ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী আফসানা ফেরদৌসী (২৪) হত্যায় ছাত্রলীগের নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঢাকার তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের নেতাসহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ করেছেন নিহতের স্বজন ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা।
আফসানার বাড়ি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার কানিকশালগাঁওয়ে। এ ঘটনায় জড়িতদের গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে আজ বুধবার ঢাকা ও ঠাকুরগাঁওয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ হয়েছে।
আফসানা রাজধানীর মিরপুরের সাইক পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের স্থাপত্য বিভাগের শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্র ইউনিয়নের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। মিরপুরের মানিকদি রোড এলাকার একটি মেসে থাকতেন। ছয় মাস আগে তাঁর বাবা আখতার হোসেন মারা যান।
স্বজন ও ছাত্র ইউনিয়নের নেতা-কর্মীরা অভিযোগ করেন, তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক হাবিবুর রহমান ওরফে রবিনসহ তাঁর কয়েক বন্ধু আফসানাকে হত্যা করেছেন। এখন এই হত্যাকে আত্মহত্যা বলে প্রচার করার চেষ্টা করছেন তারা। আর কাফরুল থানার পুলিশও মূল ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার জন্য একই ধরনের কথা বলছে।
এই ঘটনায় রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে বিকেল চারটার দিকে ছাত্র ইউনিয়ন এক বিক্ষোভ সমাবেশ করে। সমাবেশে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, এই হত্যার অভিযোগের বিষয়টিকে ভিন্ন খাতে নিতে নানা ধরনের অপচেষ্টা চলছে। ঘটনাটিকে আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কাফরুল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। ওসির বক্তব্য ময়নাতদন্তকে প্রভাবিত করবে বলেও সেলিম অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, আফসানা যদি আত্মহত্যা করে থাকেন, তাহলে কার প্ররোচনায় এটা হলো—তাও তদন্ত করা উচিত। তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের দাবি জানান।
সমাবেশে তেজগাঁও কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক অন্তু চন্দ্র নাথ বলেন, তাদের কলেজ শাখা ছাত্র ইউনিয়নের কয়েকজন নেতা-কর্মী আজ বিক্ষোভ সমাবেশে যোগ দিতে কলেজ থেকে বের হন। কলেজ ফটকে পৌঁছালে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা তাঁদের ওপর হামলা করেন। এতে তিনিসহ কয়েকজন আহত হন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে তাঁরা সমাবেশে যোগ দিয়েছেন।
সমাবেশে আফসানার মামা তৌফিক ইলাহী বলেন, আফসানার মা সৈয়দা ইয়াসমিনের মুঠোফোনে গত শনিবার রাত নয়টার দিকে অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে। তখন দুই ব্যক্তি জানান যে আফসানা আত্মহত্যা করেছেন। তাঁর লাশ ধানমন্ডিস্থ বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আছে। তাঁরা তখন ওই হাসপাতালে যান। কিন্তু সেখানে আফসানার লাশ পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে আরেক অপরিচিত ব্যক্তি জানান যে আফসানার লাশ মিরপুরের আল-হেলাল হাসপাতালে আছে। তখন তাঁরা সেখানে যান। হাসপাতাল থেকে জানানো হয়, লাশটি কাফরুল থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। সেখানে গেলে পুলিশ জানায়, লাশ ঢাকা মেডিকেল কলেজের মর্গে পাঠানো হয়েছে। রাত তিনটার দিকে তাঁরা মর্গে গিয়ে আফসানার লাশ শনাক্ত করেন। ময়নাতদন্ত শেষে লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে দাফন করা হয়।
তৌফিক ইলাহী বলেন, ছাত্রলীগ নেতা রবিনের সঙ্গে আফসানার বন্ধুত্ব ছিল। কিছুদিন আগে এ বন্ধুত্বে ফাটল ধরে। এর জেরে রবিনসহ আরও কয়েকজন মিলে আফসানাকে হত্যা করে আত্মহত্যা বলে চালানোর চেষ্টা করছেন বলে তিনি দাবি করেন। পুলিশ এ ঘটনায় শুধু একটি অপমৃত্যু মামলা করায় তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সমাবেশ শেষে আগামী শনিবার সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করেন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি লাকী আক্তার। আগামী ২২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অভিমুখে পদযাত্রারও ঘোষণাও দেন তিনি।
কাফরুল থানার ওসি সিকদার মোহাম্মদ শামীম হোসেন বলেন, মিরপুরের আল হেলাল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গত শনিবার রাতে থানায় জানায় যে দুই ব্যক্তি এক মেয়ের লাশ রেখে পালিয়ে গেছেন। ওই লাশটি প্রথমে অজ্ঞাতনামা হিসেবে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরে নাম-ঠিকানা পাওয়া যায়। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে। কী ধরনের মামলা হয়েছে, এ পশ্রের জবাবে তিনি বলেন,এ ব্যাপারে তদন্ত চলছে।
এই অভিযোগের বিষয়ে জানতে ছাত্রলীগ নেতা হাবিবুর রহমান রবিনের মুঠোফোন নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।
এদিকে, আফসানাকে হত্যার অভিযোগ এনে আজ দুপুরে ঠাকুরগাঁওয়ের সদর উপজেলার রুহিয়া চৌরাস্তায় প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করা হয়েছে। ঘণ্টাব্যাপী এ মানববন্ধন কর্মসূচিতে এলাকার বিভিন্ন বিদ্যালয়, কলেজের শিক্ষার্থীসহ নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ অংশ নেন।
সূত্র: প্রথম আলো পত্রিকা