ইংলিশ চ্যানেল জয় করলো বাংলার মেয়ে সায়নী - Women Words

ইংলিশ চ্যানেল জয় করলো বাংলার মেয়ে সায়নী

কেদারনাথ ভট্টাচার্য

জলের সঙ্গে যুদ্ধ করা মোটেও সহজ কাজ ছিলনা। কিন্তু ছোট থেকেই হেরে যাওয়া বড্ড অপচ্ছন্দ ছিল তাঁর। সেই জেদেই এ বার ইংলিশ চ্যানেল পেরোলেন পশ্চিমবঙ্গের মেয়ে সায়নী দাস।

বুধবার ভারতীয় সময় সকাল দশটা নাগাদ সাঁতার শেষ হয় তাঁর। সময় লাগে ১৪ ঘণ্টা ৮ মিনিট। যুক্তরাজ্য থেকে ফোনে সায়নী বলেন, ‘‘ঠান্ডায়, যন্ত্রণায় পৌঁছনোর পরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলাম। পাইলট টানা ম্যাসাজ করে জ্ঞান ফেরান। তখন অবশ্য সব কষ্টই ফিকে।’’

সায়নীর সঙ্গে ইংল্যান্ড গিয়েছিলেন বাবা, প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষক রাধেশ্যামবাবু। তিনিই ছোট থেকে মেয়েকে সাঁতারের প্রশিক্ষণ দেন। মেয়ে ইংলিশ চ্যানেল পেরনোর সময়েও পাশে পাইলট বোটে ছিলেন তিনি। তিনি জানান, একে ক্রমাগত কমতে থাকা তাপমাত্রা, তার উপর ঢেউ, ভাসমান শ্যাওলা, জলজ উদ্ভিদের কাঁটা বারবার গায়ে জড়িয়ে যাওয়ায় খুবই মুশকিলে পড়ছিল সায়নী। পরে কিছুটা ধাতস্থ হয়। তবে সব থেকে বেশি মুশকিল হয় জেলিফিসে। 

সায়নীও বলেন, ‘‘জেলিফিসের রোঁয়া গায়ে লাগলেই জ্বলছিল। মনে হচ্ছিল একসঙ্গে অনেক কাঠপিঁপড়ে কামড়াচ্ছে।’’ রাধেশ্যামবাবুও জানান, ঢেউয়ের ধাক্কায় প্রায় কিছুই খেতে পারছিল না সায়নী। ফ্রান্সে ঢোকার আগে ঢেউ আরও বেড়ে যায়। সঙ্গে ৯ ডিগ্রিরও কম তাপমাত্রা। বারবার ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে যাওয়ায় ১৪ কিলোমিটার বেশি ঘুরতে হয়েছে বলেও তাঁর দাবি। ফলে সময়ও বেশি লাগে। তবে তাতেও হার মানেননি তিনি।

বর্ধমান জেলার কালনা শহরের বারুইপাড়ার বাসিন্দা সায়নী হুগলির শ্রীরামপুর কলেজে ইতিহাসের প্রথম বর্ষের ছাত্রী। এর আগে জাতীয় ও রাজ্য স্তরে একাধিক সোনা, রুপো জিতেছেন তিনি। তবে ইংলিশ চ্যানেল পেরনোর ঝোঁক জন্মায় বছরখানেক আগে। শরীরচর্চা, দিঘার সমুদ্রে

অনুশীলন চলে। মেয়ের জেদ পূরণে নিজের সঞ্চয় তো বটেই, নানা জায়গা থেকে টাকা জোগাড় করেন সায়নীর বাবা, রাধেশ্যামবাবু।

তিনি জানান, ৮ জুলাই ইংল্যান্ড রওনা দেন তাঁরা। ৯ জুলাই যুক্তরাজ্যের হেট্রো পৌঁছান। আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে অনুশীলন শুরু হয় ডোভারে। সায়নী জানান, ১৫ থেকে ২১ জুলাইয়ের মধ্যে জলে নামার পরিকল্পনা ছিল তাঁর। কিন্তু আবহাওয়া প্রতিকূল হওয়ায় নামার অনুমতি মেলেনি। এমনকী, ফেরার দিন এগিয়ে আসায় খানিক মুষড়েও পড়েছিলেন বছর কুড়ির এই সাঁতারু। তখনই পাশে দাঁড়ায় চ্যানেল সুইমিং অ্যাসোসিয়েশন। আবহওয়ার সামান্য উন্নত হওয়ায় মাত্র চার জনকে আলাদা আলাদা সময়ে নামার অনুমতি দেওয়া হয় মঙ্গলবার। স্থানীয় সময় দুপুর একটা (ভারতীয় সময় সন্ধ্যা ছটা) নাগাদ ইংলিশ চ্যানেল পেরনোর লড়াই শুরু হয় তাঁর। বুধবার মা রুপা দাস বলেন, মেয়ে জলে নেমেছে জানার পরে দু’চোখের পাতা এক করতে পারিনি। সকাল সাড়ে দশটা নাগাদ ওর বাবা ফোনে জানান ১৪ ঘণ্টা লড়াই করে মেয়ে সফল হয়েছে।

সূত্র: আনন্দবাজার