গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছেন মডেল সাবিরা হোসাইন। আজ মঙ্গলবার (২৪ মে) ভোর ৫টা নাগাদ মিরপুরের রূপনগরে সাবলেটে বাসা থেকে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় সাবিরার মরদেহ উদ্ধার করা হয়। ওই বাসায় সাবিরা একাই থাকতেন। ফেসবুকে নিজের আত্মহত্যার বিষয়ে ইঙ্গিত দিচ্ছিলেন তিনি। আত্মহত্যার আগে ফেসবুক দেওয়া স্ট্যাটাস থেকে ধারণা করা হচ্ছে, প্রেমঘটিত কারণে তিনি আত্মহত্যা করেছেন।সাবিরা হোসাইন বিভিন্ন ফ্যাশন হাউজের মডেলিং এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন একই সাথে মোহনা টেলিভিশন এবং পরবর্তীতে গান বাংলা টেলিভিশনের মার্কেটিং এক্সিকিউটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।
এ ঘটনায় প্রেমিক নির্ঝরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। আত্মহত্যার প্ররোচনার অভিযোগ এনে নির্ঝর ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে রূপনগর থানায় মামলা দায়ের করেন সাবিরার মা দিলশাদ কাদির। এরপরই তাকে গ্রেফতার করা হয়।
মঙ্গলবার সকালে আত্মহত্যার আগে প্রেমিক নির্ঝর সিনহা রওনক ও তার ছোট ভাই প্রত্যয়কে দায়ী করে একটি ভিডিও আপলোড করে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেন সাবিরা।
আত্মহত্যার আগে নির্ঝর সিনহা রওনক নামের একজনের উদ্দেশে সাবিরা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, ‘আমি তোমাকে দোষ দিচ্ছি না। এটা তোমার ছোট ভাইকে বলছি। সে আমাকে যা ইচ্ছে বলেছে। আর বেস্ট পার্ট হলো, সে আমাকে বাসা থেকে বের করে দিয়েছে। আর আমার প্রশ্ন হলো, তোমার কি একটুও ফিল হয়নি?’
সাবিরা আরও লেখেন, ‘আমাকে ব্যবহার করবে, সেক্স করবে আর আমি সরে যাব, এটা তো হতে পারে না। বিয়ের কথা বললে তোমার পরিবার অসুস্থ হয়ে যায়। আর সেক্সের কথা বললে সব ঠিক হয়ে যায়। ভালো আমি আত্মহত্যার চেষ্টা করছি।’
নির্ঝরকে ট্যাগ করে সবশেষে তিনি লেখেন, ‘আমার মৃত্যুর জন্য সে দায়ী। যদি আমি মারা যাই, তাহলে এর দায় তার।’
আত্মহত্যার আগে সাবিরা তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস ও ভিডিও পোস্ট করেন। প্রকাশিত ভিডিওতে দেখা যায়, ‘বিছানায় শুয়ে একটি ছুরি হাতে নিয়ে নিজের পেট ও গলা কেটে আত্মহত্যার চেষ্টা করছেন সাবিরা। তাকে মানসিকভাবে অনেক অস্থির বলে মনে হচ্ছিল। শুরুতে বলতে শোনা যায় আমি কিচ্ছু করতে পারব না। তারপর হাতে একটি ছুরি নিয়ে বারবার পেটে ও গলায় চাপ দেওয়ার চেষ্টা করেন কিন্তু কিছু করতে পারেন না। বারবার বলতে শোনা যায়, কাটেও না। আমি ব্যর্থ। ওকে নেক্সট অ্যাটেম্পট নেব।’
এ থেকে ধারণা করা হচ্ছে, বেশ কয়েক দিন মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিলেন সাবিরা। পারিবারিক ও প্রেমঘটিত কারণে সাবিরা আত্মহত্যা করেছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সাবিরার মামা রূপনগর থানায় বসে জানান, মডেল সাবিরা ব্রোকেন ফ্যামিলির মেয়ে ছিল। মাত্র সাড়ে তিন বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের বিচ্ছদ হয়। বাবা দুবাই প্রবাসী। ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়লেও তিনি লেখাপড়া শেষ করতে পারেননি। রাজধানীর শেখেরটেকের বাড়িতে তিনি মায়ের সঙ্গে থাকতেন। প্রথম কয়েকবছর তার বাবা মনির হোসাইন মেয়ের ভরণ-পোষণের টাকা দিলেও পরে বন্ধ করে দেন। সাবিরার মডেলিং নিয়ে তাদের পরিবারের মধ্যে অসন্তোষ ছিল। পাঁচ-ছয় মাস আগে এ নিয়ে তাদের পরিবারের মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর তিনি রওনকের সঙ্গে গিয়ে স্বামী-স্ত্রী পরিচয় দিয়ে রূপনগরের ১২ নম্বর সড়কের ৫ নম্বর বাসা ভাড়া নেন। বাড়ির মালিক আনোয়ার হোসেন পুলিশকে এমনটিই জানিয়েছেন। রওনক ওই বাসায় যাওয়া আসা করতেন।
মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শহিদ আলম বলেন, খবর পেয়ে সোয়া সকাল ৭টার দিকে ওই বাড়িতে এসআই আলমগীর কবিরের নেতৃত্বে পুলিশ ফোর্স পাঠানো হয়। সেখান থেকে পুলিশ তার লাশ উদ্ধার করে ময়না তদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ মর্গে পাঠায়। ময়না তদন্ত শেষে সাবিরার লাশ মর্গের হিমাগারে রাখা হয়েছে। তার বাবা মনির হোসেন দুবাই প্রবাসী। তিনি দেশে ফেরার পর সাবিরার লাশ হস্তান্তর করা হবে। ভিডিওতে যে ছুরিটি সাবিরার হাতে দেখা যায় সেই ছুরিটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ।