অনুভূতিহীন রোবট সন্তানরাই জঙ্গিবাদে পা দিচ্ছে - Women Words

অনুভূতিহীন রোবট সন্তানরাই জঙ্গিবাদে পা দিচ্ছে

রাহিমা বেগম
একটা দামী মোবাইল, একটা ট্যাব, ল্যাপটপ, লাখ টাকা খরচ করে সাউন্ড সিস্টেম। ছেলেমেয়ের শোবার ঘরে লাখ লাখ টাকা খরচ করে বাড়তি ডেকোরেশন করে দিন অসুবিধা নেই। তবে সুযোগ থাকলে কিনে দিন গরু, ছাগল বা গৃহপালিত অন্য কোন পশু। প্রাণীকে যথাসময়ে খাবার দেওয়া, পরিস্কার পরিচ্ছন্ন রাখা, নিয়ম করে গোসল করাতে বলুন। তাহলে প্রাণীটির সাথে একটা ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠবে আপনার সন্তানের। সেই সাথে মানবিকতার ভিতরে শক্তিশালী হয়ে উঠবে মানবিক সত্ত্বাটাও।

প্রাণীগুলোকে ভালোবাসতে গিয়ে, শৃংঙ্খলা শেখাতে গিয়ে আপনার ছেলেমেয়ের মধ্যে আবেগ-ভালোবাসা জন্মাবে। তারা সুশৃংঙ্খল হয়ে উঠবে, তাদের অনুভূতিগুলো গাঢ় হবে। সম্পর্কটা এমন হবে সামান্য কষ্টে প্রাণীটি যতটুকু ব্যথা পাবে তার চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট পাবে তাকে দেখাশোনার দায়িত্বে থাকা আপনার ছেলেমেয়ে। প্রাণীগুলোর চোখে পানি আসলে আপনার সন্তানদের চোখেও পানি আসবে। প্রাণীগুলো উচ্ছৃঙ্খল আচরণ করলে তার ফলাফল দেখে আপনার সন্তানরা আঁতকে উঠবে। প্রাণীগুলোর উচ্ছৃঙ্খলতা অন্য প্রাণী বা বাসার লোকজনের কতটুকু কষ্টের কারণ হলো সে সম্পর্কে ধারণা পাবে। প্রাণীদের আদর ভালবাসা আর নিজস্ব বুদ্ধিমত্তা দিয়ে শৃংঙ্খলে নিয়ে আসার চেষ্টা করবে তারা। ফলে তারা যন্ত্র প্রযুক্তির বেড়াজালে বেড়ে উঠলেও অনুভূতিহীন রোবট হয়ে উঠবে না। সবার প্রতি ভালবাসা থাকবে। অন্যের কষ্টে নিজে কষ্ট পাবে, মানুষের রক্ত দেখে উল্লাশ করবেনা। মানুষ মারা দূরের কথা মানুষের বিপদ দেখলে পাশে দাঁড়াবে। মানুষ মানুষকে ভালবাসবে, সাহায্য করবে, সুখের আনন্দটা ভাগাভাগি করে নেবে এই হবে তাদের আদর্শ।

আমাদের সমাজের উঠতি ধনী পরিবারগুলোর চিত্রটি লক্ষণীয়। সকালে নাস্তার টেবিলে গুডমর্নিং ড্যাড-মম, গুডমর্নিং কিডস। নাস্তার টেবিলে বাবা-মা ও সন্তানদের মধ্যে ম্যানু সিলেকশনের বাইরে আলাপচারিতা তেমন একটা হয় না। শেয়ার করা হয় না মা-বাবা বা পরিবারের অন্য সদস্যদের ছোটখাট সমস্যা, অসুখ-বিসুখ বা কষ্টের কথা। যে কারণে অন্যের প্রতি ভালোবাসা, স্নেহ-মায়া জন্ম নেওয়ার মতো পরিবেশ সন্তানরা পায় না পরিবারগুলোতে।

আজকের তরুণ প্রজন্মের এই অব্যবহৃত অনুভূতিগুলোকেই কাজে লাগায় সন্ত্রাসী ও জঙ্গিগুষ্টিরা। তারা সহজেই এদের মন, মগজ দুইটাই ধোলাই করতে পারে। যে কারণে এত রক্ত দেখেও তাদের মধ্যে কোন প্রতিক্রিয়া তৈরি হয় না বরং তারা এর চেয়েও আরো বেশী হিংস্র উপায়ে মানুষ মারার পরিকল্পনা তৈরি করে। যেমনটা তারা কম্পিউটার গেমসে দেখে দেখে অভ্যস্ত। মানুষের রক্ত ঝরিয়ে তারা উল্লাসে মাতে, স্বপ্নে বিভোর হয়ে নিজেদের জীবন উৎসর্গ করে ফেলে। একটা দীর্ঘ সময়ের আবেগহীন মানুষ তৈরির সংস্কৃতিই আজকের বাংলাদেশে জঙ্গি, সন্ত্রাসী হয়ে উঠার পরিবেশ তৈরির জন্য দায়ি।

তাই অভিভাবকদের প্রতি অনুরোধ আপনার সন্তানকে ভালোবাসতে শিখুন, সন্তানদের ভালোবাসতে শেখান। পরিবারের সদস্যের পাশাপাশি আত্মীয়স্বজন পাড়া-প্রতিবেশী, সমাজে মানুষের সাথে ভালোবাসার সম্পর্ক, সম্মানের সম্পর্ক তৈরির পরিবেশ তৈরি করে দিন। তাদের আবেগ অনুভূতিগুলোকে জাগ্রত করুন। তবেই তো আমরা একটা সুন্দর প্রজন্ম উপহার পাব, যারা জঙ্গিদের ফাঁদে সহজে পা দেবে না। মানুষ হত্যার মাধ্যমে বেহেস্তের রাস্তা খুঁজবে না। তাহলেই আমাদের সমাজের অস্থিরতা কেটে যাবে। আমরা একটা শান্তির বাংলাদেশ উপহার পাব।