীদের যান হিসেবে চিহ্নিত করার উপায়ও ছিল না। দেওয়া হয়নি নিরাপত্তাও।

অনন্তনাগ পুলিশ লাইন থেকে বিবিসির জুবায়ের আহমেদ জানান, হামলা থেকে বেঁচে যাওয়া তীর্থ যাত্রীরা বলছেন তারা সৌভাগ্যক্রমে বেঁচে আছেন। সেখানকার হাসপাতাল এখন আহতদের ভিড়ে পরিপূর্ণ।

বাসের মালিক হর্ষ দেশাই বলেন , ” আমি বাসের সামনে পাঁচ-ছয়জন বন্দুকধারীকে দেখেছি। তারা নির্বিচারে গুলি চালিয়েছে এবং বাস লক্ষ্য করে পাথর ছুঁড়েছে। আমি বাসের চালককে বলেছি না থামাতে এবং চালিয়ে যেতে।”

সেসব যাত্রী বেঁচে আছেন তারা বাস চালকের সাহসিকতার প্রশংসা করেছেন। তারা বলছেন, বাস চালক যদি সাহসিকতার সাথে চালিয়ে না যেতেন তাহলে মৃতের সংখ্যা আরো বেশি হতো।

শেষ পর্যন্ত বাসটি দুই কিলোমিটার দূরে একটি সেনা টহল দলের সামনে গিয়ে থামে।

এ হামলার পর ভারতের বিভিন্ন জায়গায় তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। বিশেষ করে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর এলাকা গুজরাটে অনেকে ক্ষুদ্ধ প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে বলেছেন, এ হামলার শক্ত জবাব দেয়া উচিত।

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদী এক টুইট বার্তায় বলেছেন, এ হামলায় তিনি দারুণ মর্মাহত এবং ভারত কখনো এ ধরনের হামলার কাছে নত হবে না।

ঘটনার পরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে বৈঠক করেন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল। পুরো ঘটনাটি খতিয়ে দেখে বেশ কয়েকটি প্রশ্ন তুলছেন গোয়েন্দারা। অমরনাথ যাত্রার সময়ে রাতে যাত্রীদের বাস চলে না। তা হলে নথিবদ্ধ নয় এমন একটি বাস কী ভাবে রাতে চলল? অনন্তনাগে পৌঁছনোর আগে বানিহাল বা কাজিগুন্দের পুলিশ পোস্ট সেটিকে আটকাল না কেন? সূত্রের দাবি, বাসটি ঠিক সময়েই রওনা হয়েছিল। রাস্তায় টায়ার বিগড়োনোয় দেরি হয়, অন্ধকার নামে।

আগামী কাল দেশ জুড়ে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরঙ্গ দল।

অমরনাথ যাত্রায় এ বার সবচেয়ে বেশি বাহিনী মোতায়েন হয়েছে। কিন্তু তাতেও যে কাজ হয়নি, বুঝিয়ে দিল এই হামলা। এ দিনের ঘটনায় চার জনকে আটক করা হয়েছে। কাল থেকে বাড়ি বাড়ি তল্লাশি শুরু হবে। আজ অনন্তনাগের হরনাগ এলাকাতেও পুলিশের উপর হামলা চালায় জঙ্গিরা। তবে তাতে হতাহতের খবর নেই। নওগাম সেক্টরে নিয়ন্ত্রণরেখায় সেনার সঙ্গে সংঘর্ষে নিহত হয়েছে তিন জঙ্গি।

এর আগে ২০০০ সালে জঙ্গিদের গুলিতে মৃত্যু হয়েছিল ৩০ জন অমরনাথ যাত্রীর।

সূত্র:আনন্দবাজার, বিবিসি